১৫০ মোগলটুলী। চল্লিশের দশকে এটা ছিল এক ঐতিহাসিক মিলনকেন্দ্র। বিরোধী রাজনীতির অন্যতম আলোচনাকেন্দ্র ছিল এই ১৫০ মোগলটুলী। সাতচল্লিশে দেশ ভাগ হলো। তখন কলকাতা থেকে বঙ্গবন্ধু, জহিরুদ্দিন, নঈমুদ্দিনের মতো ছাত্রনেতারা পূর্ব বাংলায় আসেন। এখানে তাঁরা ১৫০ মোগলটুলীতে আলোচনা করতেন। সে সময়ের প্রগতিশীল ছাত্র, যুবক ও রাজনৈতিক কর্মীরা্ এখান আসতেন। তাঁরা বাংলা ভাষাসহ পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক দিকগুলো জাতির সামনে তুলে ধরেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পরিকল্পনা এখান থেকেই নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু, শওকত আলী, কামরুদ্দীন আহমদসহ আরও অনেকে ছিলেন এ কেন্দ্রের প্রাণশক্তি।
তমদ্দুন মজলিস নামে একটি সংগঠন আছে। ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক আবুল কাশেম এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। এটি ছিল একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক সংগঠন। এর লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের নবজাগরণ। কিন্তু পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলায় শোষণের রাজনীতি শুরু করে। তাই তমদ্দুন মজলিস মুসলিম লীগ থেকে আলাদা হয়ে যায়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সে সময় মুসলিম ছাত্রলীগের নেতা। তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগ এক হয়। তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার তীব্র প্রতিবাদ করে একটি সর্বদলীয় সভা করে। এ সভা থেকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। কামরুদ্দীন আহমদ, শামসুল হকসহ অনেকে এ সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেন। এ পরিষদ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ করার উদ্যোগ নেয়। তাই ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষার দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হয়। এদিকে জেলা ও মহকুমায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের শাখা করা হয়েছে। ভাষার দাবি নিয়ে সবাই বিভিন্ন জেলায় গেলেন।
বঙ্গবন্ধু গেলেন ফরিদপুর, যশোর, দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে। তিনি এসব জেলায় সভা করেন। বক্তৃতায় বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। যেকোনো মূল্যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেন। এ লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার কথা বলেন। তিনি খুলনার দৌলতপুরে একটি কলেজে যান। সেখানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বক্তৃতা দেবেন। কিন্তু মুসলিম লীগের সমর্থক ছাত্ররা জড়ো হন। তাঁরা সভা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেন। খুব গোলমাল হয়। অনেকে রক্তাক্ত হন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সভা বানচাল করতে পারেননি। আবদুস সবুর খান, বরিশালের মহিউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কলেজ প্রাঙ্গণে সভা করেন। তারপর ঢাকায় ফিরে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন। ছাত্ররা আন্দোলনে অংশ নেন। এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগ গুণ্ডা নামিয়ে দিল। তারা অপপ্রচার চালাল যে এটা পাকিস্তান ধ্বংসের আন্দোলন। পুরান ঢাকায় ছাত্রদের সঙ্গে মারপিট হলো।