করাচির সংবিধান সভায় আলোচনা হয়। সেখানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়। এর প্রতিবাদে তমদ্দুন মজলিসের নেতা অধ্যাপক আবুল কাশেম, বঙ্গবন্ধু, ছাত্রলীগসহ সবাই এক আলোচনায় বসেন। আলোচনায় ১১ মার্চ হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত হয়। শুধু সিদ্ধান্তই নয়, যেকোনো মূল্যে এ হরতাল সফল করতে হবে। এ জন্য ১ মার্চ প্রচারমাধ্যমে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেদিন এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম, বঙ্গবন্ধু, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নঈমুদ্দিন আহমদ ও আবদুর রহমান চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
এই উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভাষা আন্দোলনের প্রচার শেষে ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আসেন। এদিন রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি আলোচনা সভা বসে। ইতিমধ্যে ভাষা আন্দোলন নিয়ে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। অনেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কী করবে। কেউ কেউ সরকারের সঙ্গে আপস করতে চাইছে। বঙ্গবন্ধু তখন চিৎকার করে উঠলেন। তিনি বললেন, ‘সরকার কি আপসের প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমুদ্দীন সরকার কি বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয়ে থাকে, তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে, সেক্রেটারিয়েটের সামনে পিকেটিং হবে। অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, শওকত আলী, শামসুল হক—সবাই বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন দিলেন। তাঁর এ মনোভাবে সেদিন কেউ আপস করার সাহস পাননি।
এক সাক্ষাতে অলি আহাদ বলেন, ‘সেদিন সন্ধ্যায় যদি মুজিব ভাই ঢাকায় না পৌঁছতেন, তাহলে ১১ মার্চের হরতাল, পিকেটিং কিছুই হতো না।’ ১১ মার্চের হরতাল সফল করার জন্য যা করা দরকার, বঙ্গবন্ধু সবই করেন। সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। হরতালের পক্ষে পোস্টার লাগানো হয়। ১১ মার্চ ভোর থেকে শত শত ছাত্রকর্মী ইডেন বিল্ডিং, জেনারেল পোস্ট অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় পিকেটিং শুরু করেন। পোস্ট অফিসের সামনে ছাত্ররা ভীষণভাবে মার খায়। একদল মার খেয়ে চলে যায়, আরেক দল আসে। এভাবে অনেকক্ষণ চলে। শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াদুদসহ অনেকে গুরুতর আহত হন। বঙ্গবন্ধু কর্মীদের নিয়ে ইডেন বিল্ডিংয়ের দিকে যান।
সেখানে দেখেন, শামসুল হককে পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের জন্য সিটি এসপি জিপ নিয়ে তাড়া করছেন। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। পুলিশের গাড়িতে ওঠার পর দেখেন, শামসুল হক, অলি আহাদকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বহু ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুসহ প্রায় ৭৫ জন ছাত্রকে পাঠানো হলো জেলে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় ভাষার দাবিতে প্রথম সফল হরতাল পালিত হয়।