‘আমার আছে জল’ একটি ঘন আবেগে বোনা গল্প। যা শুরু হয় নান্দনিক পারিবারিক দৃশ্য দিয়ে, কিন্তু ছড়িয়ে যায় মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে এবং শেষ হয় অনিশ্চয়তায়
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘আমার আছে জল’ কেবল একটি প্রেমের গল্প নয়, বরং এটি গ্রামীণ জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক ও মানবিক আবেগের সূক্ষ্ম মেলবন্ধন। উপন্যাস থেকে নির্মিত হলেও চলচ্চিত্রের ভাষা ও ছন্দে রয়েছে সিনেমাটিক সৌন্দর্যের আলাদা আবেদন।
এতে অভিনয় করেন ফেরদৌস, বিদ্যা সিনহা মিম, জাহিদ হাসান, মেহের আফরোজ শাওন, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, সালেহ আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে।
কাহিনির শুরুতে এক শান্ত ও মৃদু পরিবেশ। ট্রেন ভ্রমণ ও সোহাগী রেলস্টেশন। সেখান থেকে শুরু করে গল্প একটি পরিবারে নিয়ে যায়। যেখানে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের আইজি, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে নিশাত ও দিলশাদ (বিদ্যা সিনহা মিম), ছোট বোন দিলুর সঙ্গে যায় ফ্যানেরিম কাল্পনিক ভ্রমণে। গল্পের মধ্যেই পরিবেশ ও পরিবারের সম্পর্কের সূক্ষ্মতা দৃশ্যমান। হঠাৎ পরিবর্তন, প্রতিটি চরিত্রের আবেগ ও নৈমিত্তিক সম্পর্ক সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দিলশাদ ভালোবাসায় পড়ে জামিলের (জাহিদ হাসান) প্রতি; যিনি পরিবারে একজন চাকর। তৎক্ষণাৎ এমন সম্পর্ক বাধা দেয় সমাজের নিয়ম ও বয়সের পার্থক্য। অপর দিকে, নিশাতের (মেহের আফরোজ শাওন) প্রতি সাব্বির (ফেরদৌস) মনোযোগী, যিনি একজন প্রবাসফেরত ফটোগ্রাফার। এই প্রেমের পটভূমির মধ্যে জামিল নিশাতের পুরোনো পরিচিত।
নিশাত এক রাতে ছোট বোন দিলুকে তার অতীতের কথা জানায়। যে সময় সে দিলুর বয়সী ছিল। তখন জামিলের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করার ভাবনা ছিল তার। কিন্তু অন্য একজনের (কবির) সঙ্গে বিবাহ হয়ে যায়। তবে সেই ভালোবাসা নিশাত কখনো পরিত্যাগ করতে পারেনি। দিলু এই কথায় ভেঙে পড়ে। তার সমস্ত আশা ও স্বপ্ন মিশে যায়।
পরদিন সকালে জানা যায়, দিলুর মৃতদেহ পুকুরে ভাসছে। নিহত হয়ে যাওয়ার এই দৃশ্যের মধ্য দিয়ে এক ভিন্নধর্মী ট্র্যাজিক মোড় নিয়ে শেষ হয় সিনেমাটি। এই ছবির গভীর আবেগ ও ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়েনে ভরে ওঠা দৃশ্যমালা—শেষ দৃশ্যে হাস্যরস বা উদার উত্তরণ নেই। বরং অনুভূতির ছোট্ট ফাটল থেকে বিশাল শূন্যের দিকে ভেসে যায় দর্শক।
‘আমার আছে জল’ একটি ঘন আবেগে বোনা গল্প। যা শুরু হয় নান্দনিক পারিবারিক দৃশ্য দিয়ে, কিন্তু ছড়িয়ে যায় মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে এবং শেষ হয় অনিশ্চয়তায়—দিলুর মৃত্যু দিয়ে। মানবিক সম্পর্ক, বাসনা, অতীতের প্রভাব, এক তরুণ মনের ভেঙে পড়া—এসব মৌলিক উপাদানই ছবির কেন্দ্রবিন্দু। দৃশ্যাদি, চরিত্র-চিত্রণ, আবহসজ্জা—প্রতিটি অংশ গল্পের মর্মকে ছুঁয়ে যায়।
উপদেষ্টা, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা