উৎসব: সম্পর্কের রেখাচিত্রে বিষাদের ছায়া

জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম, আফসানা মিমিসহ একঝাঁক প্রিয় মুখের অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব’ শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি এক দীর্ঘশ্বাস, এক মৃদু দমবন্ধ করা চিৎকার; যা আমাদের আধুনিক সমাজের জটিল মানবিক বাস্তবতাকে ধারণ করেছে। এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোয় প্রাণ দিয়েছেন জাহিদ হাসান, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার, সুনেহরা বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি (যুবক জাহাঙ্গীর), ও সাদিয়া আয়মান (যুবক তানিম)। সাদিয়া আয়মান ও সৌম্য জ্যোতির অভিনয় নতুন প্রজন্মের তরুণ প্রতিভার এক অনন্য প্রদর্শনী। তাঁরা রূপকথার ভুবনে বাস্তবের আর্দ্রতা বুনে দিয়েছেন।

ছবির গল্প বলার ধরনে মগ্নতা আছে, যন্ত্রণার নিপীড়ন আছে, আর কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা, যেখানে প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি দৃশ্য গভীর এক নিশ্বাসের মতো প্রবাহিত হয়। আধুনিক জীবনের অনিশ্চয়তা ও মানুষের অন্তর্মুখী সংগ্রামের মধ্যে ‘উৎসব’ যেন একান্তিক কোলাহল, যেখানে ভালোবাসা ও বিচ্ছেদ, আশা ও অবিশ্বাসের সুর নাচে। জাহিদ হাসান ও জয়া আহসানের পারস্পরিক অভিনয় একে অপরের আবেগকে মূর্ত রূপ দিয়েছে। চঞ্চল চৌধুরী ও অপি করিমের উপস্থিতি ছবির সামাজিক বাস্তবতাকে আরও দৃঢ় করেছে। তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার ও সুনেহরা বিনতে কামালের দক্ষ অভিনয় ছবি ও সমাজের সংবেদনশীল সম্পর্কের সূক্ষ্ম সেতু নির্মাণ করেছে।

আরও পড়ুন

সাদিয়া আয়মান ও সৌম্য জ্যোতির অভিনয়শৈলী বর্ণনা করার ভাষা কম পড়ে। কারণ, তাঁরা ছবির আবেগীয় স্পন্দনকে বাস্তবতার নিকটে নিয়ে গেছেন। তরুণ এই দুই শিল্পীর মধ্যে এমন এক গভীরতা ও আন্তরিকতা আছে, যা আজকের বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন স্বর রচনা করছে।

ছবির দৃশ্যায়ন আর সংগীতের সঙ্গে একাত্মতা দর্শককে সম্পূর্ণ ভ্রমণে নিয়ে যায়। পরিচালকের সূক্ষ্ম দিকনির্দেশনা, ক্যামেরার নিখুঁত চোখ এবং আবহ সংগীতের সংগতি ছবির আবেগকে চরম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। শহুরে কোলাহল থেকে চরিত্রের অন্তর্মুখী নিস্তব্ধতায় প্রবাহিত যাত্রা এক সুরেলা কাব্যের মতো।

‘উৎসব’ সিনেমাটি একটি সামাজিক আয়না, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনের আড়ালে থাকা দুঃখ, মানসিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা ও মানবিক ক্ষতকে নির্ভুলভাবে চিত্রায়িত করেছে। ছবি আমাদের ভাবায়, আমরা কি সত্যিই নিজেদের স্বপ্ন ও অনুভূতিগু উপলব্ধি করি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দর্শক এক গভীর আত্মসমীক্ষার পথে প্রবেশ করে।

সত্যি বলতে ‘উৎসব’ সময়ের এমন এক চলচ্চিত্র, যা বিনোদনের মাত্রা পেরিয়ে আমাদের সমাজ ও হৃদয়ের গভীরে অবতরণ করে। ঈদের আলো–ছায়ায় মুক্তিপ্রাপ্ত হলেও, এর আলো দীর্ঘদিন আমাদের অন্তরজুড়ে জ্বলজ্বল করবে।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা