নিভৃতেই বাংলাদেশকে বইয়ে নিয়ে যাওয়া এক সৈনিক

গত জানুয়ারিতে সিডনি টেস্টে বুমরা–কনস্টাসের কথার লড়াই ভালোভাবেই সামলেছেন শরফুদ্দৌলাছবি: এএফপি

বাংলাদেশ আজন্ম খেলাপাগল জাতি হিসেবেই বিবেচিত। এ দেশের খেলোয়াড়দের ক্রিকেটীয় শক্তিমত্তার চেয়েও দ্বিগুণ শক্তিশালী সমর্থনসত্তা। সমর্থকেরা কখনো হাসে, কখনো কাঁদে, আবার কখনো এক আকাশ পরিমাণ অভিমান নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। দিন শেষে বাংলাদেশের খেলা মানেই সব ভুলে আবার আগের অবস্থানে।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেট তুমুল জনপ্রিয় একটি খেলা। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা যেমন দিনকে দিন বাড়ছে, তেমনি ক্রিকেট ম্যাচ পরিচালনার মতো কঠিন দায়িত্বের সঙ্গেও দেশের সুনাম বাড়ছে। সেই সুনাম নিভৃতে বইয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। ক্রিকেট বিশ্বের এলিট আম্পায়ার প্যানেলে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি।

আরও পড়ুন

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বরিশাল বিভাগ ও সিলেট বিভাগের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক ঘটে শরফুদ্দৌলার। ২০১০ সালে মিরপুরে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হয় তাঁর। এখন পর্যন্ত পুরুষদের ১৮টি টেস্ট (২০২১-২০২৫ পর্যন্ত), ৬৩টি ওয়ানডে ও ৪৪টি টি-টোয়েন্টিতে অনফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি মেয়েদের ১৩টি ওয়ানডে ও ২৮টি টি-টোয়েন্টিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে তাঁকে এলিট তালিকাভুক্ত আম্পায়ার হিসেবে নিয়োগ দেয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি।

শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত এরই মধ্যে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে আইসিসির বড় বড় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে তাঁর নিখুঁত সিদ্ধান্তে খেলায় এতটাই প্রভাব পড়ে যে রিভিউ নিয়েও বেশির ভাগ সময় হতাশায় পড়তে হয়ে বিপক্ষ দলের অধিনায়কদের।

সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি মাঠের পরিস্থিতিও দারুণভাবে সামাল দেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা
ছবি: এক্স

টেস্ট ক্রিকেটে নির্ভুল আম্পায়ারিং সব সময় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে চলমান টেস্ট সিরিজে এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন। দুটিতেই নজর কেড়েছেন তিনি।

ইংল্যান্ড-ভারত টেস্টে আম্পায়ারিং নিয়ে যখন প্রায়ই সমালোচনা শোনা যায়, সেখানে শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত যেন নিঃশব্দে লিখে যাচ্ছেন সাফল্যের গল্প। তাঁর দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস আর নিখুঁত সিদ্ধান্তে মুগ্ধ পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। বিশ্বখ্যাত ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে নিজেই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সৈকতকে। তিনি বলেছেন, ‘এই ম্যাচে আম্পায়ারিং অসাধারণ হয়েছে। ক্রিস গাফানির কাছ থেকে এমন মান আমরা আশা করি, কিন্তু শরফুদ্দৌলা সৈকত ছিলেন সত্যিই দুর্দান্ত।’

আরও পড়ুন

শুধু সঠিক সিদ্ধান্তই নয়, মাঠে শরফুদ্দৌলা সৈকতের আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি, শান্ত উপস্থিতি ও খেলার প্রতি মনোযোগ ফুটিয়ে তুলছে একজন আন্তর্জাতিক মানের আম্পায়ারের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে এত উচ্চপর্যায়ে এমন পারফরম্যান্স দেশের ক্রিকেটের জন্যও বড় গর্বের বিষয়। বড় ম্যাচে তাঁর সিদ্ধান্তগুলো যেমন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, তেমনি আম্পায়ারিংয়ে নির্ভুলতা নজর কেড়েছে ক্রিকেট বিশ্লেষকদেরও।

বর্তমান ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের জোয়ার–ভাটার সময়েও খুবই আস্থা ও নিভৃতে বাংলাদেশকে বইয়ে নিয়ে যাওয়া এক সৈনিক শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত।

সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা