কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কার্যকর উপায়

আত্মবিশ্বাস কেবল কিছু মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। যে কেউ এটি অর্জন করতে পারেনছবি: এআই/বন্ধুসভা

আত্মবিশ্বাস হলো একধরনের দক্ষতা, যা গড়ে তুলতে হয়; একটি মানসিকতা, যা চর্চা করতে হয়; একটি অভ্যাস, যা প্রতিদিন অনুশীলন করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসই আপনাকে নির্ধারণ করে দেবে—আপনি কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান, অন্যরা আপনাকে কীভাবে দেখবে এবং কোন কোন সুযোগ আপনার কাছে আসবে।

আত্মবিশ্বাস কেবল কিছু মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। যে কেউ এটি অর্জন করতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার ১৫টি উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো—

১. প্রস্তুত থাকুন: প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে ওই দিনের কাজ নিয়ে আগেই একটা মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। এতে কাজে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। প্রস্তুতি একধরনের নীরব শক্তি। এটি নিজেকে এবং অন্যকে বুঝিয়ে দেয় যে আপনি প্রস্তুত, দক্ষ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেটা ক্লায়েন্টদের সামনে প্রেজেন্টেশন হোক, টিম মিটিং হোক বা নেতৃত্ব—সময় নিয়ে কাজের পূর্বপ্রস্তুতি নিন।

২. নার্ভাস থাকলেও কথা বলুন: আত্মবিশ্বাস মানে এই নয় যে আপনি কখনো নার্ভাস অনুভব করেন না। এর মানে হলো, নার্ভাস থাকলেও নিজের কণ্ঠ ব্যবহার করতে পিছপা হন না। প্রতিটি মিটিংয়ে কথা বলুন, প্রশ্ন করুন, মতামত দিন। যত বেশি কথা বলার চেষ্টা করবেন, তত আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৩. নিজের সাফল্য ও অর্জনের কথা লিখে রাখুন: একটি ডিজিটাল ফাইল বা নোটবুক তৈরি করুন, যেখানে আপনি আপনার সাফল্য ও অর্জনের কথা লিখে রাখবেন। এর মধ্যে থাকতে পারে সম্পন্ন করা কোনো কাজ, সহকর্মীর প্রশংসা বা ব্যক্তিগত অগ্রগতি। যখনই নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হবে, তখন এই নোটবুক আপনাকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

৪. কাজের ফিডব্যাক নিন: ফিডব্যাক হলো দ্রুত উন্নতির অন্যতম উপায়। যাঁদের আপনি সম্মান ও বিশ্বাস করেন, তাঁদের কাছে যান এবং জিজ্ঞেস করুন আপনি কেমন করছেন এবং কোথায় উন্নতির সুযোগ আছে। ওই ব্যক্তিকে স্পষ্ট করে বলুন যে আপনি শিখতে চান। সৎ ফিডব্যাক আপনাকে আত্মসচেতন করে তুলবে।

৫. অহেতুক দুঃখ প্রকাশ করবেন না: অনেকেই কিছু হলেই বারবার ‘সরি’ বলেন। যেমন—‘সরি আমার দেরি হয়ে গেছে’, ‘সরি বিরক্ত করলাম’ ইত্যাদি। অহেতুক দুঃখ প্রকাশের বদলে কৃতজ্ঞতা বা স্পষ্টতা প্রকাশ করুন। যেমন—‘অপেক্ষার জন্য ধন্যবাদ’। এ কথার ভেতর শক্তি আছে। অহেতুক ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে ছোট করা বন্ধ করলেই আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

আরও পড়ুন

৬. ‘না’ বলতে শিখুন: নির্দিষ্ট কাজের বাইরে অফিস কখনো কখনো অতিরিক্ত কাজ ধরিয়ে দিতে পারে অথবা কোনো ছুটির দিনে বলতে পারে ‘আজ অফিস করুন’। এসব ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে ‘না’ বলুন। কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়ার দরকার নেই। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৭. কাজকে নিজের করে নিন এবং কৃতিত্ব নিন: অনেকে প্রশংসা এড়িয়ে যান বা নিজের অর্জনকে ছোট করে দেখান। কেউ যদি আপনার কাজের প্রশংসা করেন, সেটা গ্রহণ করুন। প্রত্যুত্তরে বলুন, ‘ধন্যবাদ, আমরা যা অর্জন করেছি, তা নিয়ে গর্বিত’, ‘এটি ছিল দারুণ অভিজ্ঞতা’। নিজের কাজের কৃতিত্ব নেওয়া অহংকার নয়, বরং সততা।

৮. আত্মসমালোচনা বন্ধ করুন এবং নিজেকে নতুনভাবে সাজান: কোনো কাজের আগে কখনো কখনো ভেতর থেকে একটি কণ্ঠস্বর বলে ওঠে—‘তুমি এখনো প্রস্তুত নও’, ‘তুমি পিছিয়ে পড়ছ’, ‘তুমি ব্যর্থ হবে’ ইত্যাদি। এ কথাগুলো সত্য নয়। যখনই এমন কিছু মনে হবে, তখন মনে মনে বলুন ‘আমি প্রতিদিন শিখছি এবং বেড়ে উঠছি’।

৯. আত্মবিশ্বাসী ও অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের সঙ্গে সময় কাটান: আত্মবিশ্বাস একা একা তৈরি হয় না। এমন মানুষের সঙ্গে সময় কাটান, যাঁরা আপনাকে সৎ উপদেশ দেবে, আপনি যেমন তেমনটাই বলবে এবং আপনার ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে উৎসাহ দেবে। আর যাঁরা আপনার মঙ্গল চান না, তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দিন।

১০. নিজের জায়গা বুঝে নিন: কথাটি আক্ষরিক বা প্রতীকী অর্থে হলেও এর মূল আহ্বান হলো—কর্মক্ষেত্রে আপনার যে অবস্থান, তা বুঝে নিন। যেকোনো মিটিংয়ে সামনের আসনগুলোয় বসবেন, আলোচনায় যোগ দেওয়ার জন্য কারও অনুমতির অপেক্ষা করবেন না। এমনভাবে ওই চেয়ারে বসুন, যেন মনে হয় আপনি সেখানে বসার আসলেই যোগ্য। দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়ান, চোখে চোখ রাখুন এবং নিজের উপস্থিতি বোঝান।

আরও পড়ুন

১১. শরীরে আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলুন: চাপের মুহূর্তে যেন শরীর না কাঁপে। এমন মুহূর্তে সোজা হয়ে দাঁড়ান, কাঁধ সোজা করুন, হাতকে শিথিল রাখুন। এর সঙ্গে ধীর, সচেতন শ্বাস নিন। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে আপনি নিরাপদ ও স্থির।

১২. নিজের চাহিদা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করুন: যদি আরও সহায়তা, সময়, পরামর্শ বা স্পষ্টতা প্রয়োজন হয়—সরাসরি বলুন। নিজের চাহিদা জানানো কোনো চাপ নয়, বরং এটি আত্মসম্মানের প্রকাশ। কোন বিষয়গুলো আপনার কাজকে আরও কার্যকর বা টেকসই করবে, তা নির্ধারণ করুন। তারপর সঠিক ব্যক্তির কাছে স্পষ্টতা ও সম্মানের সঙ্গে অনুরোধ করুন।

১৩. ভালো সুযোগ এলে তা গ্রহণ করুন: আত্মবিশ্বাস আসে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। ভালো কোনো কাজের সুযোগ এলে তা গ্রহণ করুন। এর জন্য শতভাগ প্রস্তুত থাকা জরুরি নয়। বিশ্বাস রাখুন, আপনি এই কাজটা করতে পারবেন।

১৪. ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরুন: পোশাক অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। এমন পোশাক বেছে নিন, যা আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তাহলে নিজের মধ্যে স্থিরতা আসবে এবং আত্মবিশ্বাসী দেখাবে। পোশাক অন্যকে মুগ্ধ করার জন্য নয়; বরং নিজের জন্য।

১৫. আপনি কতটা মূল্যবান, তা প্রতিদিন স্মরণ করুন: আত্মবিশ্বাস সব সময় কাজ থেকে আসে না, বরং নিজের ভেতর থেকে আসে। নিজেকে প্রতিদিন স্মরণ করান যে ব্যক্তি আপনি আপনার পদবি ও দায়িত্বের থেকেও বেশি মূল্যবান। প্রতিদিন এই সত্যকে নিজের ভেতরে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করুন।

আত্মবিশ্বাস মানে নিখুঁত বা নির্ভীক হওয়া নয়। এর মানে হলো নিজের উপস্থিতি, সততা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় দৈনন্দিন ছোট ছোট সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।

সূত্র: সাইকোলজি টুডে