চাকরি পরামর্শ
ইন্টারভিউর আগে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন
আজকের প্রতিযোগিতামূলক যুগে চাকরি পাওয়া সহজ নয়। একজন প্রার্থীকে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা দিয়েই নয়, তাঁর আত্মপ্রকাশ, যোগাযোগ দক্ষতা এবং প্রস্তুতিও নির্ধারণ করে তিনি কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পাবেন কি না। অনেক সময় দেখা যায়, যোগ্য প্রার্থীরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে আত্মবিশ্বাস হারান বা সামান্য ভুলে সুযোগ হারিয়ে ফেলেন। তাই ইন্টারভিউর আগে, সময়কালে এবং পরে কিছু মৌলিক বিষয় জানা থাকলে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। প্রথম পর্বে থাকছে ইন্টারভিউর আগের প্রস্তুতি বিষয়ে পরামর্শ।
ইন্টারভিউর আগের সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যত ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়, ইন্টারভিউয়ে ততটাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে উপস্থিত হওয়া যায়। একটি ভালো প্রস্তুতি মানে আগের দিন পর্যাপ্ত ঘুম, ইন্টারভিউ লোকেশন ও পরিবহনব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা, সময়মতো উপস্থিত হওয়া—এ সবকিছুর ওপরই নির্ভর করে।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন
যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন, সেই কোম্পানির ইতিহাস, পণ্য বা সেবা, মিশন ও ভিশন, এমনকি সাম্প্রতিক খবর—সবকিছু সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। আজকাল ইন্টারভিউয়ে প্রার্থীদের প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?’
যদি আপনি কোম্পানির নাম ছাড়া আর কিছু না জানেন, তাহলে তা ইন্টারভিউয়ারের কাছে আপনার অনাগ্রহ ও প্রস্তুতির অভাব প্রকাশ করে। অথচ কয়েক মিনিটের গবেষণাই আপনাকে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে আলাদা করে তুলতে পারে। কোম্পানির ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজ বা সাম্প্রতিক নিউজ আর্টিকেল পড়ে তাদের কার্যক্রম ও অর্জন সম্পর্কে জানতে পারেন।
বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে তাদের জনপ্রিয় কোনো পণ্য বা ব্র্যান্ড সম্পর্কেও ধারণা নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন অনেকে ‘অলিম্পিক’ কোম্পানির নাম না জানলেও ‘এনার্জি প্লাস’ বিস্কুট সম্পর্কে জানেন। এভাবে কোম্পানি সম্পর্কে নির্দিষ্ট ও বাস্তব ধারণা রাখা ইন্টারভিউয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী করবে এবং এমনভাবে উপস্থাপন করবে, যা আপনাকে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে দেবে।
যে পজিশনের জন্য আবেদন করেছেন, তার বিস্তারিত জানুন
ইন্টারভিউর আগে আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, সেই পদের দায়িত্ব, প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। এটি আপনাকে প্রশ্নের উত্তর আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দিতে সাহায্য করবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি ‘সেলস এক্সিকিউটিভ’ পদের জন্য আবেদন করে থাকেন, তবে জানা উচিত—সেই কোম্পানির বিক্রয়পদ্ধতি কী, টার্গেট মার্কেট কারা এবং তারা কোন টুলস বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে। পাশাপাশি টার্গেটেড কাস্টমার ও তাদের আচরণ সম্পর্কেও ধারণা নিলে বাস্তব উদাহরণসহ উত্তর দেওয়া সহজ হবে।
সাধারণ প্রশ্নের প্রস্তুতি নিন
ইন্টারভিউয়ে প্রায় সব সময় কিছু কমন প্রশ্ন থাকে। যেমন—
• নিজের সম্পর্কে বলুন।
• কেন আপনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে চান?
• আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?
• আপনার শক্তিমত্তা এবং দুর্বলতার জায়গা কোনগুলো?
• আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
• কেন আমরা আপনাকে নেব?
• আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বলুন।
• আপনার ক্যারিয়ারে লক্ষ্য কী?
• কীভাবে কাজের চাপ সামাল দেন?
• আপনাকে কোন ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে?
এসব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকে ভাবুন। উত্তরগুলো যেন বাস্তবসম্মত, সংক্ষিপ্ত ও আত্মবিশ্বাসপূর্ণ হয়। Behavioral প্রশ্নের ক্ষেত্রে STAR Method (Situation, Task, Action, Result) অনুসরণ করলে উত্তর আরও প্রভাবশালী হয়।
সিভি বা রেজুমে হালনাগাদ করুন
সর্বশেষ অভিজ্ঞতা, প্রজেক্ট বা প্রশিক্ষণ যুক্ত করে রেজুমেটি হালনাগাদ করুন। শুধু তথ্য নয়, বরং প্রাসঙ্গিক অর্জনগুলোও হাইলাইট করুন। উদাহরণস্বরূপ, ‘Handled a team of 5 people.’ বলার পরিবর্তে লিখুন ‘Successfully led a 5-member sales team to achieve 120% of quarterly target.’ এতে আপনার কাজের ফলাফল স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। এ ছাড়া সিভিতে সাম্প্রতিক ও পেশাদার মানের ছবি ব্যবহার করুন, যা আপনাকে আরও প্রফেশনালভাবে উপস্থাপন করবে।
পোশাকের প্রতি যত্ন নিন
পোশাকই প্রথম ইমপ্রেশন তৈরি করে। অফিস করপোরেট হলে ফরমাল শার্ট ও প্যান্ট, আর নারী প্রার্থীদের জন্য সিম্পল ও প্রফেশনাল ড্রেসই সবচেয়ে উপযুক্ত। সেলফ-গ্রুমিংয়ের প্রতি মনোযোগ দিন—পরিষ্কার জুতা, সুন্দর হেয়ারস্টাইল এবং সুবাসিত উপস্থিতি আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলবে। তবে কিছু নির্দিষ্ট পজিশনের ক্ষেত্রে পোশাকের ধরন ভিন্ন হতে পারে। যেমন নিউজ প্রেজেন্টার বা টিভি অ্যাংকর পদের জন্য নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে শাড়ি পরা একটি জনপ্রিয় পছন্দ, যা পেশাদারির পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়। মূল বিষয় হলো আপনার পোশাক যেন কাজের ধরন ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
মক ইন্টারভিউ দিন
বন্ধু বা মেন্টরের সঙ্গে মক ইন্টারভিউ চর্চা করুন। এতে বুঝতে পারবেন কোথায় আপনি নার্ভাস হয়ে পড়েন বা কোন জায়গায় আরও উন্নতি প্রয়োজন। আয়নার সামনে নিজের মুখভঙ্গি ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পর্যবেক্ষণ করুন—এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক।
বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলর মক ইন্টারভিউ আয়োজন করে থাকেন। এসব মক ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করলে বাস্তব ইন্টারভিউ বোর্ডের মতো অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়, যা পরবর্তী ইন্টারভিউয়ে আপনাকে আরও প্রস্তুত ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখুন
ইন্টারভিউয়ে প্রিন্টেড সিভি, সার্টিফিকেট, রেফারেন্স এবং পোর্টফোলিও সঙ্গে রাখুন। অনেক সময় ইন্টারভিউয়ার এগুলো চাওয়ার আগেই দেখে নিতে পারেন—তখন আপনার প্রস্তুতি আপনার পেশাদারত্বকে প্রকাশ করে।
তবে প্রাথমিক ইন্টারভিউর সময় সাধারণত সিভি ছাড়া অন্য কিছু চাওয়া হয় না; তারপরও এগুলো সঙ্গে রাখা ভালো। এতে প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে দেখাতে পারবেন, যা আপনার প্রস্তুতি ও সচেতনতার প্রমাণ হিসেবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
লেখক: প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, বিক্রয় ডটকম