চাকরিক্ষেত্রে ফ্রেশারদের অভিজ্ঞতা অর্জনে করণীয়
বাংলাদেশে চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে গেলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের একটি হলো অভিজ্ঞতার প্রশ্ন। চাকরিদাতারা প্রায়ই ‘প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা’ চেয়ে থাকেন। অথচ সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা একজন শিক্ষার্থীর জন্য পূর্ণাঙ্গ চাকরির অভিজ্ঞতা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাহলে শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন? আসলে, শিক্ষার্থী জীবনের ভেতরেই অনেকগুলো কাজ করার সুযোগ থাকে, যেগুলো ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে মূল্যবান অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরা হয়।
কেন অভিজ্ঞতা এত গুরুত্বপূর্ণ
বাংলাদেশে চাকরিদাতারা সাধারণত নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখতে চান—
• কাজের চাপ সামলানোর মানসিক প্রস্তুতি
• টিমওয়ার্ক ও যোগাযোগ দক্ষতা
• প্রযুক্তি ও সফটওয়্যারের ব্যবহারিক জ্ঞান
• সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা
• দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতা
এসবই মূলত অভিজ্ঞতার ভেতরে পড়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়কে কাজে লাগাতে পারলে গ্র্যাজুয়েশনের পর অভিজ্ঞতার ঘাটতি অনেকটা পূরণ করা যায়।
শিক্ষার্থী থাকাকালীন যেসব দক্ষতা অর্জন জরুরি
১. যোগাযোগ দক্ষতা: বাংলাদেশের চাকরি বাজারে ইংরেজি ও বাংলায় সাবলীল যোগাযোগের পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন দক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয়—
• ডিবেট, পাবলিক স্পিকিং ক্লাব বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ক্লাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা।
• নিয়মিত লেখালিখি, ব্লগিং বা রিপোর্ট লেখার অভ্যাস করা।
২. প্রযুক্তি ও ডিজিটাল স্কিল: আজকের দিনে অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ডেটা অ্যানালাইসিস, গ্রাফিকস, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ম্যানেজমেন্টও চাকরিতে কাজে লাগে।
করণীয়—
• এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্টসহ অন্যান্য গুগল টুলস আয়ত্ত করা।
• অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (কোর্সেরা, উডেমি, বহুব্রীহি, টেন মিনিট স্কুল ইত্যাদি) থেকে কোর্স করা।
৩. ইন্টার্নশিপ ও পার্টটাইম কাজ: বাংলাদেশে এখন অনেক সংস্থা ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে। যদিও এগুলো সব সময় বেতনভিত্তিক নয়, কিন্তু অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এগুলো অত্যন্ত মূল্যবান।
করণীয়—
• বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ইন্টার্নশিপ খোঁজা।
• অনলাইন/অফলাইন পার্টটাইম কাজ (কনটেন্ট রাইটিং, টিউশনি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট) করা।
৪. স্বেচ্ছাসেবী কাজ: এনজিও, সামাজিক সংগঠন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দায়িত্ববোধ ও টিমওয়ার্ক শেখায়।
করণীয়—
• ইয়ুথ ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, এনজিও প্রকল্পে অংশ নেওয়া।
• চাকরি মেলা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।
৫. নেতৃত্ব ও টিমওয়ার্ক: শুধু একাডেমিক ফল নয়, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা চাকরিদাতাদের কাছে বাড়তি মূল্য পায়।
করণীয়—
• ক্লাব/সোসাইটির নেতৃত্ব নেওয়া।
• টিম প্রজেক্টে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।
৬. উদ্যোক্তা মানসিকতা: অনেক শিক্ষার্থী ছোটখাটো ব্যবসা, ফ্রিল্যান্স কাজ বা স্টার্টআপ চালিয়ে দক্ষতা তৈরি করছে।
করণীয়—
• ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে (আপওয়ার্ক, ফাইভার) কাজের চেষ্টা করা।
• ক্যাম্পাসে উদ্যোগ (ইভেন্ট আয়োজন, ছোট ব্যবসা) নেওয়া।
শিক্ষার্থী জীবনে করণীয়—
১. প্রথম বর্ষ থেকে নেটওয়ার্কিং: শিক্ষক, সিনিয়র ও প্রফেশনালদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা।
২. দ্বিতীয় বর্ষে দক্ষতা গঠন: অনলাইন কোর্স, ভাষা শিক্ষা, কারিগরি দক্ষতা আয়ত্ত করা।
৩. তৃতীয় বর্ষে বাস্তব অভিজ্ঞতা: ইন্টার্নশিপ, স্বেচ্ছাসেবী কাজ, ক্লাবে সক্রিয়তা।
৪. চতুর্থ বর্ষে প্রস্তুতি: সিভি তৈরি, মক ইন্টারভিউ, লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট।
চাকরির বাজারে ফ্রেশার মানেই ‘অভিজ্ঞতাহীন’ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়টিকে কৌশলে ব্যবহার করতে পারলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই নিজের জন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারেন। বাংলাদেশে বর্তমানে সুযোগের অভাব নেই—আছে সচেতনতার ঘাটতি। তাই গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই যদি শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ দক্ষতা, ডিজিটাল স্কিল, ইন্টার্নশিপ, স্বেচ্ছাসেবী কাজ ও নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তাহলে চাকরির দৌড়ে তাঁরা অবশ্যই এগিয়ে থাকবেন।
লেখক: হেড অব প্রোগ্রামস, বিডিজবস ডটকম লিমিটেড; সহসভাপতি, বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদ।