বাংলাদেশে বসেও আন্তর্জাতিক ভিএফএক্স শিল্পী হওয়া সম্ভব

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৬তম পর্ব।

ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট অনেক বড় একটা খাত। পুরো বিশ্বে খুবই কম মেধাবী ভিএফএক্স শিল্পী থাকায় এখানে প্রতিযোগিতা কমছবি: এআই/বন্ধুসভা

ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট অনেক বড় একটা খাত। পুরো বিশ্বে খুবই কম মেধাবী ভিএফএক্স শিল্পী থাকায় এখানে প্রতিযোগিতা কম। এ খাতে কাজ জানলে খুব সহজেই আন্তর্জাতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারাটা কঠিন। এখানেই বাংলাদেশের তরুণেরা পিছিয়ে আছেন বলে মনে করেন ভিএফএক্স শিল্পী মাজহারুল ইসলাম।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত, আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এ খাত মাত্র শুরু করছে। ডিজিটাল মার্কেট অনেক ছোট। ভিএফএক্সের কাজ খুব কম হয় এবং হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভারতে গিয়ে কাজ করান। একটা পুরো চলচ্চিত্রের কাজ করার জন্য বাংলাদেশে তেমন মেধাবী ভিএফএক্স শিল্পী নেই। এখানে যদি কেউ অন্তত দুই বছর সময় দেন, প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা শিখব। সঠিক গাইডলাইন এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। তাহলে একটা ফল আসবে।’

আরও পড়ুন

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ১৬তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন সৌদি আরবের মালা স্টুডিওর ভিএফএক্স শিল্পী ও লিড কম্পোজিটর মাজহারুল ইসলাম। আলোচনার বিষয় ছিল—‘বিক্যাম আ গ্লোবাল ভিএফএক্স আর্টিস্ট ফ্রম অ্যানিহয়্যার ইন বাংলাদেশ’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ২০ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী।

দেশের ভেতরে চ্যালেঞ্জ
প্রথম চ্যালেঞ্জটা হলো এই দেশে মেধাবী ভিএফএক্স শিল্পীর সংকট। আর যাঁরা এ খাতে শিখতে আসেন, ছয়-আট মাস শিখলে একটা পর্যায়ে আসা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, থ্রি–ডি প্রোডাক্ট ভিজ্যুয়ালাইজেশন। মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় মাস ঠিকঠাক সময় দিলে এ কাজ শেখা যায়। মোটামুটি লেভেলের একটা আয় করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেকেই মোটামুটি লেভেলে আয় করা শুরু করলে নিজেকে আর পরবর্তী লেভেলের জন্য পুশ করে না। এখানেই থেমে যায়।’

মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ভালো শিল্পী না পাওয়ারও কারণ আছে। আমাদের দেশে ভিএফএক্স শেখার মতো ভালো প্রতিষ্ঠান নেই। আবার, কিছু প্রতিষ্ঠান আছে শেখায়, কিন্তু তারা নিজেরাও ওই মানের বিশেষজ্ঞ না।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (১৬তম পর্ব)।

করণীয় কী
বিশ্বের যত বড় ভিএফএক্স স্টুডিও আছে, সবার অফিস ভারতে আছে। কারণ, সেখানে অল্প টাকায় শিল্পী পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে একজন জুনিয়র ভিএফএক্স শিল্পীকে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৪০ ডলার বেতন দিতে হয়। ইন্টার্ন করতে গেলেও অন্তত ২০ ডলার দিতে হয়। আর আমাদের দেশে যদি প্রতি ঘণ্টায় ১০ ডলারও দেয়, তাহলে বেতন হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এটা কোম্পানিগুলোর জন্য বড় সুযোগ। পাশাপাশি ভারত সরকার তাদের ট্যাক্স ফ্রি করাসহ অন্যান্য কাঠামোও (সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা) উন্নয়ন করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ভিএফএক্স শিল্পী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘একই কাজটা বাংলাদেশেও করা সম্ভব। এর জন্য প্রথমে পাইলট প্রকল্প করতে হবে। বিদেশি একটা-দুইটা স্টুডিওকে প্রস্তাব দিতে হবে যে আমরা তোমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিচ্ছি, অন্যান্য সুযোগ–সুবিধাও দিচ্ছি, তোমরা আমাদের দেশের তরুণদের কাজ শিখিয়ে তোমার জন্য শিল্পী তৈরি করে নাও। এভাবে অন্তত এক লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব।’

আরও পড়ুন

ভিএফএক্স শিল্পী হতে হলে কী করতে হবে
ভিএফএক্সের ভেতর অনেকগুলো বিভাগ আছে। কিছু বিভাগ আছে, যেখানে কারিগরি জ্ঞানটা খুব বেশি দরকার। এমন তিনটা বিভাগ হলো রোটোস্কোপিং, পেইন্ট, ও ম্যাসমুভিং। রোটোস্কোপিং হচ্ছে এমন একটি টেকনিক, যেখানে ভিডিও ফুটেজ থেকে নির্দিষ্ট কোনো অবজেক্ট, মানুষ বা অংশকে ফ্রেম বাই ফ্রেম আলাদা করা হয়। পেইন্ট বলতে মূলত সেই প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেখানে ভিডিও বা ফ্রেম থেকে অবাঞ্ছিত এলিমেন্ট সরানো বা ঠিক করা হয়। এটি প্রায়ই রোটোস্কোপিংয়ের সঙ্গে যুক্ত কাজের অংশ। ম্যাসমুভিং হলো একটি প্রক্রিয়া, যা লাইভ-একশন ফুটেজে থ্রি–ডি এলিমেন্ট বা কম্পিউটার জেনারেটেড অবজেক্ট ঠিক জায়গায় বসানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই তিনটি বিভাগেই অনেক কাজের সুযোগ আছে। আবার, থ্রি–ডি বিভাগে গেলে এসেট তৈরি করা যায়। এই বিভাগে মডেলিং শিখতে, ব্লেন্ডার শিখতে সর্বোচ্চ তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। এগুলো শিখে আয় শুরু করা সম্ভব। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিল্পী হতে গেলে অনেক সময় দিতে হয়।