টেক শো
বাংলাদেশে রোবোটিকস এবং আইওটির সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ
বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৪ মে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় পর্ব।
বাসাবাড়িতে মোটরের মাধ্যমে ট্যাংকে পানি নেওয়ার সময় দেখা যায়, ট্যাংক পানিতে ভরে যাওয়ার পরও মোটর বন্ধ করতে দেরি হচ্ছে। এই সময়টায় অনেক পানি অপচয় হয়। এই অপচয় রোধ করতে একটা সেন্সর ব্যবহার করা যেতে পারে। সেন্সরের কাজ হলো, ট্যাংক পানিতে পরিপূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরটি অটোমেটিক বন্ধ করে দেওয়া। এ কাজটিই আইওটি বা ইন্টারনেট অব থিমস।
আবার ধরেন, আপনি বাড়ির বাইরে গেলেন। হঠাৎ মনে হলো বাসায় ফ্যান বা লাইট বন্ধ করা হয়নি, বাসার দরজা লক করতে ভুলে গেছি কিংবা গ্যাসের চুলা বন্ধ করা হয়নি! মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি আপনার মোবাইলে একটা কমান্ড দিলেন এগুলো বন্ধ করতে। সঙ্গে সঙ্গে সব বন্ধ হয়ে গেল। মোবাইলের সঙ্গে আপনার বাসার জিনিসপত্রের এ সংযোগটাই আইওটি।
প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘এক্সপ্লোরিং দ্য ওয়ার্ল্ড অব রোবোটিকস অ্যান্ড আইওটি ইন বাংলাদেশ’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে ১৪ মে রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আলোচক হিসেবে ছিলেন অগমেডিক্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং সাইবারনেটিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মুজিব নোমান। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে রোবোটিকস ও আইওটি কী, বাংলাদেশে এগুলোর বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ, ডেটা অ্যানালাইটিকস এবং এসব খাতে ক্যারিয়ার গড়তে তরুণদের কী কী করা উচিতসহ বিভিন্ন দিক। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী।
বাংলাদেশে রোবোটিকসের সম্ভাবনা নিয়ে রাশেদ মুজিব নোমান বলেন, ‘বাংলাদেশে মেধার অভাব নেই। বিশ্বের সব বড় বড় কোম্পানিতে বাংলাদেশি ছেলেমেয়েরা কাজ করছে। আমাদের দরকার হচ্ছে তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা। ভালো খবর হচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে রোবোটিকস ও আইওটি নিয়ে কাজ করছে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ফাইনালে যাচ্ছে। হঠাৎ করে কিন্তু এটা হয়নি। বিগত ১০-১৫ বছরে অনেকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশে রোবোটিকস ও আইওটি নিয়ে কাজ করার একটা আগ্রহ তরুণদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
‘তবে চ্যালেঞ্জ ভিন্ন জায়গায়। একটা হচ্ছে আমাদের তহবিলের সীমাবদ্ধতা। এ ধরনের প্রকল্প করতে গেলে প্রচুর তহবিল দরকার হয়। পাশাপাশি নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবন-আবিষ্কারে মূল্যায়ন ও উৎসাহ দিতে হবে। এখানে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের শিল্পপতিরা ধীরে ধীরে এই খাতে এগিয়ে আসছেন। আশা করছি, পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাবে।
‘আরেকটা চ্যালেঞ্জ হলো, এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রচুর পার্টসের দরকার হয়। আমাদের দেশে এগুলো তৈরি হয় না। বাইরের দেশের ওপর নির্ভরশীলতা আছে। আমরা যে রোবট তৈরি করেছি, সেটার ডিজাইন দেশে করলেও বাইরে থেকে আমাদের তৈরি করে আনতে হয়েছে।
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে যদি রোবটের ইমপ্লিমেন্টেশন বেশি হয়, তাহলে দেশে বড় ধরনের একটা চাহিদা তৈরি হবে। তখন দেখবেন এ ধরনের ম্যানুফেকচারিং কোম্পানিগুলোও দেশে চলে আসছে। ভালো খবর হচ্ছে, মানুষ বিষয়টা নিয়ে এখন ভাবছে এবং ছোট ছোট পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমি বলব, এখনই সময় ছোট পদক্ষেপ থেকে বড় পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
আমরা চাকরি নেওয়ার জন্য লোক খুঁজি, তখন কিন্তু লোক পাই না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? মূল কারণটা হচ্ছে দক্ষ লোক নেই।
এ ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে রাশেদ মুজিব নোমান বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে ২৬ লাখ এবং বেসরকারি হিসাবে ৬৬ লাখ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। আবার যখন আমরা চাকরি নেওয়ার জন্য লোক খুঁজি, তখন কিন্তু লোক পাই না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? মূল কারণটা হচ্ছে দক্ষ লোক নেই।’
নোমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কিন্তু চাকরি নিশ্চিত করা নয়, তাদের কাজ হচ্ছে সেখানে কীভাবে আমরা জ্ঞানার্জন করতে পারি। সবাইকে বলব, আপনাদের দক্ষতা আপনাদেরই অর্জন করতে হবে। এটা তেমন কঠিন কাজ নয়। ভালো খবর হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে একটা পজিটিভ পরিবেশ তৈরি করছে।’
এই মুহূর্তে চাকরির বাজারে সবচেয়ে চাহিদা বেশি ডেটা অ্যানালাইটিকসের। এ বিষয়ে রাশেদ মুজিব নোমান বলেন, ‘ডেটা অ্যানালাইটিকসে নিজেকে তৈরি করার জন্য ইচ্ছাই যথেষ্ট। কেউ যদি তিন থেকে ছয় মাস ডেটা অ্যানালাইটিকসে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে, তাহলে সে মার্কেটের জন্য রেডি হয়ে যাবে।’
‘এখন প্রশ্ন হলো, কী কী লাগবে? আমরা এক্সেলটা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু এক্সেলে মাস্টার হতে হবে। ভিলুকআপ পারতে হবে, এক্সলুকআপ পারতে হবে, ইনডেক্সিং পারতে হবে। ডেটা নিয়ে খেলা করার জন্য কিছু দক্ষতা দরকার হয়। পাইথন শিখতে হবে। বিভিন্ন টুলস শিখতে হবে। এগুলো শিখতে পারলে আপনি ঘরে বসেই অসংখ্য বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করতে পারবেন। লিংকডইনে এমন অসংখ্য চাকরির সুযোগ রয়েছে।’ যোগ করেন নোমান।
তরুণদের উদ্দেশে এই রোবোটিকস–বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘তরুণদের বলব, তোমরা যা চাইবে সেটাই অর্জন করতে পারবে। কেউ তোমাদের থামাতে পারবে না। এর জন্য দরকার লক্ষ্যের প্রতি গভীর মনোযোগ এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি। কারণ হচ্ছে, অনেকের স্বপ্ন থাকে; কিন্তু সেটা পূরণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করি না। আমাদের একটা স্বপ্ন থাকতে হবে এবং সেটা পূরণের জন্য নির্দিষ্ট একটা সময় নির্ধারণ করতে হবে। তখন সেটা হয়ে যায় লক্ষ্যমাত্রা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। সব সময় যে পরিকল্পনামাফিক হবে, তা কিন্তু নয়। যদি একটা পরিকল্পনা কাজ না করে, তাহলে আরেকটা পরিকল্পনা থাকতে হবে। পরিকল্পনাটাকে নতুন করে সাজানোও যেতে পারে। তবে কখনোই হাল ছাড়া যাবে না। হতাশ হওয়া যাবে না। নিজের পরিকল্পনায় বিশ্বাস রাখতে হবে। তাহলেই তুমি সফল হতে পারবে।’
উল্লেখ্য, লাইভ শোটির প্রতিটি পর্বে রয়েছে অনারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিংবা প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ টেক কুইজ। প্রতি পর্বে কুইজে অংশগ্রহণকারী ভাগ্যবান একজন বিজয়ী জেতার সুযোগ পাচ্ছেন অনার এক্সসেভেন লাইট ইয়ারবাডস। ৭ মে অনুষ্ঠিত প্রথম পর্বে কুইজ বিজয়ী হয়েছেন শান্ত–মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নাহিদ শুভ।