সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কীভাবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করবেন

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৫তম পর্ব।

ভাবতে হবে, আপনি কীভাবে নিজের জায়গা থেকে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংটা বাড়াবেনছবি: ফ্রিপিক

সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ের এই যুগে অনেক ধরনের প্ল্যাটফর্ম এসেছে, যেগুলোতে খুব অ্যাকটিভ থাকি। একেকজন একেকভাবে অ্যাকটিভ থাকে। কোনো কাঠামো মেনে চলা হয় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবারই নিজস্ব একটা অডিয়েন্স রয়েছে। সেটা হতে পারে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কিংবা অফিসের সহকর্মী। এখন ভাবতে হবে, আপনি কীভাবে নিজের জায়গা থেকে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংটা বাড়াবেন।

এ বিষয়ে ব্র্যান্ড মার্কেটিং প্রফেশনাল সামছুদ্দোহা সাফায়েত বলেন, ‘প্রতিটি কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের একটা লোগো থাকে। নির্দিষ্ট একটা রং থাকে। ব্র্যান্ডটার একটা স্লোগান থাকে যে তারা কোনো ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিনিধিত্ব করে, কোনো ধরনের পণ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে যে একইভাবে বা একই কাঠামোতে আগাতে হবে, ব্যাপারটা কিন্তু তা না। তবু ব্যক্তিগত একটা সোয়াট (SWOT) অ্যানালাইসিস বা কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে। এখানে সোয়াট মানে হচ্ছে শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও হুমকি। নিজে যদি বুঝতে পারেন আপনার কৌশলগত পরিকল্পনা কী, তখন ওই জায়গা থেকে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংটা করা যায়।’

আরও পড়ুন

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ১৫তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন শিক্ষক ও ব্র্যান্ড মার্কেটিং প্রফেশনাল সামছুদ্দোহা সাফায়েত। আলোচনার বিষয় ছিল—‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং থ্রো ডিজিটাল স্পেস’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।

নিজের শক্তির জায়গাগুলো নিয়ে সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে জানিয়ে সামছুদ্দোহা সাফায়েত বলেন, ‘বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব দিক তুলে ধরা। নিজের দুর্বলতার জায়গাগুলো জেনে সেগুলো নিয়ে কাজ করা, দক্ষ করা। এটা করতে পারলে ক্যারিয়ারে সুযোগের জায়গা অনেক বেড়ে যাবে।’

‘প্রথমে বুঝতে হবে সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ে আপনি কোন অবস্থায় আছেন। গুগলে গিয়ে নিজের পুরো নাম লিখে সার্চ দিলেই বুঝতে পারবেন ভার্চ্যুয়ালি আপনার অবস্থান কোথায় আছে। লিংকডইন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে থাকলে গুগল সেগুলো সামনে নিয়ে আসবে। আপনি কী কাজ করেন, তা উঠে আসবে।’

স্মার্টলি নিজের প্রচার কীভাবে করবেন
এখন সমাজটাই এ রকম যে নিজের ঢোল নিজেকেই পেটাতে হবে। এটার বিকল্প নেই। আপনার শক্তির জায়গা কী? কোন কাজটায় ভালো? কোথায় আত্মবিশ্বাসী? অন্যরা তাঁর জায়গা থেকে আপনাকে কীভাবে গ্রহণ করবে? সেই জিনিসটা বোঝানোর দায়িত্ব কিন্তু আপনারই।

ব্র্যান্ড মার্কেটিং প্রফেশনাল সামছুদ্দোহা সাফায়েত বলেন, ‘আমরা যে যে খাতেই আছি না কেন, ব্র্যান্ডিংটা শুরু করতে হবে ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে। যেখানে পড়াশোনা করছি, সেখান থেকে, নিজের নেটওয়ার্কিং মাধ্যমগুলো দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিংবা সরাসরি যে বন্ধুরা আছে।’

‘পেশাদার দিক দিয়েও অফিসে আপনার ইমেজ কেমন? কীভাবে কথা বলছেন? কীভাবে পোশাক পরছেন? আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ সহকর্মীরা কীভাবে নিচ্ছে? আবার একই বিষয়টা লিংকডইনে শেয়ার করা; এই প্ল্যাটফর্মটা নিজের কাজ সংশ্লিষ্ট মানুষদের, যাঁদের সঙ্গে আপনার সামনাসামনি দেখা হয় না; সেই জায়গা থেকে লিংকডইনে আরেকটু পেশাদার উপায়ে পোস্ট করতে হবে, কমেন্ট করতে হবে। এটা বোঝার একটা ব্যাপার আছে।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (১৫তম পর্ব)।

কোন প্ল্যাটফর্ম কীভাবে ব্যবহার করব
সামছুদ্দোহা সাফায়েত বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, আমরা ফেসবুকে যেটা পোস্ট করছি, ইনস্টাগ্রামেও একই জিনিস পোস্ট করছি। অথচ প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী কিন্তু অডিয়েন্স আলাদা। ফেসবুকটা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের জন্য। ইনস্টাগ্রাম আরও ফ্রেন্ডলি। প্ল্যাটফর্ম অনুযায়ী পোস্ট আলাদা হতে হবে। যেমন কোথাও ঘুরতে গেলেন, কোথাও খেতে গেলেন—এগুলো ফেসবুকের কনটেন্ট। এগুলো লিংকডইনে শেয়ার করলে হবে না। লিংকডইনে শেয়ার করবেন আপনার কাজ ও কাজসংশ্লিষ্ট কথা। যেমন আপনি স্বেচ্ছাসেবী, মানবাধিকারকর্মী বা এমন কাজ করেন, যেগুলো সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে। এখানে পেশাদার জীবনের অন্যান্য কাজও থাকতে পারে।’

যাঁরা নিজের ঢোল নিজে পেটাতে চান না, তাঁরা কীভাবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করবেন?
যাঁর যে দক্ষতা আছে—সেই কাজটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা, সিভিতে আপডেট করা। তাহলে মানুষ এমনিতেই জানবে আপনার ব্র্যান্ডিং। সামছুদ্দোহা সাফায়েত বলেন, ‘যেমন আপনার লেখার হাত ভালো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত লিখুন। ধীরে ধীরে আপনার একটা পাঠকশ্রেণি তৈরি হবে। তারপর একটা বই প্রকাশ করুন। দেখবেন সেই পাঠকেরা আপনার বই কিনছেন। কারণ, তাঁরা জানেন আপনি ভালো লেখেন। আবার ধরেন, আপনি ভালো গ্রাফিকস ডিজাইনার। ভালো ভালো কিছু ডিজাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। দেখবেন অন্যরাই সেগুলোর প্রচার করছে।’