চিরকুটের নিঃশব্দ আলাপ

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

সকালের নরম রোদ মুখে স্পর্শ করে ধীরে ধীরে হাঁটছিলাম একাকী পথ ধরে। পথের ধারে, ভুলে যাওয়া এক শৈশবের মতো একটি ভাঁজ করা কাগজ পড়ে ছিল জমে থাকা শিশিরের মতো নির্জনতায়। কৌতূহল মুঠোয় ধরে চুপি চুপি তুলে নিলাম। কাগজ খুলে পড়তে শুরু করলাম।
— শুনবে?
— জি।
— হাসবে না, ঠিক আছে?
— আচ্ছা।
কাগজের ওপর ছড়ানো অক্ষরগুলো যেন এক অন্য রূপে বেজে উঠল—

‘আজ কাঠগোলাপের সম্ভাষণ। ছটফটানি মন, তোর অবর্তমানে আমার নির্বাসন যেন অন্ধকারে ডুবে। অনুতাপে শিহরিত হয়েছে আজ ভোরের পাখি, কাঁপে রাতের ওই ধ্রুবতারা। নিঃসঙ্গতার তারাটি আর কত নিঃসঙ্গতার সন্ধান করবে? ফিরে যেতে চাই সেই শিশিরঝরা পুরোনো দুর্বাঘাসের কাছে।
বসবি কি অবেলায়, ফড়িং হয়ে বুকের বাঁ পকেটে?’
চোখ বুজে গভীর নিশ্বাস নিয়ে বললাম—
‘হুম।’
মনের ভেতর ভেসে উঠল এক অমলিন স্মৃতি, ঝলমলে এক সন্ধ্যার কথা—
—আচ্ছা, সেদিন কেন অভিমান করে চা ফেলে দিয়েছিলি?
— তুই দেরি করছিলি, তাই।
— তাই বলে এত রাগ?
— হুমম... আমার অভিমান থাকবে অযুত-নিযুত বছর। প্রতিটি সন্ধ্যা নামবে অভিমানের রঙে। ঝগড়া করেই কাটবে বেলা। আর যদি তা তোর অযত্ন লাগে, ফিরতে পারিস পুরোনো পথে।

আরও পড়ুন

আমি ধীরে, অনেক ধীরে বললাম—
‘না, তোর অভিমানে আছে রজনীগন্ধার সুবাস। প্রতিটি সন্ধ্যা নামা অভিমান নামক ফুলগুলো ব্যালকনিতে ঝুলিয়ে রাখব যত্নে। তাদের গন্ধে মুছে যাবে আমার সমস্ত ক্লান্তি ও দুঃখ।’

সেই মুহূর্তে বুঝেছিলাম, অভিমানেও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার গন্ধ। আর ভালোবাসা ছাড়া নিঃসঙ্গতা কখনো সত্যিই আলোকিত হয় না।

শিক্ষার্থী, মেডিসিন অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়