ঠিকানাবিহীন চিঠিগুলোই তোমার

প্রতীকীছবি: আবদুস সালাম

প্রিয় পদ্ম,

খুব মনে পড়ছে চিঠিময় দিনগুলোর কথা। এখন সবটাই অতীত! জানো, তোমার দেওয়া এক ঝুড়ি চিঠি আজও ট্রাংকের ভেতর খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি—চিঠিতে থাকা শব্দের ঘ্রাণে বহু নির্জন রাত পার করে দেব বলে! শব্দের পর শব্দের গাঁথুনির দিকে তাকিয়ে বহু বসন্ত পার করে দেব বলে!

তোমার নামে এখনো রাত্রি নামে, ভোর হয়, বাগানে ফুল ফোটে, সুরভি বিলায়, আবার দিন শেষের বেলা এসে পাপড়ি মুড়িয়ে দেয়, হয়ে যায় ঝরা ফুল! জীবনও কি ঠিক এমনই নয়? ফোটা আর ঝরে যাওয়া, তার মধ্যেই সব সৌন্দর্য ও ব্যথা।

বই তোমার খুব প্রিয়, তাই না? একসময় আমি বই পছন্দ করতাম না। তোমার দেওয়া বইগুলো আমার বুকশেলফে পড়ে থাকত বছরের পর বছর। বই পড়েছি বলে মিথ্যা বলতাম! কিন্তু বিশ্বাস করো, আজ সত্যিই আমি বই পড়তে পছন্দ করি। এখন খুব করে বলতে ইচ্ছা করে, তোমার ওই বিশাল লাইব্রেরিতে আমারও কি একটুখানি ঠাঁই হবে?

আরও পড়ুন

তোমার ফুল খুব প্রিয়, তাই না? ফুল আমারও খুব প্রিয়। গোলাপ প্রেমের একটি অংশ হয় না, তাই বেলিও মালা হয়ে খোঁপায় নেয় না ঠাঁই। আজও রোজ নিয়ম করে গোলাপ ফোটে। বেলি, পদ্ম ও নয়নতারা বাতাসে দোল খায়। তাদের মধ্যে কত মিল! নয়ন তার তারাকে ভীষণ ভালোবাসে। ওই নয়নতারাই এখন আমার সুখ।
‘আমি ঝরে যাব—তবু জীবন অগাধ
তোমারে রাখিবে ধরে সেই দিন পৃথিবীর পরে,
আমার সব গান তবু তোমারে লক্ষ্য করে।’

জানি, তুমি ভীষণ ব্যস্ত! ব্যস্ততায় তোমার সারাটা দিন পার হয়ে যাবে। তবু কোনো এক গোধূলিতে যদি আমার কথা একবার মনে পড়ে, ছুটে যেয়ো চিঠিঘরের পোস্ট অফিসে। চিঠিঘরের বাক্সের কোনায় পড়ে থাকা ঠিকানাবিহীন চিঠিগুলোই তোমার।

করুণা করে হলেও চিঠি দিয়ো, খামে ভরে তুলে দিয়ো আঙুলের মিহিন সেলাই। তোমার হাতে লেখা চিঠির কালো অক্ষরগুলোর কি মায়া! আমার আবারও চিঠি পেতে ইচ্ছা করে! ফিরে পেতে ইচ্ছা করে হলুদ কিংবা সাদা খামে ভরা চিঠি খোলার সেই মিষ্টি অনুভূতি।

কোনো এক নির্জন বিকেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন বলে ওঠে—আচ্ছা, তুমি কি এখনো আমায় মনে রেখেছ? চিঠি কি এখনো তোমার দুর্বলতা?

ইতি,
বেলি।

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।