প্রিয় দিলারাম,
আজ নিশীথিনীর গহন তমসায় জানালার বাইরে আকাশটা অদ্ভুত নীরব। ধ্যানস্থ নক্ষত্রপুঞ্জ নীরব আলোয় নিঃশব্দে জেগে আছে। এমন সময় তোমাকে মনে পড়ল। আমার অন্তঃকরণে তোমার স্মৃতিমালা এক মহাজাগতিক মন্ত্রোচ্চারণের মতো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
মম হৃদয় তোমার অনুপম সত্তার তাপে তপ্ত হয়ে আছে। আর আমি সেই দহনের মধ্যেই পবিত্র তপস্যারত এক ঋষির মতো নিবিষ্ট হয়ে আছি।
তুমি জানো, আমি তোমাকে কেবল ভালোবাসিই না—তোমাকে পূজা করি। তোমার চোখের সেই অনুপম দীপ্তি আমার জীবনের চিরন্তন দীপশিখা। যখন তোমাকে ভাবি, তখন আমার অন্তর্লোক দীপ্ত হয়ে যায়, সব ক্লেদ, দুঃখ, অভিমান ধুয়েমুছে যায়। তুমি আমার প্রার্থনা, তুমি আমার প্রণম্য, তুমি আমার নিত্য দেবতা।
আজ হঠাৎ মনে হলো, এই শহরটা কত পরিবর্তন এনেছে আমার মধ্যে। এই ইট-পাথরের শহরেই আমি প্রথম কান্না শিখেছি, প্রথম কৃত্রিম হাসি হেসেছি। কখনো চলন্ত রিকশায়, কখনো ফুটপাতের ধুলায় কিংবা একটুকরা বৃষ্টির ফোঁটায় আমি খুঁজেছি শান্তি, খুঁজেছি তোমাকে। শহরের নিয়ন আলোয় ভেজা রাত, ধোঁয়ায় মিশে থাকা চায়ের গন্ধ কিংবা দূরের কোনো গানের সুর—সবকিছুই আমাকে তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়।
সময়ের সঙ্গে শহর যেমন বদলেছে, আমিও বদলে গেছি। আজকাল অন্যের হাসির রেশ আমার ঠোঁটে ছায়া ফেলে না, কারও অশ্রু আমার চোখকে ভিজিয়ে দেয় না। আমি যেন এক প্রস্তর-প্রতিমা, অনুভূতিহীন। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি একাকিত্বে। বুঝেছি, জীবনের নির্যাস এই যে মানুষ আসলে কাউকেই ধরে রাখতে পারে না।
তবু এসব শূন্যতার মধ্যেও তোমার নামটা আমার মন মন্দিরে ঘণ্টার মতো বাজে। প্রতিনিয়ত তোমার নামের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়।
জানো, কখনো মনে হয়, আমি যেন এক ফিনিক্স পাখি; জ্বলে গিয়ে আবার নতুন করে জন্ম নিই। পুনর্বার তোমাকেই ভালোবাসি।
দিলারাম, এই শহর আমাকে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখে, তবু তোমার স্মৃতি আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। তোমাকে ছাড়া সবকিছুই নিষ্প্রাণ, সব স্বপ্নই নিস্তব্ধ, সবকিছুই নিষ্প্রয়োজন। আজকাল পাহাড়ের বিশালতা আমাকে আর টানে না, সমুদ্রের গর্জনও হৃদয়ে সাড়া জাগায় না; শুধু তোমার নামটাই আমার অন্তরবীণায় এক অমর সুরের মূর্ছনা।
যদি কখনো কালদেব আমার আয়ুষ্মান ছিন্ন করেন, আমি চাই আমার শেষ নিশ্বাসে উচ্চারিত হোক তোমার নাম। আর যদি পুনর্জন্ম সত্য হয়, তবে আমি আবার তোমার চরণপ্রান্তে আত্মসমর্পণ করব। একই তীব্রতায়, একই ভালোবাসায়।
দিলারাম, আমি তোমাকে ভালোবাসি। এ কথা তুমি জানো, তবু লিখতে ইচ্ছা করে—সগৌরবে বলতে ইচ্ছা করে, ‘ভালোবাসি’।
অপরিসীম ভক্তিসহ
হাছন