সাসপেন্স আর জীবনবোধের অনন্য মিশ্রণ ‘পেন্ডুলাম’

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের মৌলিক-থ্রিলার উপন্যাস ‘পেন্ডুলাম’।

রহস্যময় এক ডক্টর, নিজের চারপাশে রহস্য তৈরি করে রাখেন সব সময়। জাতীয় দৈনিকে একটি অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন দিলেন তিনি। প্রার্থী হিসেবে হাজির হলো মাত্র দুজন। একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির সেই তরুণ-তরুণীকে হতবুদ্ধিকর একটি রহস্য সমাধান করার অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলো। তদন্তে নামতেই পরিষ্কার হয়ে যায় কাজটি গোলকধাঁধাপূর্ণ। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের মৌলিক-থ্রিলার উপন্যাস ‘পেন্ডুলাম’ পাঠককে দোলাচলে দুলতে দুলতে নিয়ে যাবে রহস্যময়তার গভীরে।

‘পেন্ডুলাম’ বইটি বাংলা থ্রিলার ঘরানায় একটি ‘ফিউশন থ্রিলার’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বেশির ভাগ থ্রিলারে যখন যুক্তি, প্রমাণ বা অপরাধীর মনস্তত্ত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়, তখন এই উপন্যাস পাঠককে এক নতুন দোলাচলের মধ্যে ফেলে দেয়।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র রহস্যময় এক ডক্টর। তাঁর অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন এবং মাত্র দুজন সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী প্রার্থীকে একটি জটিল অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া—এই সেটআপটিই গল্পের প্রধান আকর্ষণ। ডক্টরের উদ্দেশ্য এবং চারপাশের রহস্যের জাল বুনন লেখকের মাইন্ড গেম।

বিজ্ঞান বনাম অতিপ্রাকৃতের দ্বৈরথ বইটির সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য। সাধারণ কোনো খুনের রহস্য বা চুরির কাহিনির বদলে, এখানে এমন এক ঘটনার তদন্ত করা হয়, যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান নাকি অতিপ্রাকৃতের ডোমেনে পড়ে, তা নিয়ে চরিত্ররা (এবং পাঠক) ক্রমাগত দুলতে থাকে। লেখকের এই সাসপেন্স অব জাজমেন্ট (রায় না দেওয়ার সাসপেন্স) দারুণ উপভোগ্য।

আরও পড়ুন

দুই ভিন্ন প্রকৃতির তরুণ-তরুণী, একজনের চোখে যুক্তি, অন্যজনের চোখে হয়তো অন্য বিশ্বাস—এ দুই মেরুর আকর্ষণ-বিকর্ষণ রহস্যকে আরও গভীর করে তোলে। তাদের ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশ কীভাবে এই অলৌকিক বা বৈজ্ঞানিক ধাঁধার সামনে নতি স্বীকার করে, তা দেখতে ভালো লাগে।

‘পেন্ডুলাম’ নামটি কেবল একটি বস্তুর নাম নয়, বরং উপন্যাসের মূল ভাবনার প্রতীক। ঘটনার সত্যতা কোন দিকে ঝুঁকবে—যুক্তিগ্রাহ্যতার দিকে নাকি অব্যাখ্যাত রহস্যের দিকে, সেই অনিশ্চয়তা পাঠকের মনেও একটি অবিরাম দোলা তৈরি করে রাখে।

কাদের জন্য এ বইটি? যারা কেবল প্রথাগত থ্রিলার পড়তে পড়তে ক্লান্ত, যাদের কাছে গল্পে বিজ্ঞান ও অতিপ্রাকৃতের মিশ্রণে এক নতুন উত্তেজনা নিয়ে আসে, তাদের জন্য ‘পেন্ডুলাম’ এক দারুণ পাঠ হতে পারে। এটি এমন এক প্রশ্ন রেখে যায়—‘সবকিছুর কি ব্যাখ্যা আছে?’ যা বই শেষ হওয়ার পরও পাঠকের মনে ঘুরপাক খায়। বইটি পাঠককে সেই রহস্যময়তার গভীরে নিয়ে যায়, যেখানে শেষ কথা বলে কিছু নেই! শুধু দুলতে থাকবে পেন্ডুলামের মতো।

সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা