ভৈরব বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে বুধবার। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই রাতব্যাপী মেঘনা নদীর তীরে বসে কাপড়ের বৃহৎ পাইকারি বাজার। সারা রাত জমজমাট ব্যবসা চলে। স্বল্পমূল্যে ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়। হাছান, অমিতাভ আর অন্তর এসেছে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে।
ছয় পিস জিনস প্যান্টের দাম চেয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। অথচ একই মানের প্রতি পিস প্যান্ট নিউমার্কেটে হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবু অমিতাভ বলল, ‘আরেকটু কম রাখা যায় না?’
কাপড় গোছাতে গোছাতে দোকানদার বলল, ‘এর চাইতে কম রাখলে ব্যবসা অইব না, মামা।’
হাছান বলল, ‘ব্যবসা তো সারা বছরই করো, মামা। এক দিন না হয় একটু কম করলেন।’
দোকানদার হাতের কাজ ফেলে বলল, ‘হ, মামা। ব্যবসা সারা বছরই করি। আর চাপাতির কোপও খাই।’ তারপর শার্টের বোতাম খুলে পিঠের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে বলল, ‘এই দেখেন কোপ। ইস্টিশনের নিচের কবরস্থানের মোড়ে এক রাতে এই কোপ খাইছি। ছয় মাস আগের ঘটনা। জনমের শিক্ষা অইছে।’
ক্ষতচিহ্নের দিকে তাকিয়ে তিন বন্ধুর চোখ কপালে উঠল। কাটার দাগ প্রায় চার ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাজুড়ে। বেচারা কী কষ্টই না পেয়েছিল! ক্ষতচিহ্ন নিয়েই সে এই শহরে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশ থেকে অন্য দোকানদার তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, ‘আরে বেডা, ভৈরব অইল ছিনতাইয়ের শহর। এইখানে মানুষ থাকে নাকি?’
প্রথমে সহানুভূতি জাগলেও শেষের কথাটা হাছানকে বেশ আঘাত করল। ভৈরবের অস্থায়ী বাসিন্দা হয়েও সে অপমান সহ্য করতে পারল না। প্রশ্নটা যখন মানুষ পরিচয় নিয়ে তখন চুপ থাকাটা বড্ড বেমানান। মুহূর্তেই কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘ভৈরব ছিনতাইয়ের শহর? বাংলাদেশের কোন শহরে রাতবিরাতে ছিনতাই হয় না?’
জেদি দোকানদার প্রত্যুত্তর দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই একমুহূর্তে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়ে গেল। কেউই ছেড়ে কথা বলতে রাজি না। ক্রমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তেই কটু বাক্য আদান–প্রদান হতে লাগল। ইতিমধ্যে চেঁচামেচি শুনে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে গেছে। ব্যাপারখানা কী, তা বোঝার জন্য প্রত্যেকেই উদ্গ্রীব হয়ে একে অন্যকে প্রশ্ন ছুড়তে লাগল। শেষে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও উভয়ের চোখমুখে যেন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। ব্যাপারটা হাতাহাতিতে চলে যেতে পারে ভেবে অন্যরা মীমাংসা করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করল। পিঠে হাত বুলিয়ে বোঝাতে লাগল, ঝগড়া করা মন্দ লোকের কাজ।
সময় নষ্ট না করে তিনজনই চলে এল। একরাশ বিরক্তি নিয়ে এদিক–সেদিক ঘোরাফেরা করল কিছুক্ষণ। কেনাকাটায় আর আগ্রহ রইল না। বাগানবাড়ি রোডের ফুটওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে একটু শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল। বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে নানা প্রসঙ্গ উপস্থাপন করতে লাগল। একদিন দূরে কোথাও ঘুরে আসা যায় কি না, তা নিয়েও চলল পরিকল্পনা। লঞ্চের ভেঁপু থেকে একটু পরপর আওয়াজ ভেসে আসছিল। বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় নদীর ঢেউগুলো ঝিলিক দিচ্ছে যেন। একটা ট্রেন দ্রুত সেতু অতিক্রম করল। সেসব উপেক্ষা করে বাসার উদ্দেশে রওনা হলো তারা।
বাসস্ট্যান্ড হয়ে ফেরার সময় দুর্জয় স্মৃতিস্তম্ভের নিচে তাকাতেই সেখানে দশ-বারো বছর বয়সী কিছু ছেলে দেখা গেল। রুক্ষ চুল, পরনে ময়লাযুক্ত ছেঁড়া কাপড়। প্রত্যেকের হাতে নেশার উপকরণ ‘ড্যান্ডি’। আশপাশে মানুষের যাতায়াত চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কেউই যেন এই ছেলেগুলোকে দেখছে না। শুধু রাতে নয়, দিনের আলোতেও এদের দেখা যায় এখানে। এদের ব্যাপারে সবাই কেমন নির্বিকার।
অন্তর বলল, ‘ভৈরব যেমন ছিনতাইয়ের শহর, তেমনি সংগঠনেরও। কিন্তু কেউ এই ছেলেগুলোকে নিয়ে ভাবছে না।’
অমিতাভ মাথা নেড়ে বলল, ‘সংগঠনে অনেক কাজ হয়। কিছু কাজ আছে, যা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে করতে হয়। বিপুল জনসংখ্যার দেশ হওয়ায় সরকার হয়তো পথশিশুদের দিকে নজর দিতে পারছে না।’
‘নজর দেওয়া দরকার। এরাই একদিন নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য ছুরি হাতে নেবে, ছিনতাই করবে। তারপর বদনাম হবে শহরের। তখন কেউ কিছু বললে কথা–কাটাকাটি হবে, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে অজান্তেই।’
অন্তরের কথা দুজনে নীরবে সমর্থন করল। তারা জানে, পেটের দায়ে মানুষ চোর হয় আর নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে হয় ছিনতাইকারী।
সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। মানুষের নৈতিক অধঃপতন দেখলে রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছা হয়। নিজ হাতে প্রতিবাদ করার একটা দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি জাগে। কিন্তু দিন শেষে নিজের দিকে তাকালে সেসব ভাবনা লুকায় অভাবের চিন্তার আড়ালে। এক মাস পেরোতেই অন্তর বুঝতে পারল মেসে থাকার কারণে আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন অল্প অল্প করে জমানো টাকা নানা ছুঁতোয় হাতছাড়া হচ্ছে। শিগগিরই শূন্য পকেট আর মাথায় অজস্র দুশ্চিন্তা নিয়ে বাস করার সময় এসে গেল। অথচ মুখ ফুটে কাউকেই নিজের কথাটুকু বলে না সে। অভিভাবকতুল্য মামাকেও এ ব্যাপারে কিছু জানাতে আগ্রহ বোধ করে না। নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য কেবল নিজের ওপরই আস্থা রাখার জেদ ছিল না এতকাল। সে জানত, অমুখাপেক্ষী হওয়ার বৈশিষ্ট্য বেশির ভাগ সময়ই বিপজ্জনক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিপজ্জনক পথকেই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ভাবতে লাগল। ভেবেচিন্তে ঠিক করল, এবার আয়ের বিকল্প উৎস সন্ধানের চেষ্টা করবে। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি না মিললে নিজের মধ্যে নিজের মুক্তি মিলবে কেমন করে?
ফাল্গুনের শেষ দিকে প্রচণ্ড গরম পড়তে লাগল। বাইরে বের হলে ঘেমে একাকার হতে হয়। এমনই এক দুপুরে হাছান এসে বলল, ‘একজনের বি নেগেটিভ রক্ত লাগবে। কোথাও পাচ্ছে না, তাই বিগ অ্যামাউন্ট অফার করেছে। এই যে তার কার্ড। আজকের মধ্যে লাগবে।’
কার্ড হাতে নিয়ে অন্তর দেখল নাম লেখা রয়েছে ‘মাহবুবুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ভৈরব বাজার’।
জীবনে প্রথমবার রক্তদানের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অন্তর মনে রেখেছে। কেবল একবারই রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। ক্যানসার আক্রান্ত রোগী। তখনো বি নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না। দরিদ্র মেয়েটির অসহায় দৃষ্টি আজও মনে পড়ে।
কার্ড হাতে নিয়ে সে ভাবছিল, এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া কী এমন ব্যাপার? এই সুযোগটাকে বরং কাজে লাগাতে পারলে বৃহৎ একটা পরিবর্তন সম্ভব। হাতের কাছে এমন সুযোগ কজনের আসে?
যেই ভাবনা সেই কাজ। এ যেন দিগ্ভ্রান্ত পথিকের হঠাৎ পথ খুঁজে পাওয়া। তাই রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে একটা রিকশা নিয়ে সে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাল। যেতে যেতে কার্ডে দেওয়া ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারল না। নম্বর ব্যস্ত দেখায়। হাসপাতালে মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে সে কিছুটা বিরক্ত বোধ করল। বসার জন্য কোনো চেয়ার খালি পাওয়া গেল না। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ হওয়ায় দাঁড়িয়ে থেকেই অপেক্ষা করতে লাগল। পুনরায় চেষ্টা করতেই মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলো। তিনি জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
অন্তর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগল। রাস্তার কোলাহল, জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের তীব্র হর্ন উপেক্ষা করে একটা কথা কানে বাজতে লাগল—জীবন বাঁচানোর বিনিময় হয় না।
ভদ্রলোক মাঝবয়সী। পরনে ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি থাকলেও তার বলিষ্ঠ দেহ যেন নানারূপে প্রকাশ হতে চাইছে। মাথায় আধপাকা চুল। কপালে চিন্তার ছাপ তখনো সুস্পষ্ট। এ সময় অন্তরকে দেখে তিনি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। প্রথমে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও আকস্মিক কী একটা ভাবনায় বিরত থাকলেন। অন্তর হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। প্রয়োজনের সময় এক ব্যাগ রক্ত কতটা মূল্যবান, তা এই লোকটিকে না দেখলে বোঝা যেত না।
রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে কোথায় কী অসুবিধা হচ্ছে, তা নিয়ে মাহবুবুর ব্যস্ত সময় পার করতে লাগলেন। নিজে গিয়ে ঠান্ডা পানি, ডাব কিনে নিয়ে এলেন। সেগুলো অন্তরের হাতে তুলে দেওয়ার সময় বললেন, ‘আমার একটিমাত্র মেয়ে। নাম সোহানা। ডাক্তার বলেছে সিজার না করালে আর কোনো উপায় নাই। আত্মীয়স্বজন, টাকাপয়সা অভাব না থাকলেও এই মুহূর্তে এক ব্যাগ রক্তের বড়ই অভাব। তুমি যে আমার কত বড় উপকার করতে এসেছ, তা তুমি নিজেও জানো না।’
পরিচয় হওয়া থেকে শুরু করে নানা জিজ্ঞাসায় দুজনের ভাব জমে উঠল। একসময় জরুরি প্রয়োজনে মাহবুবুর ছুটলেন অন্যদিকে। আত্মীয়স্বজনকে সময় দেওয়াটা কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। অন্তর বসে রইল রক্ত দেওয়ার অপেক্ষায়। অসংখ্য লোকের আনাগোনা আর মুমূর্ষু রোগীর চেহারায় বাঁচার আকুতি দেখে দেখে সময় কাটতে লাগল। দীর্ঘ সময় পর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ওয়ার্ড বয় হাঁক ছাড়ল, ‘অন্তর কে? অন্তর?’
অন্তর উঠে দাঁড়াল। তার অপেক্ষা শেষ হয়েছে। এক ব্যাগ রক্ত হয়তো বৃহৎ পরিবর্তন এনে দিতে প্রস্তুত। মা-বাবা যদি জানতেন, তাদের ছেলে অভাবের তাড়নায় তাজা রক্ত–বাণিজ্য করার ভয়াল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাহলে হয়তো কপাল চাপড়ে নিজেদের জীবনকেই বিসর্জন দিতেন। কিন্তু তারা থাকে শত মাইল দূরের গ্রামে। যেখানে বার্তা পৌঁছানোর মতো কেউ নেই।
বিন্দু বিন্দু রক্তে এক ব্যাগ পূর্ণ করে সে বাসায় ফিরল মোটা হলুদ খাম নিয়ে। খামের ওপরে লেখা ‘তোমার জন্য ভালোবাসা’। খামটা খুলতেই বেশ কিছু নোট উঁকি দিয়ে ‘ভালোবাসা’ শব্দটিকে উপহাস করতে লাগল যেন। কিন্তু সেসব নজরে পড়ল না। ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ নিয়ে সে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ইদানীং সিলিং ফ্যানের খট খট আওয়াজ বেড়েছে। কখনো কখনো মনে হয়, এখনই ওটা খুলে পড়বে বোধ হয়! অন্তর ফ্যানের দিকে নিষ্পলক চেয়ে রইল। এ সময় কী একটা ভাবনা ওকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগল। নিজের নৈতিকতা আর সমাজচিন্তা কিছু সময়ের ব্যবধানে এমন অর্থহীন রূপ লাভ করবে, তা কে জানত! যে শিক্ষা তাকে এতকাল সব অন্যায় থেকে বিরত রাখতে পেরেছিল, হঠাৎ সেই শিক্ষার প্রতি বীভৎস সন্দেহ ঘনিয়ে আসতে লাগল। এই জঘন্য পরাজয় তখনো সে ভালোভাবে উপলকব্ধি করতে পারেনি।
সেদিন সন্ধ্যা হতে না হতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। দীর্ঘ রাত হাবিজাবি স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকল। একসময় মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি ভেসে আসতেই ঘুম ভেঙে গেল। পুরোপুরি সকাল হওয়া অবধি বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করতে লাগল। জানালার কাছে নিমগাছটাতে বসে ভোরের দোয়েল শিস দিচ্ছে বারবার। রাতের অন্ধকার কেটে যখন ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটতে লাগল, তখন আকস্মিক একটা প্রশ্নের উদয় হলো মনে। সে নিজেকে জিজ্ঞেস করল—‘জীবন বাঁচানোর বিনিময় হয়?’
আধো ঘুম আধো জাগরণে বইয়ের তাক, দেয়ালে টানানো ফ্রেম, টেবিলে রাখা অ্যালার্ম ঘড়ি যেন ঘরময় প্রতিধ্বনি তুলল—জীবন বাঁচানোর বিনিময় হয় না।
অদ্ভুত সকাল, বিষণ্ন দুপুর আর অবসর বিকেল উপহাসের আসর জমাল। জীবনের সব প্রয়োজন একপাশে ফেলে কর্তব্যকে প্রাধান্য দেওয়ার এক মহা আয়োজন হতে চলেছে। একা থাকার পুরোনো অভ্যাস, নিরানন্দ জীবন, শাণিত বিবেকবোধ আজ একটা বাক্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, ‘জীবন বাঁচানোর বিনিময় হয় না।’
পরদিন বিকেলে অন্তর হাসপাতালে পৌঁছে মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করল। বলল, ‘মা-মেয়েকে দেখার খুব ইচ্ছা করছিল, তাই চলে এলাম।’
মাহবুবুর আনন্দিত কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি এসেছ, ভালো হয়েছে। মা-মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে। দেখে যাও।’
ছোট্ট শিশু মায়ের আঁচলের কাছে শুয়ে আছে। সোহানা তখন জেগেই ছিল। অন্তরকে দেখে বলল, ‘বাবার কাছে আপনার কথা শুনেছি। বসুন।’
অন্তর মুচকি হেসে বসতে বসতে বলল, ‘কী নাম রেখেছেন?’
‘সাবিহা আদ্রিতা। ওর বাবা এই নাম রেখেছে।’
‘সুন্দর নাম। আদ্রিতার জন্য ছোট্ট উপহার এনেছি। এটা রাখলে খুবই খুশি হব। আজ তাহলে আসি।’ বলেই সে বেরিয়ে পড়ল। মাহবুবুর হাসপাতালের ফটক পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। সোহানা প্যাকেট খুলে দেখল বেশ কিছু টাকা। সবুজ রঙের চিরকুটে লেখা—পৃথিবী সবার জন্য নিরাপদ হোক।
অন্তর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগল। রাস্তার কোলাহল, জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের তীব্র হর্ন উপেক্ষা করে একটা কথা কানে বাজতে লাগল—জীবন বাঁচানোর বিনিময় হয় না।
বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা