সব মিথ্যায় সত্য লুকিয়ে থাকে

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

পুরান ঢাকার ওয়ারী। ছোট গলির ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুরোনো তিনতলা বাড়ি হাশেম ম্যানশন। লাল ইটের দেয়াল, কাঠের জানালা আর জং ধরা লোহার গেট। বাড়িটি যতটা না ভয়ংকর, তার চেয়ে বেশি রহস্যময়।

এই বাড়ির দোতলায় থাকে রায়হান আল মাসুদ। বয়স পনেরো, ক্লাস টেনের ছাত্র। বইপড়ুয়া, শান্ত, কথা কম বলে। তার চোখ সব সময় অনুসন্ধানী। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েই বেশি উৎসাহী ও চিন্তিত থাকে। বইয়ের পোকা, বিশেষ করে রহস্য আর বিজ্ঞান তার প্রিয়। বন্ধুবান্ধব কম, কিন্তু ডায়েরির পাতাভর্তি নানা পর্যবেক্ষণ।

সেদিন ছিল শুক্রবার। বিকেলে রায়হান ছাদে বসে একটা পুরোনো গোয়েন্দা বই পড়ছিল। হঠাৎ নিচ থেকে একটা ভাঙার শব্দ এল। ছুটে গেল নিচে। তৃতীয় তলায় থাকতেন মোশাররফ চাচা, অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা। তিনি সকাল থেকেই নিখোঁজ। দরজা ভেতর থেকে লক করা, জানালায় লোহার গ্রিল। পুলিশ এল, তালা ভেঙে ঘরে ঢুকল।

ঘড়ির কাঁটা থেমে আছে ঠিক ৫টা ৪২ মিনিটে। ঘরের ভেতর খাটে ছাই আর তার ভেতর আধপোড়া চিঠির টুকরা, মেঝেতে গ্লাস ভাঙা, পানির ছিটা দেখে মনে হচ্ছে কেউ হুট করে যেন পড়ে গেছে। চুরি হয়েছে বলেও মনে হচ্ছে না। সবকিছু জায়গামতো ঠিকঠাক আছে। দরজা-জানালায় কোনো জোরপূর্বক প্রবেশের চিহ্ন নেই। রায়হান খেয়াল করল, মোশাররফ চাচার ঘড়ি ছিল পেনডুলাম। এমন ঘড়ি হাত দিয়ে না নড়ালে এমনিতে থামে না। তবে ঘড়ির পাশে পড়ে আছে একটি ম্যাগনেটিক পেন। সেটা দিয়ে ঘড়ির সুই থামানো সম্ভব! সে আরও লক্ষ করল পানির দাগ দরজার কাছে। কারও পড়ে যাওয়ার চিহ্ন নয়, বরং কেউ তাড়াহুড়ো করে বের হতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি।

আরও পড়ুন

রায়হান দারোয়ান রফিককে জিজ্ঞেস করল। রফিক জানাল, চাচা বলছিলেন, আজ সন্ধ্যায় সব কাগজপত্র একত্র করবেন। আমি দেখেছি, ৫টার দিকে কেউ তার ঘরে ঢুকেছিল। ঘড়ি থেমেছে ৫টা ৪২-এ। তাহলে ঠিক তখনই কিছু ঘটেছে। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা লক করা ছিল কীভাবে? রায়হান ছাদে গিয়ে খেয়াল করল, এক জায়গায় টিনে খোঁচা দাগ। সেখানে ক্লোরোফর্মের গন্ধ! তাহলে? খুনি ছাদ দিয়ে এসেছিল! জানালার ভেতরের গ্রিল খুলে, চেতনানাশক দিয়ে মোশাররফ চাচাকে অজ্ঞান করে নিয়ে গেছে। পরে জানালা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। বিভ্রান্ত করার জন‍্য ইচ্ছা করেই ঘড়ি থামিয়েছে। রায়হান ডায়েরিতে সব নোট নিল। পরে থানায় গিয়ে পুলিশকে দিল ঘড়ির চুম্বক থামানোর ব্যাপার, ছাদে ক্লোরোফর্মের দাগ, রফিকের সাক্ষ্য এবং চিঠির পোড়া অংশ।

জানা গেল, মোশাররফ চাচা ফারুক সর্দারের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছিলেন। ফারুক বাড়িওয়ালার ছেলে ও একজন ভূমিদস্যু। বাড়ির দোতলা ও ছাদ সে নিজের নামে করতে চাইছিল। ফারুকই অপরাধী। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে সে তার সব অপরাধ স্বীকারও করেন। সবাই বলল, এটা অলৌকিক গোয়েন্দাগিরি! রায়হান হেসে বলল, অলৌকিক না, সব মিথ্যায় সত্য লুকিয়ে থাকে।

বন্ধু, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা