একটি অভিশপ্ত রাত (দ্বিতীয় পর্ব)

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

ঘটনাটা যেহেতু মনে পড়ল, তবে একটু নেমে দেখলে অসুবিধে হয় না। সেদিন প্লাটফর্ম-১–এ থামলেও আজ প্লাটফর্ম-৩–এ থেমেছে। বাইরে গহিন অন্ধকার। এই অন্ধকারের মধ্যেই কারা জানি ফিসফিস করে কথা বলছে আর ইশারা দিচ্ছে। সন্দেহ পাকাপোক্ত হলে সামনে এগিয়ে যাই। তারা আমাকে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে বিদায় নিল, দুজন চাদর পরা ব্যক্তি। দুজন ব্যক্তি ট্রেনে উঠলেন। ট্রেনের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম, সেই শামিম নামের ট্রেনের কর্মী আরেকজন পুলিশ অফিসার ট্রেনে উঠে পড়লেন। আরেকটু সামনে গিয়ে চাদর পরিহিত ব্যক্তিদ্বয়কে খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না। এই বর্ষাকালে কেউ চাদর কীভাবে পরতে পারে, আমার জানা নেই। তবে এখানে যে ভালো কিছু হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছি।

উল্টো পথে ট্রেনের সামনের ইঞ্জিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। স্টেশনের আলোতে ঝলমল করছে চারপাশ। স্পষ্ট দেখলাম রনি নামের সেই ট্রেনকর্মী, একজন পুলিশ অফিসার এবং এখানেও দুজন চাদর পরিহিত ব্যক্তি। এক মুহূর্তও দেরি না করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে মুঠোফোনে তুলে নিলাম কিছু ভিডিও ও ছবি। চাদর পরা থাকায় তাদের মুখগুলো চেনা যাচ্ছে না। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি মুখভর্তি দাড়ি, চুল বড় বড়। অনেকটা আমাদের রূপকথার গল্পে যেসব ডাকাতের বর্ণনা দেওয়া থাকত তাদের মতো। তাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। ভাবলাম কিছু শুনতে পাব; কিন্তু কিছুই শুনতে পাইনি। এদিকে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়ে গেল। পাশে যে কামরাটা পেয়েছি, সেটিতেই উঠে পড়ি। বিষয়টা ধীরে ধীরে জটিলতার দিকে যাচ্ছে। কারা সেই চারজন মানুষ? তাদের সঙ্গে পুলিশের কী সম্পর্ক? এই গরমে চাদর পরে আছে কেন? এসব ভাবছি আর সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। ছবিগুলো তাড়াতাড়ি করে শাওন ও জাফর ভাইকে পাঠিয়ে দিলাম। একটা কামরা পার হতেই দেখি রনি নামের সেই কর্মীটি এক ব্যক্তির সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরদাম করছে। বুঝতে পারলাম যে অবৈধভাবে কিছু টাকার বিনিময়ে টিকিট ছাড়াই ভ্রমণ করছে ওই ব্যক্তি। তাৎক্ষণিক মুঠোফোন দিয়ে ছবি তুলতে গেলে রনি দেখতে পায় আমাকে। কাছে এসে বলে ভাই ছবি তুলেছেন? আমি বললাম যে না ভাই তুলিনাই।
- দেখি ফোনটা আপনার।
- আশ্চর্য, আপনাকে ফোন দেব কেন?
- কেন দেবেন না? আপনাকে অবশ্যই দিতে হবে।
- দেখুন আমি মিডিয়ার লোক। আপনি এমন আচরণ করতে পারেন না। না হয় ভালো হবে না কিন্তু।

মিডিয়ার কথা বলাতে থেমে যায় রনি। আরও অনেক্ষণ ধরে দেখতে চাইলেও দেখাইনি। তাকে আশ্বস্ত করি। এই ছবিগুলো খবরে বের হবে না। এরপর সে চলে যায়। যদিও আমি তার একটা ছবিও তুলতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর সিটে গিয়ে বসে পরি। এরপরই দেখি দুজন পুলিশ অফিসার ও শামিম নামের সেই কর্মীকে নিয়ে আসছে রনি। আমাকে কিছু না বললেও দূর থেকে আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে চিনিয়ে দিচ্ছে। এরপর সবাই চলে গেল। বিষয়টা সন্দেহজনক মনে করে জাফর ভাইকে একটা কল দিলাম। তিনি ধরলেন না। শাওনকে ফোন দিব, এমন সময়ে সেই অফিসার দুজন এসে বলে চলুন আমাদের সঙ্গে। বেশ বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করি কোথায় যাব? আর কেনই বা যাব? ‘সেটা গেলেই বুঝতে পারবেন’ বলে হাত ধরে একটা হ্যাচকা টান দিল। পাশের সিটে থাকা মুরব্বি বলে উঠলেন, ‘কি হয়েছে? ওকে জোড় করছেন কেন?’ পুলিশ অফিসার শুধু বলেন, ‘উনি আপনার কিছু হয়? যদি হয়, তাহলে আপনিও চলুন। আর নাহলে তাকে যেতে দিন।’ মুরব্বি আর কথা বাড়াল না।

কোনো উপায় না পেয়ে যেতে রাজি হলাম। সঙ্গে সঙ্গে মুঠোফোন পকেট থেকেই ৫ বার power botton টা চাপলাম। মোবাইলেই ইমার্জেন্সি কনটাক্ট নামের একটা ফিচার আছে। যেটাতে আমি শাওন এবং আব্বুর নাম্বার সেভ করে রেখেছি। ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠাতে বুঝলাম বার্তা পৌঁছেছে। বার্তাতে আমার সর্বশেষ লোকেশন পাঠিয়ে দেয় এবং জানিয়ে দেয় আমি বিপদে আছি।
তারা আমাকে নিয়ে গেল ট্রেনের মসজিদ অংশে। সেখানে আমার পরিচয় নিচ্ছিল। ঢাকা কেন গেছি, কোথায় যাচ্ছি, নাম, ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের পরে বলল, ‘আপনার মোবাইলটা দেখি’
- আপনি আমার ব্যক্তিগত মোবাইল দেখতে পারেন না।
- আপনি এখন একজন অপরাধী। তাই আপনার মোবাইল দেখার ক্ষমতা আমরা রাখি।
- আর আমার অপরাধটা কি?
- আপনি চলন্ত ট্রেনে আমাদের অনুমতি ব্যতীত ছবি নিয়েছেন। কারও অনুমতি ব্যতীত ছবি তোলা যে অপরাধ, সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।
- কারও অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত যে তাকে অপরাধী বলা যায় না, সেটাও নিশ্চয়ই আপনি জানেন!
- দেখুন আপনি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। একজন অন ডিউটি পুলিশ অফিসারের কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করছেন।

আমি আমার সিটে গিয়ে বসি। পাশের দম্পতি এতক্ষণে একত্রিত হয়েছে। জানতে চাইছেন যে কী হয়েছে? তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। ট্রেন আবারও চলতে শুরু করেছে। চারপাশ কেমন থমথমে লাগছে। ইচ্ছে করছে দ্রুত বাসায় যেতে। ফোনটা বের করলাম স্নিগ্ধার সঙ্গে একটু কথা বলব বলে।

আমি মুখ খুলতে যাব, এমন সময় আচমকা একগাল বসিয়ে দিল। স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফোনটা হাত থেকে কেড়ে নিল পাশের পুলিশটি। হাতের আঙ্গুল দিয়ে খুলে ফেলেন ফোন লক। গ্যালারিতে ঢুকেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বললেন ‘আপনি কি মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত?’ মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি প্রকাশ করলাম। তারা তাদের বড় অফিসারকে কল দিয়ে জানাল, একটা বড় ঝামেলা হয়ে গেছে মসজিদে আসতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই অফিসার এসে হাজির। উনি হলেন সেই হোটেলে বসে থাকা দ্বিতীয় পুলিশ অফিসার। এসেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী হয়েছে?’ অফিসার তার দিকে আমার ফোনটা বাড়িয়ে দিলে তিনি জুম করে করে ছবিগুলো দেখেন।
- কেন তুলেছেন ছবি? কী উদ্দেশ্য আপনার? আপনার সঙ্গে আর কে কে আছে ট্রেনে?
- আপনারা কোনো অপরাধ সংঘঠিত করতে যাচ্ছেন। স্পষ্ট বুঝতে পারছি। হতে পারে আপনারা অপরাধীদের রেহাই দিচ্ছেন।
- আপনি এসব বললেই তো আমরা সব মেনে নিতে পারি না। যা জানেন না, তা নিয়ে কথাও বলবেন না। ছবিগুলো ডিলিট করুন দ্রুত!
- ছবি কেন ডিলিট করব?
এই প্রশ্ন করা মাত্রই উনি আবারও হাত তুলতে চাইলেন। কিন্তু ট্রেন এসে থামল টাঙ্গাইল স্টেশনে। লোকজন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় তারা আর কিছুই বলল না। উনি ধীরে ধীরে সব ছবি ডিলিট করলেন। রিসাইকেল বিন থেকে সরিয়ে নিলেন ছবিগুলো। আমাকে বললেন ‘কাউকে পাঠিয়েছেন?’
- জ্বী! আমার এক বন্ধুকে পাঠিয়েছি। দিন ডিলিট করে দিচ্ছি।
ফোনটা আমার হাতে দিল। ট্রেন ছেড়ে দিল বুঝলাম। ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলক করে খুব দ্রুত হোয়াটসঅ্যাপ থেকে শাওনের কনভার্সেসন থেকে ছবিগুলো ডিলিট ফর মি করে দিয়েছি। এত দ্রুত সব করেছি যে তারা বুঝতেই পারেনি কি হলো। তাদের কাছে ক্ষমা চাইলাম বারবার। বললাম এমন হবে না আর কখনো। ওনারা আমার ড্রাইভ, টেলিগ্রামসহ সব মাধ্যম ভালোভাবে চেক করে ধমকের সুরে বলে গেলেন যাতে আর কোনো দিন এমন কাজ না করি।

আমি আমার সিটে গিয়ে বসি। পাশের দম্পতি এতক্ষণে একত্রিত হয়েছে। জানতে চাইছেন যে কী হয়েছে? তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। ট্রেন আবারও চলতে শুরু করেছে। চারপাশ কেমন থমথমে লাগছে। ইচ্ছে করছে দ্রুত বাসায় যেতে। ফোনটা বের করলাম স্নিগ্ধার সঙ্গে একটু কথা বলব বলে। হঠাৎ মনে হলো ছবিগুলো তো জাফর ভাইকেও দিয়েছি। দ্রুত জাফর ভাইয়ের নাম্বারটা আর্কাইভে পাঠিয়ে দিলাম। বলা যায় না বিপদ আরও হতে পারে। জাফর ভাইকে ফোন দিলাম; ধরল না। এদিকে শাওন আর আব্বুর নাম্বারে যে ইমার্জেন্সি ম্যাসেজটা গেছে, তারা এখনো কোন রেসপন্স করেনি তা বুঝতে পারছিলাম না। বিষয়টা ঘোলাটে লাগছিল। স্নিগ্ধাকে ফোন দিতে যাব এমন সময়ে দেখি সেই অফিসার আর শামিম আমাকে ডাকতে এসেছে। বুঝতে বাকি রইল না যে, তারা আমাকে নিয়ে আরও কিছু করতে চাচ্ছে। আবারও ইমার্জেন্সি ম্যাসেজ পাঠালাম। এবার আমাকে খাবার ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে আছেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা ও ট্রেনের পরিচালক।
- আচ্ছা আপনি কি সাংবাদিক? কোন পত্রিকায় কাজ করেন? নাকি টিভি চ্যানেল?
- দেখুন আমি কোনো পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল কোনোটিতেই যুক্ত নই। আপনারা শুধু শুধু আমাকে হ্যারেজ করতে পারেন না। ইটস ক্রাইম। আমি তো আপনাদের কথানুসারে সব ছবি ডিলিট করে দিয়েছি। আমাকে যেতে দিন।
- নাহ নাহ! এত সহজে তো আপনাকে যেতে দেওয়া যাবে না। আপনি সব সত্য কথা বলুন, আপনাকে যেতে দিচ্ছি।
- আমি সব সত্যিই বলছি। আমি কোনো মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত নই। কে বলেছে আপনাকে আমি মিডিয়ার লোক?
- শামিম? উনি মিডিয়ার লোক না?
শামিম ফেলফেল করে তাকিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ স্যার, উনি নিজেই বলেছেন মিডিয়ার লোক।’ এবার একটু দম নিয়ে বসলাম। আমার দিকে সবাই আক্রমণাত্মক নেরের ন্যায় তাকিয়ে। এই বুঝি ছিড়ে খেয়ে ফেলবে। কেউ কিছুই বলছে না আর। শুধু তাকিয়ে আছে। ট্রেন থামল বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনে। পুলিশের কর্মকর্তা বললেন, ‘নদীতে ফেলে দেওয়া যায়। এই গহিন রাতে কাকপক্ষিও টের পাবে না। রিপোর্ট হবে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা।’

আরও পড়ুন

আমি আর কিছু বলতে পারছিলাম না। ট্রেন ধীরপায়ে এগিয়ে চলল যমুনার বুকে। এদিকে মাঝেমধ্যেই হুংকার দিয়ে উঠছে পুলিশের সদস্যরা। হুংকারে কাজ না হলে শুরু করে আঘাত করা। আমি তাদের আপ্রাণ চেষ্টা করছি বোঝাতে যে আমি কোনো সাংবাদিক নই। তারা আমার ফোনটা হাতে নিয়ে রেখে দেয়। বলে দেখি তুই বাসায় গিয়ে পৌঁছাতে পারিস কিনা। আঘাত করার একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পরি। সজাগ হলে দেখি ট্রেন বগুড়ায় থেমে আছে, বাইরে কিছু একটা গোলযোগ শুনতে পাই। পায়ে অতিরিক্ত আঘাতের কারণে উঠে দাঁড়াতে পারছি না। ভোরের আলো ততক্ষণে ফুটতে শুরু করেছে। আবছা আলোয় দেখতে পাচ্ছি আমার হোস্টেলের শতাধিক শিক্ষার্থী, শাওন এবং জাফর ভাই পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে আছেন। খোঁড়াতে খোঁড়াতে দরজায় গিয়ে দাঁড়াই। আমাকে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে এসে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে ধরে এবং সিট থেকে আমার ব্যাগগুলো নিয়ে আসে। চোখ দুটো আবারও ঝাপসা হয়ে এল। ঝাপসা চোখে দেখতে পেলাম জাফর ভাই হাসছেন আর আঙ্গুল তুলে পুলিশদের দিকে ইশারা করছেন। জাফর ভাইয়ের এই হাসিটা আমি চিনি।

সেদিন ভোরের আর কোনো কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরে তখন একটা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারত। পাশে শাওন আর আব্বু বসে আছে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কিসব বলছে আর বাতাসে বিষ ঢালছেন জাফর ভাই। আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখেই রুমে এসে সবাইকে বের করে দিলেন। ইশারা করাতে শাওনকে রাখলেন তিনি।
- এখন বলতো কী হইছে রাতে?
ভাইয়াকে বিস্তারিত সব বললাম। জিজ্ঞেস করলাম তোমরা কীভাবে জানলা? শাওন উত্তর দিল, ‘তোর ম্যাসেজটা আমি রাত দুইটার পর দেখি। আমি আর একটুও দেরি না করে জাফর ভাইর বাসায় চলে যাই। এত রাতে যে ওনাকে ফোনে পাওয়া যাবে না তা জানতাম। সেখানে গিয়ে ম্যাসেজ দেখিয়ে বুঝালাম যে তুই হয়তো অনেক বিপদে। স্টেশনের দেওয়া ছবিটা দেখে জাফর ভাই বললেন সেটা আকরামুল নামের একজন জঙ্গি। শোলাকিয়ার কথা মনে আছে?’ জাফর ভাই শাওনকে ইশারায় থামিয়ে দিলেন। আমাকে বললেন, ‘তুই বিশ্রাম নে। এর শেষ দেখে ছড়ব। আমার ছেলেদের গায়ে হাত দেয়া। ব্যাটাদের বড্ড পাখনা গজিয়েছে।’ ভাইয়া কথাগুলো বলতে বলতে বের হয়ে চলে গেলেন।

বাইরে থেকে আব্বু আসলেন। তিনিও অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলেন। তাকে কিছু বলার সাহস পাইনি। জানতে চাইলাম আম্মু কোথায়?
- বাসায় আছে। আমি বলিনি কিছুই। বললে দুশ্চিন্তা করবে। তুই বিশ্রাম কর। আমি জাফরের সঙ্গে কথা বলে আসি। শাওন ওর সঙ্গে থাকিও বাবা।
বাবা হয়ত চোখের পানি লুকাতে চাচ্ছিলেন। একমাত্র সন্তানের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না। আব্বু বেশ ভালোই করেছেন আম্মুকে না বলে। তবু আম্মুকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। শাওনকে বললাম, তুই আবার স্নিগ্ধাকে কিছু বলিসনি তো?
- না রে! অত রাতে তো কিছু বলা যাবে না। আর সকালের ট্রেনে ও বাসায় গেছে।
- বেশ ভালো করেছিস। আমার ফোনটা কই রে?
- তোর ফোনটা আমরা পেয়েছি। কিন্তু সেটা রিসেট দেওয়া ছিল। হ্যাক টুল ব্যবহার করে রিসেট দেওয়া হইছে।
- তুই কি করে বুঝলি?
- এর আগে গুলিস্তানে আমার ফোনটা রিসেট করার সময় ডিসপ্লেতে এমন একটা জাপানিজ লেখা উঠেছিল। জানি না কি লেখা বা কেনোই লেখা ছিল। একই ধরনের জিনিস তোর ফোনে পেয়েছি।

একদিন পর জানতে পারি সেদিন দায়িত্বরত সবাইকে র‍্যাব আটক করেছে। পুলিশ আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দেশে গোলযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শোলাকিয়া ঈদগায়ে বোমা হামলাকারীদের জায়গায় জায়গায় ছেড়ে দেয়। তাদের পরিকল্পনা ছিল দেশের বড় বড় কিছু জায়গায় আবারও হামলা করার। ২৫ জন পুলিশ অফিসার এসব কাজে যুক্ত ছিল; যারা কয়েকটি জঙ্গি সংস্থার সঙ্গে এক হয়ে দেশের এমন ক্ষতি করতে চাচ্ছিল। আমার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী গেলেও এর ফলস্বরূপ যে এত বড় একটা জঙ্গি দল ধরা পরেছে, তা ভেবে আনন্দ পাচ্ছি।

তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা