থ্রিলার ও ফ্যান্টাসিভিত্তিক উপন্যাস পড়া ছোটবেলা থেকে অভ্যাস। এ অভ্যাস একটা সময় নেশায় পরিণত হয়ে যায়। যতগুলো বই সংগ্রহে আছে, বেশির ভাগই থ্রিলারভিত্তিক। আমার আজকের বই আলোচনায় থাকছে তেমনি একধরনের বই। শরীফুল হাসানের ‘সাম্ভালা’ সিরিজ: মিথ, রহস্য ও আধ্যাত্মিকতার এক অসাধারণ মেলবন্ধন।
শরীফুল হাসানের ‘সাম্ভালা’ সিরিজটি বাংলা ফ্যান্টাসি ও থ্রিলার সাহিত্যের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সিরিজটির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বৌদ্ধধর্মের রহস্যময় রাজ্য শম্ভলার মিথ। এই রাজ্যের অস্তিত্ব, তার লুকানো শক্তি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত নানা ধরনের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বিশ্বাস নিয়ে পুরো সিরিজের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বর্তমানের বাস্তব ঘটনা ও প্রাচীন মিথকে এমনভাবে যুক্ত করেছেন যে প্রতিটি অধ্যায়ে পাঠক এক নতুন রহস্যের মুখোমুখি হবেন।
‘সাম্ভালা’ সিরিজের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর প্লট। এটি সাধারণ ফ্যান্টাসি থ্রিলারের মতো নয়। গল্পের প্রতিটি স্তরে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রহস্য, যা একটি অন্যটির সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত থাকে যে শেষ পর্যন্ত পাঠককে অতল সাগরের মধ্যে ভাবিয়ে তুলবে। প্রথম বই ‘সাম্ভালা’য় কাহিনির সূচনা হয় শম্ভলার খোঁজে একদল মানুষের ভয়াবহ যাত্রা দিয়ে, যেখানে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় এক বিশাল ষড়যন্ত্র। পরের বইগুলোতে কাহিনির পরিধি আরও বাড়ে, যেখানে চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান ও ঐতিহাসিক সত্যের অনুসন্ধান গুরুত্ব পায়।
লেখকের গভীর গবেষণা এ সিরিজকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। শম্ভলার মিথ, তিব্বতের ইতিহাস, বৌদ্ধধর্ম ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখকের জ্ঞান প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি কেবল গল্পের জন্য তথ্য ব্যবহার করেননি, বরং তা কাহিনির সঙ্গে এমনভাবে মিশিয়ে দিয়েছেন যে প্রতিটি ঘটনা খুবই বাস্তবসম্মত মনে হয়।
সিরিজের চরিত্রগুলো বেশ প্রাণবন্ত ও জটিল। তারা কেবল কাহিনির অংশ নয়, বরং তাদের নিজস্ব একটা জীবন আছে। কাহিনির সঙ্গে সঙ্গে তারা পরিবর্তিত হয়, তাদের বিশ্বাস, ভয় ও লক্ষ্যগুলো পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রধান চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো লেখক খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কাহিনির প্রত্যেক চরিত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যাঁরা ফ্যান্টাসি, থ্রিলার ও ঐতিহাসিক গল্পের সংমিশ্রণ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য ‘সাম্ভালা’ সিরিজ একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি কেবল বিনোদন দেয় না, বরং এমন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে শেখায়, যা সচরাচর বাংলা সাহিত্যে দেখা যায় না। এটি একাধারে অ্যাডভেঞ্চার ও একটি গভীর আধ্যাত্মিক যাত্রা। সব মিলিয়ে ‘সাম্ভালা’ সিরিজটি বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ সংযোজন, যা একই সঙ্গে নতুন পাঠকদের আকৃষ্ট করবে এবং পুরোনো পাঠকদেরও সন্তুষ্ট করবে।
সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা