চিঠির আড়ালে প্রেম ও অপূর্ণতার উপাখ্যান ‘সবিনয় নিবেদন’

বুদ্ধদেব গুহর ‘সবিনয় নিবেদন’সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যে প্রেম নিয়ে অসংখ্য উপন্যাস লেখা হয়েছে। কিন্তু চিঠি বিনিময়ের ভেতর দিয়ে প্রেম, বিচ্ছেদ ও জীবনের অন্তর্গত টানাপোড়েনকে যে নান্দনিকতায় ধরা যায়, বুদ্ধদেব গুহর ‘সবিনয় নিবেদন’ তারই এক অনন্য উদাহরণ। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ১৫৫ পৃষ্ঠার এই বই শুধু একটি রোমান্টিক কাহিনি নয়, বরং মানব-সম্পর্কের জটিলতা ও অপূর্ণতার এক গভীর দলিল।

উপন্যাসের শুরুতেই পাঠক পরিচিত হয় রাজর্ষি বসুর সঙ্গে। বনপ্রেমী, নীতিমান, অথচ ব্যর্থ দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি বহন করা এই মানুষটির জীবনে প্রবেশ করে ঋতি রায়ের ধন্যবাদজ্ঞাপক একটি চিঠি। সেই চিঠিই হয়ে ওঠে উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু। ধীরে ধীরে রাজর্ষি ও ঋতির মধ্যে গড়ে ওঠে এক অদ্ভুত সম্পর্ক—যেখানে বন্ধুত্ব, মায়া, আকর্ষণ, এমনকি প্রেমও মিশে থাকে; কিন্তু সবকিছুই গোপন থাকে চিঠির পাতার আড়ালে।

চরিত্র নির্মাণের দিক থেকে রাজর্ষি ও ঋতির দ্বৈত সত্তা উপন্যাসের প্রধান শক্তি। রাজর্ষির অতীত—সাবেক স্ত্রী বনীকে ঘিরে দুঃখ ও নিঃসঙ্গতা—তার বর্তমান সম্পর্ককে বারবার টেনে ধরে। অন্যদিকে ঋতি, যে প্রেমে আন্তরিক হলেও সমাজ–বাস্তবতার বেড়াজালে আটকে যায়। তাদের এই টানাপোড়েনই কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেখানে সুখের প্রতিশ্রুতি নেই, আছে শুধু অপূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস।

আরও পড়ুন

লেখক বুদ্ধদেব গুহ তাঁর স্বভাবসুলভ নৈপুণ্যে উপন্যাসটিকে সাজিয়েছেন। প্রকৃতির প্রতি তাঁর অনুরাগ, বিশেষত বেতলার জঙ্গলের বর্ণনা, পাঠককে গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রাখে। তবে শুধু প্রকৃতি নয়—এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মানুষের অন্তর্জগৎ। চিঠির মাধ্যমে বলা ছোট স্বীকারোক্তি, দ্বিধা আর নীরবতার ভেতর দিয়েই তৈরি হয়েছে আবেগের স্রোত।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ‘সবিনয় নিবেদন’ কোনো প্রচলিত প্রেমের উপন্যাস নয়। এখানে নেই সুখী সমাপ্তি, নেই অতিনাটকীয় বাঁক। আছে কেবল জীবনের মতোই অপূর্ণ এক প্রেম, যা শেষ হলেও পাঠকের মনে রয়ে যায় দীর্ঘদিন।

সর্বোপরি বলা যায়, ‘সবিনয় নিবেদন’ হলো বাংলা সাহিত্যে প্রেম ও সম্পর্কের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের এক মর্মস্পর্শী দলিল। যারা চিঠির ভেতর দিয়ে আবেগ, নীরবতা আর অপূর্ণতার সৌন্দর্যকে অনুভব করতে চান, তাদের জন্য এই বই নিঃসন্দেহে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা