ছোটবেলা থেকেই থ্রিলার–নির্ভর বই পড়তে ও সিনেমা দেখতে ভালো লাগে। সেই ভালো লাগা থেকেই প্রায় চার বছর আগে নিক পিরোগের ‘থ্রি এএম’ সিরিজটি পড়ি। সিরিজটির পাঁচটি খণ্ড রয়েছে।
যে সময় বইটি পড়ি তখন ছিল পবিত্র রমজান মাস। তারাবির নামাজ শেষ করে শুয়ে পড়তাম বইটি নিয়ে। শুরু করার পর এতটাই আকর্ষণ করে যে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো সিরিজটি শেষ করি। প্রতিটি গল্পে রয়েছে নতুনত্ব। বইটি অনুবাদ করেছেন সালমান হক।
এই সিরিজের প্রধান চরিত্র হেনরি বিনস। হেনরি এক বিরল রোগে আক্রান্ত। যেই রোগের নামকরণ করা হয় তার নামেই। কারণ, পৃথিবীতে তারই প্রথম রোগটি ধরা পড়ে। সে প্রতিদিন মাত্র এক ঘণ্টা জেগে থাকতে পারে। এই সময়টা রাত তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত। বাকি ২৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটাতে হতো তাকে। গোসল করা, খাবার খাওয়া, শেয়ারবাজারের খবর নেওয়া—সবকিছুই তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে সেরে ফেলতে হয়।
কাহিনি জমজমাট হয়, যখন একদিন হেনরি জেগে থাকার সময় তার পাশের বাড়ি থেকে একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পায়। সে দেখে একজন লোক ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে এবং লোকটা আর কেউ নয়, স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট! পরের রাতে জেগে উঠে সে জানতে পারে যে মেয়েটি খুন হয়েছে। হেনরি ঠিক করে সে নিজে খুনের রহস্য উন্মোচন করবে। কিন্তু খুনিকে ধরার জন্য তার হাতে সময় থাকে প্রতিদিন রাতে মাত্র এক ঘণ্টা। এই সীমিত সময়ে নানা জটিলতার মাধ্যমে রহস্য উন্মোচন করতে সফল হয় সে।
উপন্যাসটি পড়ার সময় নিজেকে মূল চরিত্র হিসেবে কল্পনা করতে থাকি। পড়ার সময় হারিয়ে যেতাম কাহিনির মধ্যে। সিরিজের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর মৌলিক ও বুদ্ধিদীপ্ত প্লট। এমন একটি ধারণা বিশ্ব সাহিত্যে খুব কমই রয়েছে। লেখক দক্ষতার সঙ্গে একটি সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে গোয়েন্দা গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রতিটি খণ্ডে হেনরির বুদ্ধিমত্তা এবং তার অনন্য পরিস্থিতির ব্যবহার দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা দ্রুততার সঙ্গে ঘটে। কারণ, হেনরির হাতে সময় খুবই কম। ফলে পাঠকের মধ্যে একধরনের চাপা উত্তেজনা তৈরি করে। তার এক ঘণ্টার জীবনের নানা হাস্যরসাত্মক ঘটনা পাঠকের মুখে হাসি ফোটায়। রয়েছে প্রেম–ভালোবাসা ও পারিবারিক বিষয়।
যাঁরা থ্রিলারভিত্তিক উপন্যাস পড়তে পছন্দ করেন, তাঁরা বইটি পড়লে এক নতুন স্বাদ পাবেন বলে বিশ্বাস করি। এটি কেবল একটি রহস্য সমাধান করার গল্প নয়, বরং জীবন ও সময়কে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটি চমৎকার উদাহরণ। বাংলা সিনেমায় এই কাহিনির ওপর চলচ্চিত্র বানালে মন্দ হবে না।
সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা