নসিবের শেষ পৃষ্ঠা

অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

আবির হঠাৎ করেই একদিন সবকিছু বন্ধ করে দিল। পড়াশোনা, ব্যবসা, যোগাযোগ, স্বপ্ন দেখা—সবকিছু। অফিসের ফাইল, পুরোনো ডায়েরি, বইয়ের তাকে জমে থাকা ‘সাফল্যের পরিকল্পনা’—সব বস্তাবন্দী করে এককোণে রেখে দিল।

২৬ বছরের প্রচেষ্টা, ঘুমহীন রাত, অনবরত চেষ্টা—কিন্তু আজও হাতে কিছু নেই। একটা পুরোনো ভাঙা ভাড়া বাসা আর কয়েকটা ঋণের কিস্তি ছাড়া তার জীবনে কিছুই অবশিষ্ট নেই।

এক সন্ধ্যায় সে হাঁটতে হাঁটতে চলে এল পুরান ঢাকার এক গলি ধরে। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি পুরোনো বইয়ের দোকান। তাকে কেমন যেন টানল। দোকানে ঢুকতেই চোখে পড়ে এক বৃদ্ধ—চশমা ঠিক করতে করতে বই ঝাড়ছেন। আবির কৌতূহলী স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘সব বই বিক্রির জন্য?’
বৃদ্ধ হাসলেন, ‘সব বই বিক্রির, কিন্তু সব গল্প নয়। কিছু গল্প মানুষ কিনে, কিছু গল্প মানুষ রেখে যায়।’
আবির একটু হেসে বলল, ‘গল্প নিয়ে আর মাথা ঘামাই না। আমার জীবনের গল্পটাই তো কোনো পাঠক পছন্দ করল না।’
বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, বলো তো, তুমি কত বছর চেষ্টা করেছ?’
উত্তরে আবির বলল, ‘২৫-২৬ বছর।’
‘আর তাতে কী পেলে?’
‘শূন্য।’
বৃদ্ধ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, ‘তাহলে তুমি বলছ, এত বছরের চেষ্টা, পরিশ্রম, ব্যথা—সবই অর্থহীন ছিল?’

আরও পড়ুন

আবির কিছু বলতে পারেনি। শুধু চুপচাপ তাকিয়ে ছিল।
বৃদ্ধ একটা বই তুলে দিল তার হাতে। বইয়ের নাম ‘নসিবের শেষ পৃষ্ঠা’। আবির প্রশ্ন করল, ‘নসিবের শেষ পৃষ্ঠায় কী থাকে?’
বৃদ্ধ মৃদু হেসে বলল, ‘ঠিক তখনই জানা যায়, নসিব ছিল না, ছিল প্রতিটি পৃষ্ঠায় তোমার নিজের লেখা। তুমি হয়তো সফলতা পাওনি, কিন্তু তুমি চেষ্টা করেছিলে। সেই চেষ্টার মধ্যেই লুকানো থাকে এক অদৃশ্য জয়।’

আবির বইটা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে। প্রথম পৃষ্ঠায় একটা লাইন লেখা—‘দিন শেষে কিছু না পেলে, ভেবো না জীবন বৃথা গেল। নসিব কেবল শেষ পাতায় সত্যি হয়; তার আগে সবটাই তোমার কলমের খেলা।’
আবির প্রথমবারের মতো হাল না ছেড়ে ফিরে তাকাল নিজের জীবনের দিকে। সবকিছু যেন আবার শুরু করা যায়—একটা নতুন গল্প, নসিবের শেষ পাতায় নতুন কিছু লেখার জন্য।

জীবনে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব সব সময় সংখ্যায় মাপা যায় না। প্রয়াস, মানসিক শক্তি, উঠে দাঁড়ানোর ইচ্ছা—এসবও হয়তো ‘নসিব’ বদলানোর রং। আর গল্প?
সেটা তখনই শেষ হয়, যখন তুমি লেখা থামিয়ে দাও।

আহ্বায়ক, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা