কিডন্যাপ (দ্বিতীয় পর্ব)

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বিন্তাকে বাসায় রেখে আসার পর থেকে তাশহানের শুধু বিন্তার কথাই মনে পড়ছে। কেন সে প্রতিমুহূর্তে বিন্তার কথা ভাবছে, তা জানে না। তাশহান শুধু এটা জানে, বিন্তাকে নিয়ে ভাবতে তার ভালো লাগছে। অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে তার মনের ভেতর। এমনটা আগে কখনো হয়নি। অপর দিকে বিন্তা ভাবছে তাশহানকে নিয়ে—
‘ছেলেটা ভালো, আমার গায়ে স্পর্শ পর্যন্ত করেনি; সব ইচ্ছা পূরণ করেছে, আমার পাগলামিগুলো যত্ন করে সহ্য করেছে। ধুর! কেন যে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেল, ভালোই তো ছিলাম। গাধা একটা!’
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল বিন্তার।
‘আচ্ছা আমার সঙ্গে আমার মনটাকেও কিডন্যাপ করে ফেলেনি তো লোকটা? ধুর, এগুলো কী ভাবছি! ইদানীং বেশিই ভাবছি লোকটাকে নিয়ে। আচ্ছা, বেশি ভাবলে নাকি মানুষ প্রেমে পড়ে যায়; তাহলে কি আমিও...?’
‘উফ না না, একটা কিডন্যাপারের প্রেমে পড়ব না!’
‘কিডন্যাপার হলেও ছেলেটা অনেক ভালো।’

আপনমনে এসব ভাবছে আর মুচকি মুচকি হেসে উঠছে বিন্তা। যে বিন্তা হইহুল্লোড়, কান্নাকাটি করত বাচ্চাদের মতো, আজ সে সারা দিন শুধু তাশহানকে নিয়ে ব্যস্ত। ওদিকে, তাশহান অনেক বদলে গেছে। কাজে মন বসে না। প্রতিদিনের মতো আজও বিন্তার খোঁজে এসেছে লেকের পাশে। সেও জোছনায় ভিজতে শিখেছে। কাঁধে হাতের স্পর্শে ধ্যান ভাঙে ওর। বিন্তা এসেছে ভেবে হাসিমুখে পেছনে তাকায় তাশহান। কিন্তু না, হতাশ হতে হলো। আরাফ দাঁড়িয়ে আছে।
‘কী রে তোর কোনো খোঁজখবর নেই? ফোন করলে ধরিস না কেন? বিন্তা কই?’
‘বিন্তাকে ওর বাসায় রেখে এসেছি।’
‘কেন?’
‘তুই মিথ্যা বলেছিস। আর মিথ্যা আমি একদম পছন্দ করি না।’
‘হা হা হা, কাজটা তুই ঠিক করলি না। ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস!’

আরও পড়ুন

আরাফের পেছন থেকে কয়েকজন বের হয়ে আসে। ১৫ জনের দলটা মেরে রক্তাক্ত করে ফেলে তাশহানকে। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে তাশহান। পাশে কারও কান্নার শব্দ শুনতে পায়। তাকিয়ে দেখে, একটা মেয়ে বেডের পাশে মাথা নিচু করে কাঁদছে।
‘কে আপনি? কাঁদছেন কেন?’
(মেয়েটি মুখ তুলে তাকায়)
‘বিন্তা তুমি!!’
‘যাক, আপনার জ্ঞান ফিরেছে অবশেষে।’ এই বলে চিকিৎসকের খোঁজে গেল সে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানালেন যে ভয়ের কিছু নেই। কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে হবে।
তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিন্তা তাশহানের পাশে গিয়ে বসল।
‘জানেন কতটা ভয় পেয়েছিলাম? কেন মারামারি করতে গেলেন?’
‘কেন ভয় পেয়েছিলে?’
‘কারণ, আমি আপনাকে…।’
‘বিন্তা, তুমি চলে যাও।’
‘চলে গেলে আপনি খুশি হবেন?’
‘হুম, যাও।’
‘ঠিক আছে, যাচ্ছি। আর কোনো দিন আপনার সামনে আসব না।’

তাশহান মুখ ঘুরিয়ে নেয়। চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি আড়ালে গড়িয়ে পড়ে। সে তার অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে বিন্তাকে জড়াতে চায় না।
(চলবে...)

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা