টাইগারদের প্রথম এশিয়া কাপ জয়—স্বপ্ন নাকি বাস্তবের পথে
এশিয়া কাপ মানেই আবেগ, স্বপ্নের লড়াই। ২০১২, ২০১৬ আর ২০১৮—তিনবার ফাইনালে গিয়েও ট্রফি স্পর্শ করতে না পারা বাংলাদেশের ক্রিকেট এখনো বুকের ভেতর আক্ষেপ হয়ে আছে। তবে এবারের দল, তাদের প্রস্তুতি এবং মানসিক দৃঢ়তা আলাদা বলেই মনে হচ্ছে। তাই প্রশ্নটা উঠছেই—এবার কি ভাঙবে দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা?
প্রস্তুতির দিক থেকে বাংলাদেশ দল এবার অনেক বেশি সংগঠিত। সিলেটে স্কিল ক্যাম্প, ঢাকায় ফিটনেস ক্যাম্প—সব মিলিয়ে খেলোয়াড়েরা আগের চেয়ে বেশি তৈরি। শুধু টেকনিক নয়, মানসিক দৃঢ়তাকেও বড় করে দেখা হচ্ছে। মাঠে নামার আগে সবাই জানেন, এবার কোনো ফাঁক রাখা যাবে না।
ব্যাটিং অর্ডারেও কিছুটা স্বস্তি। ওপেনিং জুটি তানজিদ হাসান তামিম আর পারভেজ হোসেন ইমন সাম্প্রতিক সময়ে আক্রমণাত্মক শুরু এনে দিচ্ছেন। তাঁদের হাত ধরে যদি পাওয়ারপ্লেতে ভালো রান উঠে আসে, তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। ওয়ান ডাউনে লিটন দাস—অভিজ্ঞতা আর ক্লাস মিশিয়ে খেললে তিনিই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ইনিংস খেলতে পারবেন। মিডল অর্ডারে ভরসা তৌহিদ হৃদয়, সাইফ হাসান আর শামীম পাটোয়ারীর ওপর। তাঁদের একজন বা দুজন যদি দায়িত্ব নিয়ে খেলেন, তবে লোয়ার অর্ডারের ওপর চাপ কমবে। শেষ দিকে জাকের আলী, শেখ মাহাদী বা রিশাদ, সাইফুদ্দিনরা দ্রুত রান তুলতে পারলে স্কোরবোর্ডে ১৮০ থেকে ২০০+ রান তোলা কঠিন কিছু হবে না।
বল হাতে বাংলাদেশ অনেক বেশি সমৃদ্ধ। পেস আক্রমণে মুস্তাফিজুর রহমানের কাটার, তাসকিন আহমেদের গতি ও সুইং আর শরিফুল ইসলামের বাউন্স প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে যথেষ্ট। ডেথ ওভারে তাসকিন আর মুস্তাফিজ যদি নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেন, তবে বড় রান তুলতে পারবে না কোনো দলই। অন্যদিকে স্পিন আক্রমণে রিশাদ হোসাইন, নাসুম আহমেদ ও শেখ মাহাদী থাকলে প্রতিপক্ষের মিডল অর্ডার ভেঙে পড়তে বাধ্য। আবুধাবির উইকেটে এই স্পিন আক্রমণই হতে পারে বাংলাদেশের গোপন অস্ত্র।
সবকিছুর বড় পরীক্ষা হবে মানসিক দৃঢ়তা। অতীতে বারবার শেষ মুহূর্তে ম্যাচ হেরে যাওয়াই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এবার সেই ইতিহাস বদলাতে হবে। ক্রিকেট কেবল স্কিলের খেলা নয়, এটা মানসিক লড়াইও। খেলোয়াড়েরা যদি চাপ সামলে জয়ের ক্ষুধা নিয়ে মাঠে নামতে পারেন, তবে এশিয়া কাপ ২০২৫–এ ফাইনাল জেতার স্বপ্ন আর অসম্ভব হবে না।
ক্রিকেট শুধু পরিসংখ্যানের খেলা নয়। এখানে আবেগ আছে, আত্মবিশ্বাস আছে, আছে কোটি সমর্থকের প্রার্থনা। ১১ জন যদি একসঙ্গে খেলতে পারেন, ব্যাটিং–বোলিংয়ে সমানভাবে ছন্দে থাকেন, তবে ইতিহাস রচনা করা সম্ভব।
এশিয়া কাপ ২০২৫—এই কি তবে বাংলাদেশের শিরোপা ছোঁয়ার বছর? সময়ই দেবে উত্তর। তবে স্বপ্ন দেখা তো আর অপরাধ নয়। কোটি হৃদয়ের মতো আমরাও অপেক্ষায় টাইগারদের হাতে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ট্রফি দেখার।
লেখক: কর্মকর্তা, ভূমি মন্ত্রণালয়।