২২ বছরেই ষষ্ঠ গ্র্যান্ড স্লাম, নতুন যুগের টেনিসে ইতিহাস

ইউএস ওপেনের ট্রফি হাতে কার্লোস আলকারাজএএফপি

মাত্র ২২ বছর বয়সেই ষষ্ঠ গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিতে টেনিস বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সেই সঙ্গে ৬৫ সপ্তাহ পর ইতালিয়ান ইয়ানিক সিনারকে হটিয়ে পুরুষ একক র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে ফিরে এসেছেন তিনি। গত ৭ সেপ্টেম্বর ইউএস ওপেন জিতে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন আলকারাজ।

সাম্প্রতিক সময়ে ইয়ানিক সিনারের সঙ্গে লড়াই বেশ জমে উঠেছে আলকারাজের। গত দুই বছরে ছেলেদের আটটি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা দুজনে সমান চারটি করে জিতে নিয়েছেন। দর্শকেরাও তাঁদের লড়াই বেশ উপভোগ করছেন। কেউ কেউ তাঁদের বলছেন আধুনিক যুগের ‘নাদাল-ফেদেরার’।

ইউএস ওপেন ফাইনালে সিনারকে পরাজিত করতে ২ ঘণ্টা ৪২ মিনিট সময় লেগেছে আলকারাজের। এই স্প্যানিশ তারকার মতে, এই জয়ের পেছনে কয়েক সপ্তাহের পরিশ্রমের ফল রয়েছে। গত জুলাইয়ে উইম্বলডনের ফাইনালে সিনারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর তিনি ও তাঁর কোচরা মিলে সেই ম্যাচের ভিডিও বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে ইউএস ওপেন ফাইনাল শেষে কার্লোস আলকারাজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি শুধু ভাবছিলাম, যদি ইয়ানিককে হারাতে চাই, তাহলে আমার কোন নির্দিষ্ট বিষয়গুলো উন্নত করতে হবে। তাই আমার খেলার কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে অনুশীলন করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছিল, যদি ইয়ানিককে হারাতে চাই, আমাকে এগুলো উন্নত করতে হবে।’

বর্তমানে টেনিস খেলছেন, এমন পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে ছয়টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জিতেছেন কার্লোস আলকারাজ। নোভাক জকোভিচের ২৪টি জয়ের সঙ্গে তুলনায় কম মনে হলেও, এ বয়সে এটি অসাধারণ অর্জন। এর আগে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে রোপ্যপদক জয় করেন তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ পুরুষ একক খেলোয়াড় হিসেবে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে পৌঁছেছিলেন। এখন পর্যন্ত আলকারাজ ২৩টি এটিপি ট্যুর শিরোপা জয় এবং ৫৩ মিলিয়নের বেশি ডলার অর্থ পুরস্কার অর্জন করেছেন।

খেলা শুরুর আগে দুই ফাইনালিস্ট কার্লোস আলকারাজ (বাঁয়ে) ও ইয়ানিক সিনার (ডানে)
এএফপি

২০০৩ সালের ৫ মে, স্পেনের মুরসিয়া শহরের কাছাকাছি জনবহুল গ্রাম এল পালমারে জন্ম তাঁর। পুরো নাম কার্লোস আলকারাজ গারফিয়া। বাবা কার্লোস আলকারাজ গঞ্জালেস, এল পালমারের এক ক্লাবে টেনিস পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। মা ভার্জিনিয়া গারফিয়া এসকানডন। চার ভাইয়ের মধ্যে আলকারাজ দ্বিতীয়। বড় ভাই আলভারো এবং ছোট ভাই দুজন হলো সার্হিও ও জেইমি।

পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হলেও এখনো পরিবারের সঙ্গেই থাকেন এই স্প্যানিশ তারকা। ২০২৪ সালের জুনে দ্য সানডে টাইমসকে তিনি জানান, টেনিস টুর্নামেন্টে না থাকলে তিনি এখনো এল পালমারে মা-বাবা এবং তিন ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করেন। আলকারাজ বলেন, ‘তাঁদের কাছে আমি বড় কোনো টেনিস তারকা নই, শুধু সাধারণ একজন ছেলে।’

নিজের পরিবারকে এখনো ‘মধ্যবিত্ত’ হিসেবেই বর্ণনা করতে চান এই তারকা। জানান, শৈশবে খুব বেশি বিলাসিতা ছিল না। মাত্র চার বছর বয়সে মুরসিয়ার রিয়াল সোস্যেদাদ ক্লাব ডে ক্যাম্পোরে বাবার টেনিস একাডেমিতে খেলা শুরু করেন। সেই সময় র‌্যাকেট ধরতে বা বল মারতেও পারতেন না। কোচ ও যুব প্রোগ্রামের সঙ্গে অনুশীলন চালিয়ে যান এবং দ্রুত উন্নতি করেন। টেনিসে তাঁর আদর্শ ২২ বারের গ্র্যান্ড স্লামজয়ী রাফায়েল নাদাল। শৈশব থেকেই তাঁকে অনুসরণ করেন তিনি।