ফুটবল কেবল একটি খেলা নয়, এটি এক আবেগের স্রোত, যা কোটি হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। সেই আবেগের ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তি লিওনেল মেসি। মাঠের প্রতিটি পদক্ষেপ, বলের সঙ্গে বাঁ পায়ের নাচানো কৌশল, চোখের চাহনি—সবই ফুটবলকে একটি জীবন্ত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যায়।
ছোট্ট দৈহিক গড়নে সেই ছেলে, যিনি একসময় আর্জেন্টিনার রাস্তার ফুটবল দিয়েই বেড়ে উঠেছিল, গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাঁ-পায়ের জাদুতে ফুটবল দুনিয়াকে শাসন করে চলেছেন। ২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকে, তিনি একের পর এক ইতিহাস গড়ে চলেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে ১১২টি গোল, অসংখ্য অ্যাসিস্ট; বার্সেলোনার হয়ে চিরস্মরণীয় শিরোপাগুলো—সবই ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা।
তবে মেসির জীবন ও ক্যারিয়ার শুধু জয়ের গল্পের নয়। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে বিপর্যয়, ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকায় পরাজয়—এসব তাঁকে কেবল অন্যের চোখে নয়, নিজের চোখেও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বার্সেলোনার হয়ে অসংখ্য শিরোপা জিতলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার ব্যর্থতার ব্যথা তাঁকে নাজুক করেছিল। এরপর ২০১৬ সালে অবসরের ঘোষণা, কিছুদিন পর চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন; দুঃখ, হতাশা ও সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া—এসবই প্রমাণ করে তাঁর অদম্য স্পৃহা এবং ফুটবলের প্রতি গভীর ভালোবাসা।
মেসির ধৈর্য ও নিষ্ঠার প্রতিফলন দেখা যায় ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে। এরপরের বছর বিশ্বকাপ শিরোপা, ফিনালিসিমার পর আবারও কোপা আমেরিকা জয়। প্রতিটি অর্জন শুধু স্বর্ণপদক নয়, এটি মানবিক সংগ্রামের গল্প, যা ফুটবলপ্রেমীদের মনে অনুপ্রেরণা জাগায়। মাঠে তাঁর প্রতিটি জয়-পরাজয় আমাদের শেখায় পরিশ্রম, ধৈর্য ও ভালোবাসা ছাড়া সাফল্য অসম্ভব।
এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গুঞ্জন উঠেছে, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর বুয়েনস এইরেসের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার হয়ে দেশের মাটিতে শেষ ম্যাচ খেলতে পারেন মেসি। যদি এই ম্যাচ সত্যিই তাঁর ঘরের মাঠে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়, তাহলে এটি কেবল এক খেলোয়াড়ের বিদায় নয়; অনেকের রাত জেগে ম্যাচ দেখার আনন্দ, হারের বেদনা, উল্লাস—মিশ্র অনুভবের একটি যুগের সমাপ্তি।
যদিও এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা নেই। কিছু সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে এটি হতে পারে মনুমেন্টালে তাঁর শেষ ‘অফিশিয়াল’ ম্যাচ। তবে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেন, ‘সময় মতো মেসি নিজেই সিদ্ধান্ত নিবেন।’
মাঠে মেসির প্রতিটি জয়-পরাজয় আমাদের শেখায়—পরিশ্রম, ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসা ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়। বিদায়ের দিন যতই কাছে আসুক, মেসি চিরকাল আমাদের হৃদয়ের কিংবদন্তি, এক নিঃশেষ অনুপ্রেরণা এবং সেই আবেগের স্রোতের অমোঘ প্রতীক।
বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা