মেসির শৈশবের এই তথ্যগুলো আপনার অজানা

শৈশবে লিওনেল আন্দ্রেস মেসিছবি: সংগৃহীত

আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্ম লিওনেল আন্দ্রেস মেসির। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন বাবা হোর্হে মেসি ও মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনির ঘর আলোকিত করেন তিনি। মেসিরা তিন ভাই ও এক বোন। সবার বড় দুই ভাই রদ্রিগো মেসি ও মাতিয়াস মেসি। সবার ছোট বোন, নাম মারিয়া সোল মেসি।

ফুটবলে হাতেখড়ি
মাত্র ৪ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব আবানদেরাদো গ্র্যান্দোলিতে খেলা শুরু করেন মেসি। নানি সেলিয়া অলিভেইরা কুচ্চিত্তিনির উৎসাহে এত অল্প বয়সে ফুটবল খেলা শুরু। এখনো গোল করার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত দিয়ে ইশারা করে মেসি যে উদ্‌যাপন করেন, সেটা মূলত তাঁর নানিকে উৎসর্গ করা। ফুটবলে আসার পেছনে নানির অবদানকে স্মরণ করে টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি বলেছিলেন, ‘প্রথম দিন ওই ক্লাবে গিয়ে আমার নানি ক্লাবের লোকদের বলছিল, “তাকে (মেসি) মাঠে নামাও।” তারা বলে, “না, না, সে অনেক ছোট।” তখন নানি বলেন, “তাকে নামাও। সে খেলা জেতাবে।” তারপর দুই পক্ষের মধ্যে কিছু কথা আদান–প্রদান হয় এবং শেষে আমাকে মাঠে নামায়। ওই দিন আমি দুটি গোল করি।’

ছবিটি ১৯৯৪ সালের। হলুদ রঙের বৃত্ত চিহ্নিত ছেলেটি মেসি।
ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৪ সালে আর্জেন্টাইন প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগের ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের যুব টিমে খেলা শুরু করেন মেসি। ক্লাবটি তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। সেখানে ছয় বছর খেলেন এই বিস্ময়বালক। এ সময়ের মধ্যে ১৭৬ ম্যাচে গোল করেন ২৩৪টি। প্রতি ম্যাচে গড় গোলসংখ্যা ১.৩৩টি। যা এই বয়সী একজন খেলোয়াড়ের জন্য অবিশ্বাস্য গড়!

শারীরিক অসুস্থতা
মেসির বয়স যখন ১০, তখন থেকেই নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের চিকিৎসক খেয়াল করেন যে বয়স অনুযায়ী মেসির উচ্চতা অনেক কম এবং সমবয়সী অন্যদের মতো তাঁর উচ্চতা বাড়ছে না। তাঁর শরীরে গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি ধরা পড়ে; যা শারীরিক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলছিল এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য হুমকিস্বরূপ।

যখন বয়স ১১, তখন উচ্চতা ছিল মাত্র ১.৩ মিটার। এই উচ্চতা সাধারণত একজন ৮-৯ বছর বয়সী শিশুর স্বাভাবিক গড় উচ্চতা। সাধারণ এমন অবস্থার জন্য শৈশবেই অনেক খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল, মেসির এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই। এই ঘাটতির মূল কারণ ছিল হাইপোফাইসিস, যা পিটুইটারি গ্রন্থির একটি ত্রুটি। এই গ্রন্থি হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। একটি পরীক্ষাও চালানো হয়েছিল এটা দেখার জন্য যে যদি বিশেষ চিকিৎসা করানো হয়, তাহলে তাঁর পেশি ও অস্থির বৃদ্ধি হবে কি না।

নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাবের টিমে মেসি (সামনের সারিতে বল হাতে, মাঝে)
ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসা ও বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি
চিকিৎসক জানান, ছোট্ট মেসির চিকিৎসার জন্য কেবল একটাই উপায় আছে। কিন্তু এটা অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা। প্রথম কয়েক মাস চিকিৎসার অর্থ বহন করে পরিবার। এরপর তাদের পক্ষে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক ওই সময় গল্পে বার্সেলোনার প্রবেশ ঘটে। তারা মেসির প্রতিভা দেখে তাকে দলে নিয়ে নেয় এবং চিকিৎসার সব খরচ বহন করে।

চিকিৎসার অংশ হিসেবে শরীরে প্রতিদিন একটি করে ইনজেকশন পুশ করতে হতো। যা এই বয়সী একটি বাচ্চার জন্য ট্রমার কারণ হতে পারত। বিষয়টি নিয়ে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মেসি বলেছিলেন, ‘প্রতি রাতে আমি শরীরে গ্রোথ হরমোন ইনজেকট করতাম। পায়ের মধ্যে এটা পুশ করা হতো। একদিন এক পা, পরের দিন অন্য পায়ে। এটা আমাকে প্রভাবিত করেনি। প্রথম দিকে আমার বাবা-মা ইনজেকশন পুশ করত। একটা সময় আমি শিখে যাই এবং নিজে করা শুরু করি।’

বার্সেলোনা যুব একাডেমিতে মেসি
ছবি: সংগৃহীত

বার্সেলোনায় সাফল্য
২০০০-০১ মৌসুমে, মেসি বার্সেলোনার অনূর্ধ্ব-১৩ দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করে। একই বয়সী একটা কিশোরের গড় উচ্চতার তুলনায় সে তখনো ৭ সেন্টিমিটার ছোট। অনুশীলনের পাশাপাশি চিকিৎসাও চলতে থাকে। ধীরে ধীরে উচ্চতা বাড়তে থাকে। চিকিৎসা শেষ হলে তাঁর উচ্চতা দাঁড়ায় ১.৭০ মিটার লম্বা। যদি গ্রোথ হরমোন পুশ করা না হতো, তাহলে উচ্চতা হয়তো ১.৫৫ মিটারও হতো না।

পরের গল্পটা ইতিহাস তৈরি করার। ধীরে ধীরে বার্সেলোনা যুব একাডেমিতে নিজের নাম উজ্জ্বল করতে থাকেন মেসি। অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং বার্সা বি দলের হয়ে ৯৭ ম্যাচে ৮৯ গোল করেন। পরে সিনিয়র দলের হয়ে ৭৭৮ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৬৭২টি এবং অন্যদের দিয়ে গোল করিয়েছেন আরও ৩০৩টি। এ সময়ের মধ্যে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা (২০০৬, ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৫), ১০টি স্প্যানিশ লিগ, ৭টি ব্যালন ডি’অর (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২১) জেতেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।

সূত্র: এএস ডটকম