কেন ম্যারাডোনাকে থামাতে গিয়েও ব্যর্থ হতো প্রতিপক্ষ

বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ফাউল খাওয়া খেলোয়াড়ের রেকর্ডের মালিক ডিয়েগো ম্যারাডোনাছবি: সংগৃহীত

‘ম্যারাডোনাকে থামানোর একটাই উপায় ছিল—তাঁকে ফাউল করা। আমরা তা করিনি, আর তার ফল ভুগেছি।’

ইতালিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে ডিয়েগো ম্যারাডোনা যখন দুর্দান্ত ড্রিবলিং করে ক্লদিও ক্যানিজিয়াকে গোল করানোর মতো সুযোগ তৈরি করলেন, সে সময়ের স্মৃতি এভাবেই বর্ণনা করেছিলেন ব্রাজিল গোলরক্ষক তাফারেল। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার আলেমাও নাপোলিতে ম্যারাডোনার সতীর্থ ছিলেন। তিনিও অবৈধভাবে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে থামানোর চেষ্টা করেননি। কিন্তু কার্লোস দুঙ্গার স্লাইডিং ট্যাকল ম্যারাডোনাকে ফেলে দেওয়ার মতোই ছিল, আর রিকার্দো তাঁকে আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল।

শুধু ব্রাজিলই নয়, আরও অনেক দলেরই একই আফসোস ছিল। ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডার টেরি বুচার বলেছিলেন, ‘১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের আগে পুরো দলের মধ্যে একটাই বিশ্বাস ছিল—ম্যারাডোনাকে লাথি মেরে থামাব। কিন্তু সমস্যাটা ছিল অন্য জায়গায়। ওকে ফেলে দেওয়াটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ।’

১৯৯০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিছিয়ে থেকেও ৬৭ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরালেন ক্লদিও ক্যানিজিয়া। তাতে উল্লাসে ফেটে পড়লেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ছবি: এএফপি

কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের একের পর এক ট্যাকল ব্যর্থ হয়েছিল। আর সেই ম্যাচেই এসেছিল ‘শতাব্দীর সেরা গোল’, যা আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেয়।

সিরি আ–তে ম্যারাডোনার বিপক্ষে খেলা কিংবদন্তি খেলোয়াড় গ্রায়েম সুনেস বলেছিলেন, ‘ম্যারাডোনার কাছে পৌঁছানোই ছিল প্রথম সমস্যা। সে ছিল অবিশ্বাস্য দ্রুত এবং মুহূর্তেই দিক বদলাতে পারত।’

‘ধরতে পারলেও তাকে ফেলা কঠিন ছিল। সে ছিল রাগবি খেলোয়াড়দের মতো শক্তিশালী। আমি ওর চেয়ে লম্বা ও ভারী ছিলাম, কিন্তু ম্যারাডোনা ছিল অবিশ্বাস্য শক্তির অধিকারী। ধাক্কা দিলেও সে পড়ত না। চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে যাওয়া ও মাঠে টিকে থাকার এক অনন্য ক্ষমতা ছিল তার,’ যোগ করেন গ্রায়েম সুনেস।

এত দক্ষতার সঙ্গে ট্যাকল এড়ানোর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এখনো বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ফাউল খাওয়া খেলোয়াড়ের রেকর্ডের মালিক ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

আরও পড়ুন
ডিয়েগো ম্যারাডোনা
ছবি: সংগৃহীত

ট্যাকল খাওয়ার এই গল্প শুরু হয়েছিল বার্সেলোনা যাওয়ার মাত্র ২৫ দিন পর। ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ক্লাউদিও জেন্তিলে সেই ম্যাচে ম্যারাডোনার প্রতি খুবই কঠোর ছিলেন। তিনি আর্জেন্টাইন তারকাকে ২৩ বার ট্যাকল দেন। শাস্তি হিসেবে পেয়েছিলেন শুধু একটি হলুদ কার্ড। ম্যাচ শেষে ক্লাউদিও জেন্তিলে বলেছিলেন, ‘ফুটবল ব্যালে নৃত্যশিল্পীদের জন্য নয়।’

চার বছর পর মেক্সিকো বিশ্বকাপে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ম্যারাডোনা এক আসরে ট্যাকলের শিকার হয়েছিলেন ৫৩ বার, যা ওই বিশ্বকাপে অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে ২০ বার বেশি। ১৯৮২, ১৯৮৬ ও ১৯৯০—এই তিন বিশ্বকাপেই তিনি ছিলেন সর্বাধিক ট্যাকলের শিকার হওয়া খেলোয়াড়। এসব ট্যাকলের বিনিময়ে আর্জেন্টিনা পেয়েছিল মোট ১৫২টি ফ্রি-কিক। অন্যদিকে বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার চেয়ে পাঁচ ম্যাচ বেশি খেলা লিওনেল মেসি বিশ্বকাপে ফ্রি-কিক আদায় করতে পেরেছেন মাত্র ৭৫টি।

পেলে, ম্যারাডোনা, নাকি মেসি—বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় কে? এ নিয়ে বিতর্ক এখনো চলমান। কিন্তু প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত করেছেন কে? এ নিয়ে কোনো তর্ক নেই। সেই জায়গায় একটাই নাম—ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।

সূত্র: ফিফা