মানুষ বারবার কেন সম্পর্কে জড়ায়
জীবন গতিশীল। সময়ের সঙ্গে বয়ে চলাই জীবনের ধর্ম। জীবন চলার এই প্রক্রিয়ায় মানুষ সম্পর্কে জড়ায়। কেউ একবার, কেউ বারবার। প্রশ্ন হলো, মানুষ কেন বারবার সম্পর্কে জড়ায়। সুখের খোঁজে, শান্তির আশায় নাকি অন্য কিছু। বারবার এই সম্পর্কে জড়ানো কি নৈতিকতার মানদণ্ডে সঠিক। বারবার সম্পর্কে জড়ালেই কি কেউ সুখ খুঁজে পায়?
এ বিষয়ে ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের সাইকোথেরাপিস্ট ও কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা বলেন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে সবাইকে কয়েকটা প্রপঞ্চের ধারণা মাথায় রাখতে হবে। প্রপঞ্চগুলো হলো সম্মান, প্রতিশ্রুতি, বোঝাপড়া, সীমানা, সমানুভূতি ও শোনা। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার হলেই সম্পর্ক টিকে থাকবে। অন্যথা তা তলিয়ে যেতে বাধ্য।
সম্পর্ক যখনই ভেঙে যায়, তখনই মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। একাকিত্ব অনুভব করে। এই একাকিত্ব তাকে কুরে কুরে খায় এবং নিঃশেষ করে দেয়।
• সম্মান: যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা বা সম্মান রাখা জরুরি। সম্মানের এই জায়গায় ঘাটতি থাকলে সম্পর্ক আপনা–আপনি ভেঙে যায়।
• প্রতিশ্রুতি: সম্পর্কের শুরুতেই প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার। প্রতিশ্রুতি মানুষের দায়বদ্ধতা তৈরি করে। প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটলে সম্পর্ক আর এগিয়ে যেতে পারে না।
• বোঝাপড়া: একে অপরের মধ্যে আন্তবোঝাপড়া থাকতে হবে। উভয়ে উভয়ের মানসিক অবস্থা বুঝে অগ্রসর হলেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
• সীমানা: প্রতিটি সম্পর্কেরই সীমানা নির্ধারণ করা উচিত। কোন সম্পর্ক কত দূর অগ্রসর হতে পারবে, কোথায় গিয়ে থামতে হবে, তা মাথায় রেখেই এগোতে হয়। সম্পর্কের সীমানা ভেঙে গেলে তা আর চলতে পারে না।
• সমানুভূতি: একে অপরের প্রতি সমানুভূতিশীল হবে, এটাই স্বাভাবিক। একজনের দুঃখে আরেকজন দুঃখ পাবে, আবার একের সুখে অন্যজন হেসে উঠবে। এ রকম সমানুভূতি থাকলেই সম্পর্ক এগিয়ে যেতে পারে।
• শোনা: একে অপরের কথা ধৈর্যসহকারে শুনবে। কথা শোনা বা বলার জন্য তাকে জায়গা দিতে হবে। তবেই সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।
এই প্রপঞ্চগুলোর যথাযথ ব্যবহার হলেই সম্পর্ক স্থায়ী হতে পারে। নইলে মাঝপথে গিয়ে তা মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে পারে। সেটা বৈবাহিক জীবন, বন্ধুত্ব কিংবা প্রেমিক–প্রেমিকা, যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই। এই সম্পর্ক যখনই ভেঙে যায়, তখনই মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। একাকিত্ব অনুভব করে। এই একাকিত্ব তাকে কুরে কুরে খায় এবং নিঃশেষ করে দেয়।
অনেকেই সম্পর্ক হারিয়ে বাকি জীবন একা একাই কাটিয়ে দেয়। কেউ আবার এখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করে। নতুন সম্পর্কে সে সুখ খুঁজতে চায়। নিঃসঙ্গতা দূর করতে চায়। সে চায়, তার আবেগ–অনুভূতি আবার প্রকাশ করতে; যেন কেউ একজন এসে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।
মাহমুদা মুহসিনা বলেন, মানুষ আবার সম্পর্কে জড়াতে চায়। কারণ, সে চায় নিজেকে প্রকাশ করতে। নিজেকে মেলে ধরতে। নতুন বন্ধুর কাছ থেকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্য প্রত্যাশা করে। সৃজনশীল মানুষেরা চায়, কেউ একজন তার জীবনে প্রেরণা হয়ে থাকুক। নতুন নতুন আশার বাণী শোনাক।
তবে এগুলো ছাড়া কেউ কেউ শারীরিক আকর্ষণেও নতুন নতুন সম্পর্কে জড়াতে চায়। কেউ কেউ আবার আবেগ ও হরমোনের প্রভাবেও নতুন নতুন সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে। দিন শেষে মানুষ চায় শান্তি, নিরাপত্তা কিংবা নিরুদ্বেগ জীবন। এ জন্যই হয়তো তারা বারবার সম্পর্কে জড়ায়, জড়াতে চায় বলে যোগ করেন এই সাইকোথেরাপিস্ট।