সমাজে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যতটা সহানুভূতি দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ঠিক ততটাই উদাসীনতা দেখা যায়। শারীরিক রোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি, আর মানসিক যন্ত্রণাকে দেখি ‘দুর্বলতা’ হিসেবে। কেউ যখন নিজের ভেতরের কষ্ট নিয়ে লড়ে যায়, সমাজ তাকে দেখে অবিশ্বাসের চোখে। কিন্তু মানুষ তো কেবল রক্ত-মাংসের শরীর নয়, তার ভেতরেও থাকে এক আবেগে ভরা জগৎ, যেখানে জন্ম নেয় আনন্দ, দুঃখ, ভালোবাসা, হতাশা, স্বপ্ন আর অব্যক্ত কান্না।
এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা আমাকে ঘিরে ধরেছিল চারপাশ থেকে। কী করব, কোথায় যাব, কার সঙ্গে কথা বলব—এসব প্রশ্ন মাথার ভেতর কুয়াশার মতো ঘুরপাক খাচ্ছিল। নিজের কাছেই নিজেকে অপরিচিত মনে হতো। একা, ভীষণ একা। সাহস করে একদিন পৌঁছে গেলাম বন্ধুসভা কক্ষে। বুকের ভেতর একগাদা কষ্ট আর মাথায় হাজারটা দুশ্চিন্তা নিয়ে। বন্ধুসভার সঙ্গে কাজ করছি কয়েক মাস হয়ে গেছে। নানা কাজে, নানা মুখের দেখা মিলেছে এ সময়ে।
একজন আছেন, সাইকোথেরাপিস্ট বুশরা আপু। ভীষণ আন্তরিক, স্নেহে ভরা, বন্ধুর মতো আপন। আপুর চোখে ছিল বোঝার চেষ্টা, আর কণ্ঠে আশ্বস্ত করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা। কিছু বলার আগেই তিনি বুঝে যান, আমার ভেতর আজ কী ঝড় বইছে।
সেদিন সেশন চলাকালে যখন সাহস করে মাইক্রোফোন হাতে নিলাম, গলা কাঁপছিল...শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ঠিক তখনই আপু এসে দুই হাতে আমার কাঁধে স্নেহভরা হাত রাখলেন। কণ্ঠে আশ্বাস, ‘আপু আছে তোমার সঙ্গে।’
জীবনে কত কথাই তো শুনেছি, কিন্তু এই চার শব্দের মতো আর কোনো বাক্য এমন সাহস দেয়নি আমাকে। মনে হলো, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই যেন আসল প্রার্থনা, আর একফোঁটা সহানুভূতির ছোঁয়াই জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জীবনে যে ‘আমি’কে খুঁজে ফিরেছি, সেই আমির ছায়া দেখতে পাচ্ছি এখন। ভেতরে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা, না পাওয়ার যন্ত্রণা কিংবা ছোট ছোট আনন্দ—সবকিছুকে চিনতে পারছি একটু একটু করে।
আহ্বায়ক, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা