‘আমি পারি’, এই বিশ্বাসেই শুরু নতুন পথচলা

প্রথম আলো বন্ধুসভার নিয়মিত আয়োজন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সেশন। প্রতি সপ্তাহের সোমবার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ভবনের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত সপ্তাহের সেশনে অংশ নিয়ে এক বন্ধু জানিয়েছেন তাঁর মনের কথা।

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

‘আমি পারি না’, এমন একটি নেতিবাচক ধারণায় মন আচ্ছন্ন ছিল দীর্ঘদিন। কাজ করতে গেলে ভয় লাগত, সাহস করে জনসমক্ষে কোনো কথা বলতে পারতাম না। বিষয়টা মনের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবু তেমন গুরুত্ব দিতাম না। মনের মধ্যেই চেপে রেখেছিলাম। হঠাৎই মনে হলো, এ নিয়ে কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করা দরকার।

মনের এ ভাবনা চলাকালে সেদিন প্রথম আলো বন্ধুসভার একটি নোটিশ দেখে চোখ আটকে গেল। বন্ধুসভার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতি সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে একজন সাইকোথেরাপিস্ট বসেন। যিনি বন্ধুদের মানসিক সমস্যার কথা শোনেন।

১৪ জুলাই, সোমবার বিকেলে বন্ধুসভার কার্যালয়ে গেলাম। আমার মতো আরও কয়েকজন এসেছেন। সমস্যার ধরন অবশ‍্য একেকজনের একেক রকম। কারও আত্মবিশ্বাসের অভাব, কারও পারিবারিক অশান্তি, কারও লিখতে না পারার কষ্ট ইত্যাদি। সবাই নিজ নিজ সমস্যা নিয়ে বিপর্যস্ত। প্রত্যেকের ভেতরেই যেন একটা সাধারণ ধারণা জন্মেছে, ‘আমি পারি না। আমাকে দিয়ে হবে না।’

আমাদের এসব সমস্যা শুনে সাইকোথেরাপিস্ট মাহমুদা মুহসিনা বুশরা সুন্দর বিষয়টি নিয়ে থেরাপিউটিক প্রসেসের মাধ্যমে সচেতন করলেন। আমরা অনুধাবন করলাম। যার মধ্যে ছিল কিছু এক্সারসাইজ ও কথা, যেগুলো মন্ত্রের মতো উচ্চারণ করতে হবে অনুভব করলাম। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি মানুষেরই কাজ করার অগাধ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সবাই সে ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারে না। কারণ, জীবনে ঘটে যাওয়া এক বা একাধিক নেতিবাচক ঘটনা মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এতে মনের মধ্যে একধরনের ভীতি তৈরি হয়। তখন মানুষ নিজেকে মেলে ধরতে পারে না।’

আরও পড়ুন

মানবমনের এই ভীতিকর অবস্থা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দেয় জানিয়ে মাহমুদা মুহসিনা বুশরা বলেন, একসময় জীবনের গতি হারিয়ে যায়। জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে জীবন থেকে মানুষ পালাতে চায়। অথচ এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সামান্য কিছু মনের ভেতর থেকে অনুমতিই যথেষ্ট। যেমন নিজেকে বলা ও অনুভব করা—‘আমি যোগ্য’, ‘আমি পারি’, ‘আমি আমার মতো ভালো আছি’ ও ‘আমি গ্রহণযোগ্য’। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিরিবিলি বসে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। এভাবে কয়েকবার করলেই সফল হওয়া যাবে।

এই সেশন থেকে শিখলাম—আমরা আসলে অসচেতনতার মধ্যে থাকি এবং বিকল্প পথ না দেখে থেমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। যেটাকে ভীতি মনে করছি, সেটা আসলে কোনো ভীতিই নয়। নেহাত মনের নেতিবাচক কল্পনা, কুহক। এই কুহক থেকে বের হওয়া কোনো বিষয়ই নয়। ওপরের বিষয়গুলো মেনে চললে কুহকের এই জাল ছিন্ন করা সময়ের ব‍্যাপার মাত্র।