ক্ষমা কি অন্যের জন্য, নাকি নিজের ভালো থাকার জন্য
পৃথিবীতে চলার পথে আমাদের অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হয়। কেউ কেউ জীবনে খুব কাছের হয়ে যায়। আমরা মনে করি, তাঁরা পারফেক্ট। সত্যিটা হলো, এই দুনিয়ায় কেউই পারফেক্ট নয়। তাই কখনো কখনো এই মানুষদের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত আচরণে আমরা আঘাত পেয়ে থাকি। তখন মানুষটির প্রতি আমাদের ভেতরে নেতিবাচক অনুভূতির জন্ম হয়—রাগ, দুঃখ, লজ্জা, উদ্বেগ, অস্বস্তি, অনুশোচনা, এমনকি ধীরে ধীরে বিষণ্নতাও ভর করে।
এমন মুহূর্তে কেউ যদি বলে ক্ষমা করতে, মনে প্রশ্ন জাগে—
• আমি কেন তাকে ক্ষমা করব?
• সে তো আমার ক্ষমার যোগ্য নয়!
• ওকে আমি কোনো দিন ক্ষমা করতে পারব না।
• সে কেন এত সহজে পার পেয়ে যাবে?
ক্ষমা করা মানে অন্যকে ছাড় দেওয়া নয়; বরং নিজে ভালো থাকা
অচেনা হোক বা আপনজন, ক্ষমা করার পথটা কখনো দীর্ঘ, কঠিন, আবার কখনো পিচ্ছিলও হতে পারে। কিন্তু অসম্ভব নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষমা করার মানসিকতা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। অপর দিকে ক্ষমা করতে না পারা উদ্বেগ, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতাসহ নানা সমস্যার জন্ম দেয়। ক্ষমা আসলে নিজের শান্তির জন্য, যাতে রাতে নির্ভার হয়ে ঘুমাতে পারেন।
ক্ষমা না চাইলেও ক্ষমা করার চর্চা করুন
হয়তো আপনাকে যে আঘাত দিয়েছে, সে কখনোই ক্ষমা চাইবে না। ওই ব্যক্তি হয়তো ইচ্ছা করেই চেয়েছে আপনি আঘাত পান। অথবা অচেনা কেউ ছিল কিংবা যিনি আপনাকে কষ্ট দিয়েছেন, তিনি এখন আর বেঁচে নেই। তবু ক্ষমা করুন।
ক্ষমার চর্চা নেতিবাচকতা থেকে দূরে রাখে
মনে কষ্ট জমিয়ে রাখা মানে কাঁধে আলুর বস্তা বয়ে বেড়ানো। আপনি কখনোই মানসিকভাবে শান্তি পাবেন না, যদি সব সময় সেই ভার নিয়ে চলতে হয়। ক্ষমা সেই বোঝা নামিয়ে দেয়। অন্যজন হয়তো নিজের জীবন নিয়ে ঠিকই চলছে, আপনার রাগ বা কষ্ট তার জীবনে কোনো প্রভাব ফেলছে না। তাহলে কেন আপনি নিজেই অন্ধকারে বন্দী হয়ে থাকবেন?
ক্ষমার চর্চা সুস্থ হতে সাহায্য করে
ক্ষমা মানেই ভুলে যাওয়া নয়। কিন্তু সবারই অধিকার সুস্থ হয়ে ওঠা এবং নতুন করে এগিয়ে যাওয়া। সুস্থ হওয়ার পথে রয়েছে কঠিন অনুভূতির মুখোমুখি হওয়া, প্রয়োজনীয় কথোপকথন, আর নিজের প্রতি গভীর যত্ন নেওয়া।
কীভাবে ক্ষমার চর্চা করবেন
মানুষ সাধারণত কষ্টের জায়গা থেকে কঠোর হয়ে ওঠে। সুস্থ মানুষ চায় অন্যকে সাহায্য করতে; আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দেয়, তাহলে দ্রুতই ক্ষমা চায়।
• নেতিবাচক আবেগ ঝেড়ে ফেলুন: ডায়েরিতে লিখুন, বিশ্বাসযোগ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করুন বা প্রয়োজনে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন। যত দিন না ভেতরের বিষাক্ত আবেগ মুক্ত করবেন, তত দিন এগুলো আগুনের মতো আরও বড় হয়ে উঠতে পারে।
• সহানুভূতি দেখানোর চেষ্টা করুন: কষ্ট দেওয়া মানুষটিও হয়তো কোনো না কোনো কষ্টের মধ্যে ছিল। সহানুভূতি দেখাতে পারলে আপনার রাগের তীব্রতা কমবে, আর নিজের ভেতরেও একধরনের স্বাধীনতা অনুভব করবেন।
মনে রাখবেন, ক্ষমা করা মানে ভুলে যাওয়া নয়; বরং ওই ব্যক্তির মানসিকতাকে বোঝার চেষ্টা করা। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারা ক্ষমার প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এতে মানুষ হিসেবে তাদের ভুল করার সুযোগকে একধরনের সহানুভূতির জায়গা দেওয়া হয়।
দূরত্ব রেখে ক্ষমার চর্চা করুন
মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সময়, স্থান ও অপরজনের কাছ থেকে কিছুটা বিরতি। এই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও দূরে থাকা জরুরি। ক্ষমা একটি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া, যা ধীরে ধীরে সব অনুভূতি সামলে উঠতে সাহায্য করে।
দিন শেষে আমরা মানুষ। আমাদের যেমন ক্ষমা করার প্রয়োজন, তেমনি ক্ষমা পাওয়ারও প্রয়োজন আছে।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে