প্রতিদিনের চাপ ও ক্লান্তির মধ্যেও সুখে থাকবেন কীভাবে
দৈনন্দিন জীবন উত্থান–পতন, জয়–পরাজয়, ভালো লাগা ও ভালো না লাগার মুহূর্তে ভরপুর। তবু বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিনের চাপ ও ক্লান্তির মধ্যেও সুখ আসলে একটি পছন্দ।
মনোবিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কার করেছেন যে কিছু সহজ কার্যক্রম সুখ বাড়াতে পারে। এর অনেকগুলোই সহজ ও কম খরচে করা যায় এবং সহজে শেখা বা চর্চা করা সম্ভব।
তবে এটি শুনতে যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে অনেকের কাছেই সুখ অর্জন করা ততটা সহজ নয়। অনেক সময় সুখ যেন অধরা। বিশেষ করে কঠিন সময়ে সুখের পথটি বেশ অস্পষ্ট মনে হতে পারে। তাই সুখের মুহূর্তের কথা ভাবা উপকারী হতে পারে অর্থাৎ ক্ষণিকের আনন্দ ও তৃপ্তিকে খুঁজে পাওয়া শেখা। হয়তো একটুখানি হাসি, কোনো আনন্দদায়ক কাজ, নিজের প্রতি মমতা কিংবা অর্থপূর্ণ কোনো কথোপকথন—এগুলোই হতে পারে ছোট ছোট সুখের মুহূর্ত।
একুশ শতকের শুরুতে মনোবিজ্ঞানীরা সুখের মূল রহস্য ও যেসব চর্চা ব্যক্তির ব্যক্তিগত সুখবোধকে সমর্থন করে, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা শুরু করেন। মনোবিজ্ঞানীরা এখনো সুখ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আবিষ্কার করছেন, তা আপনাকে অবাক করতে পারে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, সুখ কেবল তাদেরই জন্য, যাদের জীবন ও স্বাস্থ্য ভালো বা যাদের কাছে বেশি অর্থ আছে। কিন্তু সাধারণভাবে এটি সত্য নয়; বরং গবেষণা বলছে, সুখ বাড়ানোর নানা কৌশল অধিকাংশ মানুষের জন্যই কার্যকর হতে পারে, এমনকি যারা মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ।
সুখ বাড়ানোর অনেকগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায় আছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো, পারসন অ্যাকটিভিটি ফিট। অর্থাৎ এমন কাজ, কার্যক্রম বা ভূমিকা বেছে নেওয়া, যা আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ, শক্তি, দক্ষতা ও প্রেরণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি শারীরিকভাবে আরও সক্রিয় হতে চান এবং প্রকৃতি পছন্দ করেন, তাহলে বাইরে হাঁটা আপনার জন্য জিমে যাওয়ার চেয়ে বেশি উপভোগ্য ও কার্যকর হতে পারে। আবার যদি আপনি সামাজিক সংযোগ বাড়াতে চান এবং সমাজসেবাকে মূল্য দেন, তাহলে আলোচনা সভায় যোগ দেওয়ার বদলে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি বা পরিবেশ রক্ষার প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা আপনার জন্য বেশি উপযুক্ত হতে পারে।
নিচে কিছু ধারণা দেওয়া হলো, যা আপনাকে প্রতিদিনের জীবনে সুখের মুহূর্ত বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। চাইলে আপনার জন্য উপযুক্ত মনে হয়, এমন কিছু চর্চা বেছে নিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
নিজের প্রতি সদয় হোন
মনোবিজ্ঞানী ড. শোনা শ্যাপিরোর তৈরি একটি প্রিয় অনুশীলন রয়েছে, যা বিজ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরি। শ্যাপিরো আমাদের মনে করিয়ে দেন, যেদিকে আমরা মনোযোগ দিই, সেটিই আরও শক্তিশালী হয়, আমাদের উদ্দেশ্য ও সচেতনতায় গভীরভাবে প্রোথিত হয়। তাঁর সহজ আত্ম–সহমর্মিতার অনুশীলনটি এমন—
• নিজের হাতটি বুকে রাখুন এবং অনুভব করুন—আপনার হৃদয় কীভাবে আপনার যত্ন নিচ্ছে।
• যখন মনে হবে আপনি প্রস্তুত, ধীরে শ্বাস নিন এবং নিজেকে বলুন, ‘সুপ্রভাত, আমি তোমাকে ভালোবাসি (নিজের নাম)’।
• তারপর লক্ষ করুন, আপনি কেমন অনুভব করছেন।
• প্রতিদিন সকালে এই অনুশীলন করুন, জার্নালে বা ডায়েরিতে সংক্ষেপে লিখে রাখুন, সেই মুহূর্তে আপনি কী অনুভব করেছেন।
সামাজিক সংযোগ ও সম্পর্ক বাড়ান
এটি খুব সহজ কিছু হতে পারে, যেমন অন্যদের একটু বেশি করে ‘হ্যালো’ বলা। কাউকে ফোন করুন, বার্তা পাঠান বা ই–মেইল করুন। কাউকে জিজ্ঞাসা করুন, কেমন আছেন? কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন বা একটু গল্প করুন।
মুহূর্তটি উপভোগ করুন
একটু থামুন এবং বর্তমানের কোনো ইতিবাচক বিষয়ে মনোযোগ দিন, মাত্র এক মুহূর্তের জন্য হলেও।
ইতিবাচক কিছু খেয়াল করুন
আজকের দিনে ঘটে যাওয়া বা আপনার করা কোনো ইতিবাচক বিষয়কে চিনতে চেষ্টা করুন। একটু সময় নিয়ে সেটি উপলব্ধি করুন এবং কৃতজ্ঞতা অনুভব করুন।
নিজের শক্তির ব্যবহার করুন
দুর্বলতাগুলো ঠিক করার চেষ্টার বদলে কিছু সময় দিন আপনার শক্তিগুলো চেনার ও কাজে লাগানোর জন্য। আপনি কী ভালো পারেন? আপনি কী করতে ভালোবাসেন? আজ বা এই সপ্তাহে কীভাবে সেই শক্তি কাজে লাগাতে পারেন?
ভাবুন তো, কীভাবে আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে আরও কিছু সুখের মুহূর্ত যোগ করতে পারেন, যেগুলো আপনার সঙ্গে মানানসই।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে