ক্ষুধার্ত গাজা ও নীরব বিশ্ববিবেক

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা মরিয়া হয়ে খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। গাজা উপত্যকার নুসেইরাত এলাকায়, ২০ জুলাই ২০২৫ছবি: রয়টার্স

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শুধু বোমা, মিসাইল ও গুলিই নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ইসরায়েল গাজার জনগণের ওপর ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ আটকে দেওয়ার ফলে গাজার মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ।

ধ্বংসস্তূপে জীবনের লড়াই
জাতিসংঘ ও ইউনিসেফের তথ্যমতে, গাজার ৮৫ শতাংশের বেশি পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলো ওষুধ ও বিদ্যুৎসংকটে ভুগছে। সীমান্তে খাদ্য ও ওষুধের মজুত থাকলেও অনেক সময় সেগুলো ঢুকতে পারছে না বা সীমিতভাবে প্রবেশ করছে। এর ফলে গাজার বাজারব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষ ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারছে না। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মৃত্যুর মিছিল
আল–জাজিরা ও জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, টানা ২২ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি। নিহত মানুষের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। হাজার হাজার মানুষ আহত, অঙ্গহানির শিকার বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ
গাজায় ত্রাণ বিতরণব্যবস্থাকে ঘিরেও বিতর্ক রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে যে সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন বিতরণপদ্ধতি গাজাবাসীদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। অনেকে ত্রাণ সংগ্রহের পথে গুলির শিকার হয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ক্ষুধা কিংবা আগ্নেয়াস্ত্রের হুমকির মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া মানবিক নয়।

আরও পড়ুন

ক্ষুধা কীভাবে অস্ত্র হলো
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে গাজায় অবরোধের মাধ্যমে বাজার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানি সীমিত করে দেওয়ায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্যসংকটে পড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল জানিয়েছে, বেসামরিক জনগণকে অনাহারে রাখা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

বিশ্ববিবেকের ভূমিকা
মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক আদালত থাকা সত্ত্বেও গাজার মানুষের দুর্দশা অব্যাহত। সমালোচকেরা বলছেন, শুধু খাদ্য বা ওষুধ পাঠালেই মানবিকতা রক্ষিত হয় না; প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান ও পূর্ণ স্বাধীনতা। মানবাধিকারকর্মীরা আহ্বান জানাচ্ছেন যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং যুদ্ধাপরাধে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।

তথ্যসূত্র: জাতিসংঘ, আল–জাজিরা, ইউনিসেফ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, প্রথম আলো ও দৈনিক ইত্তেফাক।

কুতুবদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার