ক্লাউডবার্স্ট কেন হয় এবং কোন অঞ্চলে বেশি ঘটে
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ক্লাউডবার্স্ট বা হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৮ জন খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের। এ ছাড়া শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। প্রাদেশিক উদ্ধারকারী সংস্থার বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস ও রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে বড় বাধা পড়ছে। বেশির ভাগ এলাকার সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা পায়ে হেঁটে দুর্গম অঞ্চলে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের কিশটওয়ার জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে একই কারণে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় ধাপে আবারও ক্লাউডবার্স্ট হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।
ক্লাউডবার্স্ট কী
ক্লাউডবার্স্ট হলো হঠাৎ, খুব প্রবল বৃষ্টি। সাধারণত নির্দিষ্ট একটি ছোট এলাকায় (৩০ বর্গকিলোমিটার বা তারও কম এলাকায়) ও স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি ঘটে। অধিকাংশ ক্লাউডবার্স্ট বজ্রঝড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব ঝড়ে বায়ুর প্রবল ঊর্ধ্বগতি তৈরি হয়, যা অনেক সময় ঘনীভূত হওয়া জলকণাকে মাটিতে পড়তে বাধা দেয়। ফলে প্রচুর পরিমাণ পানি মেঘের উচ্চস্তরে জমা হয়ে যায়। যখন এই ঊর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহ দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন একসঙ্গে সেই সঞ্চিত পানি প্রবল বর্ষণ আকারে নেমে আসে।
ইন্ডিয়া মেট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি) এবং অন্যান্য উৎস যেমন পিএমএফ, আইএএস ও ক্লাইমেট রিসার্চ ল্যাবের মতে, ১ ঘণ্টায় ১০০ মিমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হলে তাকে ক্লাউডবার্স্ট হিসেবে গণ্য করা হয়।
ক্লাউডবার্স্ট কেন হয় এবং কোন অঞ্চলে বেশি ঘটে
সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে ক্লাউডবার্স্ট বেশি হয়ে থাকে। এর সম্ভাব্য কারণ হলো, বজ্রঝড়ের উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। প্রবল বর্ষণের প্রভাব পাহাড়ি ঢালে আরও তীব্র হয়। কারণ, ঝরে পড়া পানি উপত্যকা ও ছোট ছোট গিরিখাতে গিয়ে জমা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলের ক্লাউডবার্স্ট আকস্মিক ও ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদ রুচিত কুলকার্নি বলেন, এগুলো সাধারণত বর্ষাকালে পাহাড়ি এলাকায় ঘটে। তিনি জানান, হিমালয়ের পাদদেশে পশ্চিম দিকের আরব সাগর থেকে আসা আর্দ্রতা পাহাড়ের কারণে ওপরে উঠে যায়, যা অরোগ্রাফিক লিফট নামে পরিচিত। এর ফলে বিশালাকার কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, যা বড় বড় বৃষ্টিকণাকে ধারণ করতে পারে। এই আর্দ্র বাতাস ওপরে উঠতে থাকে, আর মেঘ ক্রমেই বড় হতে থাকে। কিন্তু বৃষ্টি ঝরার সুযোগ না থাকায় মেঘ এত ভারী হয়ে ওঠে যে একসময় হঠাৎ ভেঙে পড়ে প্রবল বর্ষণ হয়।
এ ছাড়া কোনো হিমবাহ বা হিমবাহ হ্রদের ভেঙে পড়া (glacier burst বা glacier lake outburst) থেকেও বন্যা ঘটতে পারে। ভারতে ২০১৩ সালের জুনে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে ঘটে যাওয়া দেশটির সবচেয়ে প্রাণঘাতী বন্যাগুলোর একটির জন্যও ক্লাউডবার্স্টকে দায়ী করা হয়। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই ঘটনায় ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।
সবচেয়ে প্রবল ক্লাউডবার্স্টে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কেবল অনুমান করা যায়। উদাহরণস্বরূপ ১৯১১ সালের ২৯ নভেম্বর পানামার পোর্তো বেলোতে একটি স্বয়ংক্রিয় বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র ৩ মিনিটে ২ দশমিক ৪৭ ইঞ্চি (৬৩ মিমি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছিল। আবার ১৯৭০ সালের ২৬ নভেম্বর গুয়াডেলুপের লেস আব্যমসের কাছে বারো রেইন গেজে মাত্র ১ মিনিটে ১ দশমিক ৫০ ইঞ্চি (৩৮ মিমি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল। তবে এমন কিছু ঘটনাও আছে যেখানে ক্লাউডবার্স্টে ঝরে পড়া পানির প্রভাবে মাটিতে যে গভীর গর্ত তৈরি হয়, তা দেখে ধারণা করা যায় যে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা আরও বেশি ছিল।
সূত্র: ব্রিটানিকা ডটকম ও দ্য গার্ডিয়ান