ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্য ধামের গান
বাংলার লোকসংস্কৃতির ভান্ডার বৈচিত্র্যময়। প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব সংগীত ও শিল্প–ঐতিহ্য স্থানীয় মানুষের জীবনধারা ও ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। ঠাকুরগাঁওয়ের এমনই এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো ধামের গান।
ধামের গান মূলত ভক্তিমূলক সংগীত। কৃষ্ণলীলা, রাধাকৃষ্ণের প্রেমকথা ও ভক্তিরসকে কেন্দ্র করে এটি পরিবেশিত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠান, মেলা কিংবা পূজা-পার্বণের অন্যতম বিনোদনে পরিণত হয়েছে। এ গানে ব্যবহৃত হয় ঢোল, করতাল, বাঁশি ও নানা দেশীয় বাদ্যযন্ত্র, যা পরিবেশে ভক্তি ও আনন্দের আবহ সৃষ্টি করে।
ঠাকুরগাঁও জেলার গ্রামীণ মঞ্চে এখনো ধামের গান বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে পূজা-পার্বণ, মেলা ও শীতের রাতে গ্রামের মাটির চাতালে সারা রাত ধরে চলে ধামের আসর। একদল শিল্পী পালাগান আকারে গান পরিবেশন করেন। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষও সমান আগ্রহ নিয়ে এই গানের আসরে অংশ নেন। এতে সৃষ্টি হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃশ্য।
তবে আধুনিক বিনোদনের ভিড়ে ধামের গান আজ বিলুপ্তির পথে। অনেক তরুণ এখন আর এই ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না। তবু কিছু নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী ও স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা একে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিয়মিত ধামের গান আয়োজন করে মানুষকে আগ্রহী করে তুলছেন।
স্থানীয় সংস্কৃতি সংগঠকেরা জানান, সরকারি সহযোগিতা ও নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই এই সংগীতধারা আবারও প্রাণ ফিরে পাবে।
ধামের গান শুধু একটি লোকসংগীত নয়, বরং ঠাকুরগাঁওয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে শিল্পীদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যেতে পারে এ অমূল্য সাংস্কৃতিক সম্পদ।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা