হারানো ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী কাকিনা জমিদারবাড়ি
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক কাকিনা জমিদারবাড়ি আজ পরিণত হয়েছে ধ্বংসপ্রায় এক নিদর্শনে। শত বছরের পুরোনো এই রাজবাড়ি একসময় ছিল ঐশ্বর্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে সেটি পড়ে আছে অবহেলা ও অযত্নে, হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়।
স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, প্রায় তিন শ বছর আগে মোগল সম্রাটের দেওয়া সনদের মাধ্যমে কাকিনায় জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার কাশীনাথ রায় ছিলেন এ পরিবারের প্রথম প্রভাবশালী নেতা। তিনি কৃষি, বাণিজ্য ও স্থাপত্যে অবদান রাখেন এবং কাকিনা অঞ্চলে একটি সুসংগঠিত প্রশাসন গড়ে তোলেন। পরে জমিদার মহিমা রঞ্জন রায় ও শম্ভুচরণ রায় এই জমিদারির পরিধি বাড়ান।
কাকিনা জমিদারবাড়িটি গড়ে তোলা হয়েছিল ইউরোপীয় ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে। দোতলা বিশাল প্রাসাদ, রাজদরবার, অতিথিশালা, হাওয়াখানা ও গোপন আস্তানার নকশা এখনো এর ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে।
একসময় এ রাজবাড়িতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতো নাটক, যাত্রা, পুতুলনাচ ও সাংস্কৃতিক আসর; যা কাকিনাকে উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় কাকিনা রাজবাড়ির ঐশ্বর্য। ১৯২৫ সালের দিকে আর্থিক সংকট ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে জমিদারি নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর থেকে বাড়িটি অবহেলা ও প্রাকৃতিক ক্ষয়ের শিকার হয়ে বর্তমানে ধ্বংসের মুখে। রাজবাড়ির অধিকাংশ অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কোথাও ছাদ ধসে পড়েছে, ছাদের চুন-সুরকি খসে পড়ছে, কোথাও দেয়াল ফেটে গেছে। এখন জমিদারবাড়ির সেই প্রাসাদ, অতিথিশালা, রাজদরবার ও গোপন কক্ষগুলো ভগ্নদশায় পড়ে আছে।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, সরকারি উদ্যোগে এই বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হোক। রাজবাড়িটি সংরক্ষণ করা গেলে লালমনিরহাটে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, লালমনিরহাট বন্ধুসভা