ময়মনসিংহ থেকে আমরা আটজন। বন্ধুত্বের হাত ধরে একসঙ্গে পথচলা। গন্তব্য নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রাম। নাম শুনে হয়তো মনে হতে পারে, এটা শুধু একটি গ্রাম। কিন্তু পাঁচগাঁও শুধু গ্রাম নয়, এ যেন প্রকৃতির আঁকা এক জীবন্ত ছবি।
৮ আগস্ট, শুক্রবার ভোরে আমাদের যাত্রা শুরু। শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে, আঁকাবাঁকা গ্রামীণ পথ, পাকা সড়কের ফাঁকে ফাঁকে ধানের খেত, আর দূরে উঁকি দেওয়া পাহাড়—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, আমরা ধীরে ধীরে এক অন্য জগতে ঢুকে যাচ্ছি। শেষমেশ যখন পাঁচগাঁও পৌঁছালাম, প্রথমেই চোখে পড়ল সবুজে মোড়া চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়, যাকে স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে ডাকে পাঁচগাঁও টিলা বা কলমাকান্দার পাহাড়।
কথিত আছে, শত বছর আগে চাঁদ সওদাগরের নৌকা এখানে ডুবে গিয়েছিল। পাহাড়টির আকারও যেন এক বিশাল নৌকার মতো। তাই নাম হয়েছে চন্দ্রডিঙ্গা। দাঁড়িয়ে তাকালে মনে হয়, ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে পাহাড়টি এখনো অপেক্ষা করছে সেই হারানো দিনের গল্প শোনানোর জন্য।
পাহাড়ের পথে পা রাখতেই শুরু হলো অভিযাত্রা। গা ঘেঁষে বইছে ছোট ছোট ঝিরিপথ, কোথাও আবার লুকিয়ে আছে জলধারা। পথে পথে পাখির ডাক, বাতাসে শীতলতার ছোঁয়া। মনে হচ্ছিল, আমরা যেন প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাচ্ছি। চোখের সামনে বিস্তীর্ণ সবুজ সমতল, দূরে সারি সারি পাহাড়, আর আকাশে ভেসে বেড়ানো তুলোর মতো মেঘ। এ এক অন্য রকম শান্তি।
আমরা কয়েক ঘণ্টা কাটালাম সেখানে। কেউ ছবি তুলছিল, কেউ চুপচাপ বসে বাতাসের শব্দ শুনছিল। মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তে সময় থমকে গেছে। বিকেলে ফেরার পথে সামনে পড়ল সোমেশ্বরী নদী। শীতল জল। সবার ইচ্ছা হলো পা ডুবিয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার। ঠান্ডা পানির ছোঁয়ায় সারা দিনের ক্লান্তি মিলিয়ে গেল।
পাঁচগাঁও শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, এ এক অনুভূতির জায়গা। কেউ যদি প্রকৃতি ভালোবাসেন, তাঁর জন্য পাঁচগাঁও হতে পারে দারুণ একটি জায়গা। চন্দ্রডিঙ্গার চূড়া থেকে নেমে আসার পর মনে হচ্ছিল, আমরা যেন ইতিহাসের নৌকায় চড়ে এক দিনের জন্য সময়কে উল্টোদিকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে আমরা ফিরে এলাম।
উপদেষ্টা, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা