পাঁচগাঁও কবিতার গাঁও

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল পাঁচগাঁওছবি: সংগৃহীত

একটা চুপচাপ গাঁও। এক পাশে বাংলাদেশ, অন্য পাশে ভারত; মাঝখানে বিভেদ তুলেছে কাঁটাতার। চোখ কি আর কাঁটাতার মানে! যেদিকেই তাকাবেন দেখবেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাহাড়। মনে হবে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কেউ, ‘এসো কাছে, জুড়াও তোমার প্রাণ।’ নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর মধ্যে শহুরে পর্যটকদের আলাদা করে নজর কেড়েছে এই পাঁচগাঁও। আহামরি পাহাড়ি ট্রেইল পাবেন না। তবে চোখ জুড়াবে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। মুগ্ধ করবে প্রকৃতি।

ইট–পাথরের দেয়ালের মধ্যে থাকতে থাকতে জীবন হয়ে ওঠে বিষণ্ন। বারবার উঁকি দেয় মন খারাপের হাওয়া। মন চায় পাখি হতে। ইচ্ছা করে প্রকৃতির কাছে ছুটে যেতে। সে ক্ষেত্রে পাঁচগাঁও খুব একটা মন্দ লক্ষ্য নয়। যদি না আপনার ছিমছাম পাহাড়ি গাঁওয়ের প্রতি আলাদা লোভ কাজ না করে। সীমান্ত পাহাড়ের বিপরীতে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঝেমধ্যে ছোট ছোট ঘরবাড়ি। মানুষের আনাগোনাও খুব একটা নেই। রংতুলিতে আঁকা ছবির মতো যেন দাঁড়িয়ে আছে পুরো অঞ্চলটা। আছে ছোট ছোট ঝরনা আর ঝিরিপথ। সেই সঙ্গে গল্প আছে সীমান্ত চোরাকারবারীদেরও।

এখানে পাহাড়ে উঠতে খুব একটা মন টানবে না আপনাকে। তবে সে সুযোগও আছে। আপনাকে টানবে পাটিতে বসে পরিবার কিংবা প্রিয় মানুষের সঙ্গে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার লোভ। ছায়ায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করবে পাহাড়ের কাছে। বিকেলের রোদ ম্লান হতে শুরু করলে পাহাড় যেন কথা বলতে শুরু করে। ধুলাহীন বিশুদ্ধ বাতাস চোখকে আরাম দেবে। যেদিকেই তাকাবেন, দেখতে পাবেন সবুজের কলতান। গানের বাতিক থাকলে মন আপনাআপনি গাইতে শুরু করবে। এমনকি বিরান ভূমিতে গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে, সেটাও চোখে আটকাবে। ছবির ফ্রেমের মতো গেঁথে থাকবে মনে।

পাহাড় ঘিরে আবার ইতিহাসও জড়িয়ে আছে। এখানেই নাকি শত শত বছর আগে চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা ডুবেছিল মনসার রোষানলে। পাহাড়টি দেখতেও অনেকটা নৌকা আকৃতির। নামকরণও করা হয়েছে চন্দ্রডিঙা নামে। এখানেই বাস করে ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। পাহাড়ের পাদদেশে মাথা উঁচু করে সবুজ পাতার ছাতা মেলে দাঁড়িয়ে আছে এক সুবিশাল বটগাছ। নজরে আসবে সে দৃশ্যও। স্থানীয় অধিবাসীদের আধিপত্যে বর্ডার পাড় করে আনা জিনিসপত্র দিয়ে গড়ে উঠেছে সীমান্ত বাজারও।

ঢাকা থেকে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, ব্যাগ গুছিয়ে রাতের ট্রেনে উঠে পড়া। আন্তনগর হাওর এক্সপ্রেসে চড়ে ভোররাতে এসে নামবেন ঠাকুরাকোণা স্টেশনে। সেখান থেকে নাশতা সেড়ে সকালের বাসে কিংবা সিএনজি করে কলমাকান্দা বাজারে যাওয়া তারপর অটো কিংবা মোটরসাইকেলে করে সরাসরি রংছাতি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী অঞ্চল পাঁচগাঁও। আবার দিনভর ঘুরাঘুরি করে রাতের ট্রেনে ঢাকায় ফিরতে পারবেন। ট্রেনে এলে সবকিছু মিলিয়ে হাজার টাকার মধ্যেই আসা-যাওয়ার খরচা হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে সরাসরি কিছু বাসও আসে। তবে রাস্তা কিছুটা ভোগাবে।