শিক্ষক মানে শুধু ক্লাসে দাঁড়িয়ে পাঠ্যপুস্তকের কথা বলা নয়; শিক্ষক মানে সেই মানুষ, যিনি আমাদের চোখে স্বপ্ন দেখাতে শেখান, যিনি আমাদের ভেতরের শক্তি, ভালোবাসা এবং সম্ভাবনা চিনতে সাহায্য করেন। স্কুলজীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অনেক শিক্ষকের ছায়া পেয়েছি। প্রত্যেকের শিক্ষা, ধৈর্য এবং উৎসাহ আমার জীবনে গভীর প্রভাব রেখেছে। এর মধ্যেও কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁদের ছাপ আজও অমলিন।
স্কুলজীবনে ভূগোলের শ্রদ্ধেয় আবুল হোসেন স্যার। তিনি ছিলেন শৃঙ্খলাবদ্ধ ও কঠোর। ক্লাসে ঠিক সময় উপস্থিত না হলে আর ক্লাসে ঢুকতে দিতেন না। সবাইকে পড়া একদম ঠিকঠাকভাবে দিতে হতো। প্রথমে সবাই ভয়ে কাঁপতাম, আমিও ব্যতিক্রম নই। ধীরে ধীরে বুঝতে পারি, স্যারের কঠোরতা আসলে আমাদের মঙ্গল ও শৃঙ্খলার মূল্য শেখানোর জন্য। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্যারের শেখানো নিয়ম, পরিশ্রম ও সততার শিক্ষা কাজে লাগে। তাঁর প্রতি সব সময় কৃতজ্ঞ।
গণিতের ইমন স্যারও আমার জীবনে বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। গণিত প্রিয় বিষয় ছিল না, কিন্তু স্যারের ক্লাস সব সময় উপভোগ্য ছিল। তিনি শুধু সূত্র শেখাতেন না, আমাদের ভেতরের সম্ভাবনা খুঁজে বের করতেন। ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে ও লেখালিখি করতে ভালোবাসতাম। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ছোটগল্প বা বিভিন্ন বিষয়ে লিখতাম। কখনো কখনো রিপোর্টও পড়তাম। একদিন স্যার আমার লেখা দেখে বললেন, ‘সাফা, তুমি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করো, অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
তখন হয়তো সেই কথার গুরুত্ব বুঝিনি। কিন্তু আজ আমি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী। স্যারের সহজ কথাই আমাকে স্বপ্ন চিনতে এবং এগোতে সাহায্য করেছে।
ইংরেজি শিক্ষক মিরাজ স্যারও আমার জীবনে স্মরণীয়। নবম শ্রেণিতে প্রথমবার একটি গল্প ইংরেজিতে অনুবাদ করে লিখে দেখাই। স্যার দেখে খুব খুশি হয়ে আমাকে একটি কলম উপহার দেন। এই কলম আমার জন্য আশীর্বাদ। কারণ, স্যার নিজে সেই কলম দিয়ে তাঁর মাস্টার্সের ফরম পূরণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যখন তোমার মাস্টার্সের ফরম পূরণ করবে, তখন এই কলম দিয়েই করো।’
স্যারের দেওয়া কলমটি এখনো যত্নে রেখেছি এবং বিশেষ দিনে সেটি দিয়েই স্বাক্ষর করি। প্রতিবার কলমটি হাতে নিলে মনে হয়, স্যারের আশীর্বাদ আমার সঙ্গে আছে।
আমার জীবনের প্রতিটি শিক্ষক, যাঁরা ক্লাসে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, ধৈর্য দেখিয়েছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন—তাঁদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা রইল। তাঁরা শুধু জ্ঞানই দেননি, বরং আমাদের জীবনের দিক নির্ধারণ করেছেন, আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন এবং আমাদের ভেতরের শক্তিকে প্রসারিত করেছেন।
তাই গর্বের সঙ্গে বলতে পারি—আমার শিক্ষকেরা আমার অনন্ত প্রেরণা, জীবনের আলো। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা চিরকাল থাকবে।
সদস্য, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা