গোলাপ গ্রামে একদিন

গোলাপের আধিপত্যে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের নাম লোকমুখে পরিচিতি পেয়েছে ‘গোলাপ গ্রাম’ হিসেবেছবি: প্রথম আলো

গত ১৬ আগস্ট, শনিবারের সকালটা আর দশটি দিনের মতোই সাদামাটা ছিল—অন্তত আর দশজনের কাছে। কিন্তু আমার কাছে ছিল একটি বিশেষ সকাল।

সকালে আমরা গিয়েছিলাম সাভারের বিখ্যাত গোলাপ গ্রামে, যা বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর মোস্তফাপুর আর শ‍্যামপুরজুড়ে বিস্তৃত। সহপ্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে বাসে করে রওনা হলাম ঢাকার শাহবাগ থেকে। বাংলা একাডেমির উদ‍্যোগে আয়োজিত লেখক প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রশিক্ষণার্থী ছিলাম আমরা। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটানোই ছিল উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণার্থী ছাড়াও বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা ছিলেন সঙ্গে।

গোলাপ গ্রামে পৌঁছেই চোখে পড়ল দিগন্তজোড়া গোলাপের বাগান। নানা রঙের গোলাপ। যেন জমি নয়, রঙিন কার্পেট মোড়ানো। হালকা হাওয়া বইছে, আর সেই বাতাসে মিশে আছে গোলাপের মিষ্টি সুবাস—মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি যেন আমাদের জন্য সেজেগুজেই বসে ছিল।

আরও পড়ুন

ফুলের বাগানে ঘোরাঘুরি শেষে আমরা অংশ নিই নৌকাভ্রমণে। জলপথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। চারপাশের প্রকৃতি আর জলরাশির মিতালি এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দিচ্ছিল মনে। মনে হচ্ছিল, আমরা যেন স্বর্গের পথে ভেসে চলেছি।

নৌকাভ্রমণ শেষ করে আমরা একটি রিসোর্টে গিয়ে সুইমিং করলাম। বন্ধুদের দুষ্টুমিতে মুহূর্তগুলো রঙিন আর মোহময় হয়ে উঠেছিল।

সন্ধ্যায় উপভোগ করলাম মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অণিমা রায়। তাঁর কণ্ঠে ‘আমারও পরানও যাহা চায়’ গানটি যেন সন্ধ্যার নরম আলোয় হৃদয়ের গোপন দরজা খুলে দিয়েছিল। অনুষ্ঠান ছেড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নয়টার দিকে উঠতে হলো।

ফিরে আসার সময় বাসের জানালার পাশে বসে চারপাশে ছুটে চলা প্রকৃতি আর ফেলে আসা মুহূর্তগুলোর কথা ভাবছিলাম। একধরনের স্মৃতিকাতরতা যেন চুপিসারে এসে বসেছিল পাশে। কিছু সফর হয়, যেগুলো আমাদের শুধু আনন্দই দেয় না, মনেও রেখে যায় একটুকরা আলো। এই সফরটা ছিল তেমনই।