শীতের আগমনী ভোরে তিন নদীর মোহনার শহরে

প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে এই এলাকার সৌন্দর্যছবি: লেখকের সৌজন্যে

অক্টোবরের শুরু। হালকা শীতের আগমনী হাওয়া গায়ে লেগে মনে এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি জাগায়। ঠিক এমন সময় বেরিয়ে পড়ি ঢাকা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের শহর—চাঁদপুরের পথে।

এক বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক করেছিলাম চাঁদপুর শহরটা ঘুরে দেখব। ভোর সাড়ে পাঁচটায় মোটরবাইকে চেপে ঢাকা থেকে রওনা দিলাম। তখনো পুরো শহর ঘুমে আচ্ছন্ন—নিস্তব্ধ রাস্তাঘাট, হালকা কুয়াশা আর শীতল বাতাস যেন নতুন দিনের শুভারম্ভের বার্তা দিচ্ছিল।

কাঁচপুর ব্রিজ পেরোতেই সূর্যের প্রথম আলো আকাশে রং ছড়াতে শুরু করেছে। ঘণ্টা দেড়েক চলার পর পৌঁছালাম কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। রাস্তার ধারের এক চায়ের দোকানে গরম চা আর হালকা নাশতা সেরে আবার যাত্রা শুরু করলাম।

পাখিদের চেঁচামেচির শব্দ আর নদীর পানির ছলছল ভাব এক ভিন্নধর্মী মিতালি তৈরি করে
ছবি: লেখক

তারপর একটানা ছুটে চলা; আঁকাবাঁকা রাস্তা, সবুজের ভেতর দিয়ে মোটরবাইকের গতি, মাঝেমধ্যে নদীর সোঁদা গন্ধ আর গ্রামের শান্ত নীরবতা। ঘণ্টা দেড়েক পর অবশেষে পৌঁছে গেলাম চাঁদপুর শহরে—পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার মিলনস্থল, নদীর ঢেউয়ের মতোই প্রাণবন্ত সেই শহরে।

চাঁদপুর এর আগে কখনো যাওয়া হয়নি। এবারেই প্রথম সঙ্গী বড় ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। চাঁদপুরের মানুষের আতিথেয়তা, আন্তরিকতা সত্যি অসাধারণ।
দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম লঞ্চ ঘাটে। সারি সারি লঞ্চ সাজিয়ে রাখা হয়েছে ঘাটে। বিশাল আকৃতির লঞ্চ এর আগে কখনো সামনে থেকে দেখিনি। যাত্রীবাহী এসব লঞ্চে সে কি বিশাল কর্মযজ্ঞ! উন্নত মানের কেবিন–সুবিধা, ক্যানটিন ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ইমার্জেন্সি সময়ে চিকিৎসাব্যবস্থা। চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা হলো।

তারপর চলে গেলাম চাঁদপুরের বিখ্যাত বড় স্টেশন, যাকে বলা হয় তিন নদীর মোহনা। পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল বড় স্টেশন ঘুরতে এলে যেকোনো ভ্রমণপিয়াসী মানুষের মন কেড়ে নেবে। ইট-সিমেন্টের তৈরি পাটাতনে বসে তিন নদীর উত্তাল ঢেউ, ছোট ছোট ডিঙিতে মাছ ধরা, স্টিমারে করে পর্যটকদের ঘোরাঘুরি, বড় বড় যাত্রীবাহী কিংবা মালবাহী লঞ্চ দেখতে অসাধারণ লাগে।

আরও পড়ুন
গোধূলির রক্তিম সূর্য যখন নদীর ওপারে তলিয়ে যায় তখন মনে হয়, এই বুঝি মোহনার ঢেউ সূর্য খেয়ে নিল!
ছবি: লেখক

প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে এই এলাকার সৌন্দর্য। পাখিদের চেঁচামেচির শব্দ আর নদীর পানির ছলছল ভাব এক ভিন্নধর্মী মিতালি তৈরি করে। গোধূলির রক্তিম সূর্য যখন নদীর ওপারে তলিয়ে যায় তখন মনে হয়, এই বুঝি মোহনার ঢেউ সূর্য খেয়ে নিল! সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে কখন যে সময় পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এল, টেরই পেলাম না।

এবার বাড়ি ফেরার পালা। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে রাতের খাবার শেষ করে রওনা হলাম ঢাকার উদ্দেশে। এক দিনের লম্বা সময় ভ্রমণে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে কিছুটা সময় দিতে পেরে শরীরের সব ক্লান্তি অবসাদ দূর হয়ে গেছে। রাতের সব অন্ধকার, নীরবতা পাশ কাটিয়ে আমরা ঢাকায় পৌঁছালাম রাত ১২টায়।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের শহর চাঁদপুরের মানুষ অসাধারণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি জেলা। এ যাত্রায় ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশের শহরে ইলিশ পাইনি। খুব শিগগিরই আরেকবার যেতে চাই এবং ইলিশ খেতে চাই।

প্রচার সম্পাদক, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা