বাইসাইকেল উদ্ভাবন: কখন ও কীভাবে এলো

বাইসাইকেলছবি: ফ্রিপিক

বাইসাইকেলের নাম শুনলেই মনে পড়ে শৈশব-কৈশোরের কথা। যেটার সাহায্যে ছুটে যেতাম স্কুলে, খেলার মাঠে, বন্ধুদের বাড়ি। ক্লাসে কারও না কারও এ বাহনটি থাকত, হতো প্রতিযোগিতা—কে আগে পৌঁছাবে!

বাইসাইকেল দুই চাকার প্যাডেলচালিত এক পরিবেশবান্ধব বাহন। দুটি চাকা একটি ফ্রেমে সংযুক্ত, সামনে হ্যান্ডল, মাঝখানে প্যাডেল ও চেইন ড্রাইভ—এসব মিলেই এর চলনব্যবস্থা। বাইসাইকেল আরোহীকে ইংরেজিতে সাইক্লিস্ট, বাংলায় সাইকেল আরোহী বলা হয়। শুধু যাতায়াতই নয়, এটি বহু মানুষের নিত্যদিনের ব্যায়ামসঙ্গী; অনেকের কাছে স্বাধীনতা ও আনন্দের প্রতীক। বাইসাইকেল চড়ে বহু মানুষ গড়েছেন অনন্য ইতিহাসও—যেমন ভারতের নারপত (Narpat) সিং রাজপুরোহিত ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে একটানা সাইক্লিং করে ৩০,১২১.৬৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গিনেস রেকর্ড গড়েছেন।

কখন ও কীভাবে এসেছে
বাইসাইকেলের জন্ম এক দিনে নয়—অনেক বছরের উদ্ভাবন-চর্চার ফল। ১৫ শ শতকে ইতালীয় প্রকৌশলী জিওভান্নি ফন্টানা চার চাকাযুক্ত, দড়িচালিত মানবশক্তিচালিত একটি যন্ত্র বানিয়েছিলেন—যদিও তা আধুনিক বাইসাইকেলের সরাসরি পূর্বসূরি নয়। আধুনিক দুই চাকার ধারার সূচনা ধরা হয় ১৮১৭ সালে জার্মান উদ্ভাবক ব্যারন কার্ল ফন ড্রেইস-এর Laufmaschine বা ‘ড্রাইসিয়েন’ থেকে। আর ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ উদ্ভাবক জন কেম্প স্টার্লি বানান ‘রোভার সেফটি বাইসাইকেল’, যেটিকে আজকের বাইসাইকেলের আদিরূপ ধরা হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশে প্রচলন
ঔপনিবেশিক আমলে ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে ভারতীয় উপমহাদেশে সাইকেল আসে এবং বিংশ শতকে শহরাঞ্চলে তা বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রেক্ষাপটটা এমনই। গ্রামবাংলায় একসময় যাঁর বাড়িতে সাইকেল থাকত, তাঁকে সচ্ছল ধরা হতো; শিক্ষক, চিকিৎসকসহ নানা পেশার মানুষ নিয়মিত সাইকেলে যাতায়াত করতেন।

আরও পড়ুন

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বাইসাইকেল
দেশে রপ্তানিমুখী সাইকেলশিল্প গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম ইপিজেডে ‘আলিটা (বিডি) লিমিটেড’ কারখানা চালুর মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে আলিটা বাংলাদেশ বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে এবং দেশের প্রথম রপ্তানিমুখী সাইকেল কারখানা হিসেবে বাজারে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সাইকেল পরিচিতি পায়। এরপর ধীরে ধীরে মেঘনা গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হয়।

বাইসাইকেল চালানো কতটা স্বাস্থ্যকর
গবেষণা বলছে, নিয়মিত সাইক্লিং দারুণভাবে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমায়। ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়—সাইকেলে অফিসে যাতায়াতকারীদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি ৪১ শতাংশ কম; পাশাপাশি হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে।‎

কুতুবদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার