নেতৃত্বের মাধ্যমে সহকর্মীদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপনের উপায়
দলের মধ্যে সমন্বয়, আত্মবিশ্বাস ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর মূল ভিত্তি হলো একে অপরের প্রতি বিশ্বাস। তাই দলের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন ও ভালো সম্পর্ক তৈরি করাটা নেতৃত্বের অন্যতম গুণাবলি। তবে কিছু কিছু নেতা আছেন যাঁরা এই ব্যাপারটায় তেমন গুরুত্ব দিতে চান না।
কেন বিশ্বাস স্থাপন গুরুত্বপূর্ণ
যে কর্মীরা নেতাকে বিশ্বাস করেন, তাঁদের কাজের মানও অনেক ভালো হয়। পাশাপাশি বিশ্বাস একে অপরের প্রতি যোগাযোগ আরও সহজ করে দেন। কর্মীরা আরও বেশি আইডিয়া শেয়ার করতে উৎসাহী হন, যেকোনো প্রয়োজনে কথা বলে এবং দলের অন্যদের সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ করেন।
কর্মীদের সঙ্গে বিশ্বাস ও সুন্দর সম্পর্ক থাকলে উভয়পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কমে যাবে, কেউ একে অন্যের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করবেন না। একে অপরের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকবে। তখন কেউ যদি আপনার কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেন, আপনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেবেন না; বরং অভিযোগটি যাছাই বাছাই করে তারপর মন্তব্য করবেন।
কীভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবেন
দলের সদস্যদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন ও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে খুব কঠিন কিছু করতে হবে না। সংক্ষিপ্ত, উদ্দেশ্যমূলক কথোপকথনই বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট হতে পারে। যেমন—
• সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য নির্দিষ্ট সময় আলাদা করে রাখা
• অন্যদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো
• সচেতনভাবে অন্যদের জীবনের খোঁজ নেওয়া
• অর্থবহ প্রশ্নের মাধ্যমে কথা বলা
• আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেকে কাজের মান বাড়ানোর জন্য সময় দেওয়া
যে কর্মীরা তাঁদের নেতাকে বিশ্বাস করেন, সেই কর্মীরা কাজে আরও বেশি সম্পৃক্ত, উৎপাদনশীল ও সহযোগিতামূলক হয়ে থাকেন। যে দলের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো, তাঁদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও ঝামেলা খুবই কম হয়। আর নেতা তাঁর দলকে আরও সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
বিশ্বাস স্থাপন করার পদ্ধতি যেভাবে প্রয়োগ করবেন
• নির্দিষ্ট সময় আলাদা করে রাখা: একেক দিন একেকজন কর্মীর সঙ্গে বসে কথা বলার জন্য প্রতিদিনের ক্যালেন্ডারে নির্দিষ্ট সময় রাখুন, বিশেষ করে যাঁরা দলের নতুন সদস্য। হতে পারে সেটা লাঞ্চের সময় কিংবা নাশতার বিরতিতে। কোথাও না বসে হেঁটে হেঁটেও কথা বলতে পারেন। যেসব কথা বলবেন সেগুলো যেন অর্থবহুল হয়।
• আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো: মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলা শুরু করুন। পুরো কথোপকথনে এমন হাসি বজায় রাখুন। ভদ্রভাবে কথা বলুন, যাতে সামনে থাকা ব্যক্তিটি অনুভব করতেন পারেন আপনি তাঁকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু জেনে নিতে পারেন; যেমন তাঁর কোনো বিশেষ গুণ থাকলে সেটা, কিংবা বাসায় পোষাপ্রাণী থাকলে সেটির কথা। কথোপকথনের সময় তথ্যটি উল্লেখ করলে সামনে থাকা মানুষটি আরও বেশি খুশি হবেন।
• সচেতনভাবে জীবনের খোঁজ নেওয়া: ‘কাজ কেমন যাচ্ছে?’ এমন প্রশ্ন শুরুতেই না করে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘কাজে সবচেয়ে ভালো লাগে কোন বিষয়টা কিংবা চ্যালেঞ্জিং কোনটা?’ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন আছেন সেটাও জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না। তথ্য জানার জন্য জোর করবেন না। দেখুন তিনি কী কী নিজ থেকে শেয়ার করতে চায়, সেটাই শুনুন। শুরুতে নিজের সম্পর্কেও কিছু বলতে পারেন, তাহলে কর্মী আরও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
• অর্থবহ প্রশ্নের মাধ্যমে কথা বলা: আগের করা কথোপকথন থেকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেন। যেমন, সহকর্মী যদি পূর্বে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কোনো ঘটনা শেয়ার করে; হতে পারে পরিবারের কেউ অসুস্থ, কিংবা অন্য কোনো ঘটনা। সে বিষয়ে এখন কী অবস্থা তা জিজ্ঞেস করতে পারেন। তবে, এমন কিছু জানতে চাইবেন না, যেটা তিনি বলতে চাচ্ছে না।
• কাজের মান বাড়ানোর জন্য সময় দেওয়া: প্রতিবার কথোপকথনের পর, কোন কাজটা ভালো হচ্ছে এবং কোনটা ভালো হতে পারে তা খেয়াল করুন। আপনি যে সহকর্মীকে মূল্যায়ন করছেন, সেটা কি তাঁকে বোঝাতে পারছেন? সামনে সম্পর্ক আরও ভালো কারার কোনো সুযোগ আছে কি? এই পদক্ষেপগুলো নিতে আপনার খুব বেশি সময় নষ্ট হবে না।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে