অপছন্দের চাকরিতেও জীবনকে যেভাবে অর্থবহ করবেন

যেখানে চাকরি করছেন, সেই কাজ যদি ভালো না বাসেন, তাহলে তা ছেড়ে দিতে হবে—এমন কোনো কথা নেইছবি: এআই/বন্ধুসভা

যেখানে চাকরি করছেন, সেই কাজ যদি ভালো না বাসেন, তাহলে তা ছেড়ে দিতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। তবু কখনো কখনো কর্মস্থলের কাজ বা সেখানের পরিবেশের প্রতি অসন্তোষ এতটাই বেশি হয় যে চাকরি ছেড়ে দিতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫১ শতাংশ কর্মী সরাসরি নতুন চাকরির সুযোগ খুঁজছেন। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কর্মী অন্য কিছু খুঁজছেন। এটি স্পষ্টভাবে দেখায়, মানুষ তাদের বর্তমান কাজ নিয়ে কতটা অসন্তুষ্ট।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রতিবেদনেও একই রকম তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র ৩০ শতাংশ মার্কিন চাকরিজীবী তাঁদের বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট এবং মাত্র ২৬ শতাংশ তাঁদের পদোন্নতির সুযোগ নিয়ে সন্তুষ্ট বোধ করেন। এ তথ্য থেকে সহজেই বলা যায়, প্রায় সবারই আরও আদর্শ চাকরির খোঁজে থাকা উচিত, যে কাজটি অনুপ্রেরণামূলক ও অর্থবহ।

সত্যটা হলো অর্থবহ জীবন কাটানোর জন্য কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি খুঁজে বের করা জরুরি নয়। জীবনকে আরও পরিপূর্ণ করতে চাকরি পরিবর্তনই একমাত্র মাধ্যম নয়। নির্দিষ্ট চাকরির বাইরেও অন্য কাজে সময় দিয়ে জীবনকে অর্থবহ করে তোলা যায়।

অপছন্দের চাকরিতে থেকেও জীবনকে অর্থবহ করে তোলার উপায়
১. চাকরির বাইরে জীবনের অর্থ খুঁজুন: আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষণা অনুযায়ী, মার্কিন নাগরিকেরা প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা অবসর সময় পান। বাংলাদেশের কথা বিবেচনা করলে সময়টা কারও কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি হয়ে থাকে। এর বাইরে সাপ্তাহিক ও অন্যান্য সরকারি ছুটি রয়েছে। এই সময়গুলো জীবনকে অর্থবহ করে তোলার জন্য দারুণ সুযোগ।

যদি আপনি আপনার চাকরি ভালো না বাসেন, কিন্তু আর্থিক বাস্তবতার কারণে থাকতে হয়, তাহলেও আপনি এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। এটি এমন কিছু, যা আপনি ভালোবাসেন। হতে পারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা, শিল্পকর্ম তৈরি করা, পছন্দের কাজ খুঁজে ফ্রিল্যান্সিং করা, অথবা পরিবার ও আপনজনদের ভালোর জন্য কিছু করা।

আরও পড়ুন

২. কাজে উদ্দেশ্য আনা: যদি আপনার কাজ মোটেও সন্তোষজনক মনে না হয়, তবু আপনি এর মধ্যে ছোট ছোট অর্থপূর্ণ জায়গা তৈরি করতে পারেন।

এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে মার্কিন লেখক জর্ডান গ্রুমেট এমডি তাঁর এক মেয়েবন্ধুর গল্প তুলে ধরেন। জর্ডান গ্রুমেট বলেন, ‘আমার একজন করপোরেট বন্ধু আছে। সে একবার বলেছিল, তার চাকরিটা মোটামুটি চলে। বেতন ভালো এবং তার অন্য কোনো বিশেষ দক্ষতা না থাকায় সে চাকরিটা ধরে রেখেছিল। তবে সে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গসমতার বিষয়টি গভীরভাবে গুরুত্ব দিত। নিজের প্যাশনের জায়গা থেকে সে নারী নেতৃত্বের ওপর একটি ব্লগ শুরু করেছিল। অফিসের ভেতর কয়েকটি কর্মশালাও করে এবং সেটা নিয়মিত করার জন্য কোম্পানিকে প্রস্তাব দেয়।’

‘কোম্পানি ইতিবাচক সাড়া দেয়। তখন অফিসের বস আমার বন্ধুটির বেতন অপরিবর্তিত রেখে কাজের সময় আংশিক কমিয়ে আনে, যাতে সে আরও কর্মশালার কোর্স তৈরি করতে সময় পায় এবং অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের মধ্যে সেগুলো শেয়ার করে। সে নতুন কোনো অর্থবহ চাকরি খোঁজেনি, বরং যেখানে ছিল, সেটার মধ্যেই অর্থপূর্ণ কিছু খুঁজে নিয়েছে,’ যোগ করেন জর্ডান গ্রুমেট।

মূল কথা হলো জীবন অর্থবহ করার জন্য সব সময় পুরো ক্যারিয়ার পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। কখনো কখনো সেটির দরজা খোলা থাকে, আপনাকে কেবল তা খুঁজে নিতে হবে।

৩. যা পছন্দ করেন না, তা ছেড়ে দিন: ধরুন, আপনি আপনার কাজে নতুন কোনো উদ্দেশ্য যোগ করতে পারছেন না, তাহলে কী করবেন? যে কাজ আপনাকে ক্লান্ত করে, বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়, তা ছেড়ে দিবেন?

এ ক্ষেত্রে কার্যকর একটি উপায়ের কথা শেয়ার করেছেন জর্ডান গ্রুমেট এমডি। তিনি একজন চিকিৎসকও। জর্ডান গ্রুমেট বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক। অনেক বছর ধরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সেবা দিয়েছি, আবার বাইরে ক্লিনিকে আসা রোগীদেরও সেবা দিয়েছি। একটা সময় বুঝতে পেরেছি, ক্লিনিকে রোগী দেখাটা আমাকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করায়। অন্যদিকে হাসপাতালের কাজ আমাকে ক্লান্ত করে দেয়। তখন সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সময়সূচির মধ্যে একটা ভারসাম্য নিয়ে আসলাম। আমি ক্লিনিকে বেশি সময় দিতাম, হাসপাতালে কম; অন্য সহকর্মীরা হাসপাতালে বেশি সময় দিত, ক্লিনিকে কম।’

‘আমার কাজ বদলায়নি। বেতন কমেনি। কিন্তু কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বেড়েছে,’ যোগ করেন এই চিকিৎসক। তিনি আরও বলেন, ‘আপনার কাছে হয়তো সব সময় এ ধরনের বিকল্প না-ও থাকতে পারে; তবু বস বা ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেও কাজের ক্ষেত্রে ভারসাম্য নিয়ে আসা সম্ভব।’

অর্থবহ জীবন কাটাতে পছন্দের কাজের চাকরির প্রয়োজন নেই
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা তাঁদের বর্তমান চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। যে কাজটা করছেন, সেটা তাঁর প্যাশনের কাজ নয়। তবু তা করছেন। কারণ, মাস শেষে ভালো পরিমাণের একটা বেতন পাচ্ছেন।

জর্ডান গ্রুমেট বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন একটি বাস্তবসম্মত মডেল, যেখানে আমরা কাজের বাইরে জীবনকে অর্থপূর্ণ করতে পারি, যেখানে নির্দিষ্ট কাজের বাইরে মাঝেমধ্যে সেই কাজেও অর্থবহ কিছু নিয়ে আসতে পারব। তাই বলব, আপনার চাকরির প্রতি ভালোবাসার দরকার নেই। কিন্তু আপনার জীবনের প্রতি ভালোবাসা অবশ্যই থাকতে হবে।’

সূত্র: সাইকোলজি টুডে