চাকরি পরামর্শ
ইন্টারভিউ শেষে আপনার করণীয়
আজকের প্রতিযোগিতামূলক যুগে চাকরি পাওয়া সহজ নয়। একজন প্রার্থীকে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা দিয়েই নয়, তাঁর আত্মপ্রকাশ, যোগাযোগ দক্ষতা এবং প্রস্তুতিও নির্ধারণ করে তিনি কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পাবেন কি না। অনেক সময় দেখা যায়, যোগ্য প্রার্থীরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে আত্মবিশ্বাস হারান বা সামান্য ভুলে সুযোগ হারিয়ে ফেলেন। তাই ইন্টারভিউর আগে, সময়কালে এবং পরে কিছু মৌলিক বিষয় জানা থাকলে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তৃতীয় পর্বে থাকছে ইন্টারভিউ শেষে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ।
ইন্টারভিউ শেষ হওয়া মানেই কাজ শেষ নয়; বরং এখান থেকেই শুরু হয় পেশাদার ফলোআপ পর্ব। ইন্টারভিউ শেষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত ও ভদ্র ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ ই–মেইল পাঠানো অত্যন্ত জরুরি। এটি আপনার পেশাদারত্ব, কৃতজ্ঞতা এবং আগ্রহের প্রতিফলন ঘটায়।
এই ছোট, কিন্তু প্রভাবশালী ই–মেইল আপনার পরিপক্বতা, ভদ্রতা ও আগ্রহ প্রকাশ করবে। অনেক সময় এই ধন্যবাদ ই–মেইলই অন্য প্রার্থীদের তুলনায় আপনাকে এক ধাপ এগিয়ে রাখে। কারণ, এটি দেখায় আপনি শুধু ইন্টারভিউ নয়, যোগাযোগের প্রতিটি ধাপকেই গুরুত্ব দেন।
ফিডব্যাকের অপেক্ষা করুন
ইন্টারভিউর পরপরই সিদ্ধান্ত পাওয়া না-ও যেতে পারে। কোম্পানি অনেক সময় প্রার্থীদের মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় নেয়। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করা ভালো। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো উত্তর না পান, তবে বিনয়ের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত ফলোআপ ই–মেইল পাঠাতে পারেন।
আর যদি কোম্পানি থেকে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া বা রিজেকশন পান, সেটিকে হতাশার জায়গা না বানিয়ে শেখার সুযোগ হিসেবে নিন। আপনি ভদ্রভাবে জানতে পারেন—‘থ্যাংক ইউ ফর লেটিং মি নাউ। আই’উড রিয়েলি অ্যাপ্রিশিয়েট ইফ ইউ কুড শেয়ার অ্যানি ফিডব্যাক অর এরিয়াস হয়ার আই ক্যান ইমপ্রুভ ফর ফিউচার অপরচুনিটিস।’
এভাবে জিজ্ঞেস করলে ইন্টারভিউ বোর্ড বুঝবে আপনি পেশাদার, উন্নয়নমুখী এবং আত্ম–উন্নয়নে আগ্রহী, যা ভবিষ্যতে অন্য সুযোগের সময় আপনার জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইন্টারভিউ শেষে নিজেকে বিশ্লেষণ করুন
ইন্টারভিউ শেষ মানেই কাজ শেষ নয়—বরং এখান থেকেই শুরু হয় আপনার শেখার নতুন অধ্যায়। একজন সচেতন প্রার্থী সব সময় নিজের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে দেখে কোথায় ভালো করেছেন, কোথায় উন্নতির সুযোগ আছে। নিচে কিছু বিষয় বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো, যা আপনাকে প্রতিটি ইন্টারভিউর পর আরও প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে—
প্রতিটি ইন্টারভিউ শুধু মূল্যায়নের সুযোগ নয়, বরং আত্ম–উন্নয়নের ধাপও বটে।
• কোন প্রশ্নে ভালো উত্তর দিয়েছি? ইন্টারভিউর সময় এমন কিছু প্রশ্ন থাকে, যেখানে আপনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিয়েছেন। ভাবুন—কোন প্রশ্নে আপনি সাবলীল ছিলেন। কোন জায়গায় ইন্টারভিউ বোর্ডের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন (যেমন মাথা নেড়ে সম্মতি, হাসি বা ফলোআপ প্রশ্ন)। এই প্রশ্নগুলো চিহ্নিত করুন এবং লিখে রাখুন। ভবিষ্যতে এসব উত্তর আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং একই ধরনের প্রশ্নে আরও পরিপক্বভাবে উত্তর দিতে সাহায্য করবে।
• কোথায় দ্বিধায় পড়েছিলাম? সব ইন্টারভিউয়ে কিছু প্রশ্ন থাকে, যেখানে আপনি অনিশ্চিত বা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন—কোন প্রশ্নে আপনি থেমে গিয়েছিলেন বা সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারেননি। প্রশ্নটি কি আপনার প্রস্তুতির বাইরে ছিল নাকি আপনি ভাষাগতভাবে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। এই অংশ বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারবেন কোন জায়গায় আরও কাজ করতে হবে—জ্ঞান, ভাষা বা আত্মবিশ্বাস—কোনটি ঘাটতি ছিল।
• ভবিষ্যতে কীভাবে আরও ভালো করা যায়? প্রতিটি ইন্টারভিউ একেকটি শেখার সুযোগ। তাই ভাবুন, পরের ইন্টারভিউর আগে কোন বিষয় নিয়ে আরও পড়াশোনা করবেন। কোন প্রশ্নে আপনার প্র্যাকটিস বাড়ানো দরকার। শরীরের ভাষা, চোখের যোগাযোগ বা সময় ব্যবস্থাপনায় কোথাও উন্নতি করা সম্ভব কি না। আপনি চাইলে এক পৃষ্ঠার ‘ইন্টারভিউ রিভিউ নোট’ রাখতে পারেন, যেখানে লিখবেন—আজকের ইন্টারভিউর ভালো দিক, দুর্বল দিক, শেখা বিষয়, পরবর্তী ইন্টারভিউর পরিকল্পনা।
প্রতিটি ইন্টারভিউ শুধু মূল্যায়নের সুযোগ নয়, বরং আত্ম–উন্নয়নের ধাপও বটে। আপনি যদি নিয়মিত এই নিজের বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন, তাহলে প্রতিটি পরবর্তী ইন্টারভিউয়ে নিজেকে আগের চেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী, প্রস্তুত ও পেশাদাররূপে খুঁজে পাবেন।
শেষ কথা
চাকরির ইন্টারভিউ এক দিনের বিষয় হলেও এর প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সঠিক প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস, সৌজন্য আর পেশাদার আচরণ—এই চার গুণই একজন প্রার্থীকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
লেখক: প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, বিক্রয় ডটকম