অফিসে সর্বোচ্চ এফোর্ট দিয়েও আউটপুট নেই? আসল কারণ

কোনো কিছুই সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি সেই কাজটা করছে। কর্মক্ষেত্রে আপনিই সেই ব্যক্তিছবি: এআই/বন্ধুসভা

কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি দিন আপনি ১০০ ভাগ শ্রম দিচ্ছেন। সহকর্মীদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। তবু মনে হচ্ছে, আপনার কাজের ফলাফল বা মান ভালো হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সাইকোলজি টুডেতে এক পেশাজীবী তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন। সেখানকার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যখন প্রথম কাজ শুরু করি, মনে হয়েছিল যেন কোনো অচেনা পরিবেশে এসে পড়েছি। কাজের মধ্যে আগের প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ছিল না। ক্লায়েন্ট প্রকল্পগুলো ছিল ছোট। আর হঠাৎ হঠাৎ আমাকে এক প্রকল্প থেকে সরিয়ে অন্য প্রকল্পে কাজ করতে দেওয়া হতো। কার অধীনে কোন ক্লায়েন্ট প্রকল্প চলছে, তার ওপর নির্ভর করত কাজের পরিকল্পনা থাকবে কি না। এর ফলে অগ্রাধিকার ঠিক রাখা, সংগঠিত থাকা আর মনোযোগ ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

‘এ কারণে বারবার ভুল করতাম। প্রতিদিন সময়ের আগে অফিসে আসতাম, দেরি করে বের হতাম; আসলে সময় নষ্ট করতাম। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করছিলাম। কিন্তু ফলাফল সে অনুযায়ী আসত না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছিল। একদিন এক সহকর্মীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। তিনি আমাকে বলেন, “দেখো, আমি এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তাই বুঝতে পারি, তুমি কী অনুভব করছ। তুমি আগে একটা কাঠামোবদ্ধ পরিবেশে অভ্যস্ত ছিলে। এখানে কেউ তোমাকে সেই কাঠামো দেবে না। নিজেকেই নিজের কাজের চারপাশে কাঠামো তৈরি করতে হবে।’”

আরও পড়ুন

পেশাজীবী আরও বলেন, ‘আমি বুঝতে পারলাম, সময়কে আরও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। কাজের হিসাব রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিজস্ব অগ্রাধিকার, সময়সূচি, টু-ডু লিস্ট, এমনকি কাজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য চেকলিস্ট—সবকিছু নিজেকেই তৈরি করতে হবে। তার পর থেকে আর সমস্যা হয়নি।’

কাজের সঠিক ফলাফল পেতে কী করবেন—
• সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন:
—কখন অফিসে প্রবেশ করছেন
—কোন কোন কাজে কতটুকু সময় ব্যয় করছেন
—নির্দিষ্ট কাজে কতটুকু সময় ব্যয় করা উচিত
—অফিস থেকে কখন বের হচ্ছেন

এই বিষয়গুলো নোট করে রাখুন। তাহলে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা যাবে এবং কাজের মানও বাড়বে।

• কাজের প্রাধান্য নির্ধারণ করুন: অফিসের সময় নির্ধারিত। এর মধ্যেই প্রতিদিন অনেক কাজ করতে হয়। সব কাজ গুরুত্বপূর্ণ হলেও কিছু বিষয় সবার আগে শেষ করতে হয়। তাই কাজের প্রাধান্য নির্ধারণ করুন—প্রথমে কোন কাজটা করবেন, এরপর কোন কাজটা করবেন এবং ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য কাজ শেষ করা।

• কাজের পরিকল্পনা করুন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন: যেকোনো কাজের পরিকল্পনা করার আগে জেনে নিন, ওই কাজ করতে ঠিক কতটুকু সময় ব্যয় হবে। বড় কোনো প্রকল্প হলে সেটাকে ছোট ছোট সহজে সম্পন্নযোগ্য কাজে ভাগ করে নিন। প্রতিটি ধাপ শেষ করতে কত সময় লাগতে পারে, তা হিসাব করুন এবং সেভাবে একটি কার্যপরিকল্পনা তৈরি করে ফেলুন। প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে পূর্বে পরিকল্পনা করা সময়সূচির সঙ্গে মিলিয়ে নিন। এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে যেকোনো কাজের পরিকল্পনা করতে সহায়ক হবে।
• নোট লিখুন, চেক লিস্ট তৈরি করুন: প্রতিদিনের কাজের নোট রাখাটা একটা পদ্ধতি। যদি আপনি এই পদ্ধতি মেনে চলতে পারেন, তবে এটা আপনার কাজের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে। নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারবেন।

পদক্ষেপ নিন এবং এগিয়ে যান
কোনো কিছুই সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি সেই কাজটা করছে। কর্মক্ষেত্রে আপনিই সেই ব্যক্তি। যদি কাজ থাকে ১০০ জন মানুষকে ফোন করা, তাহলে প্রথমজনকে কল করে কাজটা শুরু করুন। এভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় থেকে ধীরে ধীরে সবাইকে কল দেওয়া। প্রতিটি কল আপনার কাজের অগ্রগতি। তখন দেখবেন কাজের ফলাফল ভালো হচ্ছে।