টাকা নাকি কাজের ধরন, কোনটি গুরুত্বপূর্ণ?

কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণা আসে আগ্রহ বা ব্যক্তিগত মূল্যবোধ থেকেছবি: ফ্রিপিক

বর্তমানে বিশ্বের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এমন কর্মী চায়, যারা নিজের ভেতরের আগ্রহ ও দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করবে। একই সঙ্গে তারা বিশ্বাস করে, কর্মীদের বোনাস দিলে আরও ভালো কাজ করবে এবং বেশি খুশি থাকবে।

আমরা জানি, এই পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য বেতন বা অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অর্থ কি সত্যিই আমাদের কর্মদক্ষতা বাড়ায়? এটা কি আমাদের কর্মজীবনে বিকশিত হতে সাহায্য করে?

অনেক গবেষণা দেখায় যে, ‘পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বেতন’ পদ্ধতি কর্মদক্ষতা বাড়ায়। কিন্তু এসব গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করা হয়েছে—কাজের নকশা বা কাজের ধরন।

সাধারণত যে কাজগুলো বেশি জটিল (যেখানে তথ্য বিশ্লেষণ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা লাগে), এবং যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা বেশি (যেমন ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্বের ভূমিকা)—সেই কাজগুলোতে সাধারণত বেশি বেতন দেওয়া হয়। কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে বোনাসও দেওয়া হয়।

তবে এই গবেষণাগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিস করেছে—কাজের ধরন ও কাঠামোই আসল প্রভাবক হতে পারে। অতীত গবেষণা বলছে, কাজের ধরন কর্মপ্রেরণায় বিশাল প্রভাব ফেলে। এই বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের গবেষকদের সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা করেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিউচার অব ওয়ার্ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ম্যারিলেন গ্যানে, পিএইচডি।

ম্যারিলেন গ্যানে বলেন, ‘আমরা তিনটি ভিন্ন কর্মী গোষ্ঠীর মধ্যে তুলনা করি। এক. তাদের বেতন (কত আয় করেন এবং তা কতটা কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভরশীল); দুই. কাজের নকশা (কাজ কতটা জটিল বা বৈচিত্র্যময়, কতটা স্বাধীনতা আছে, কতটা ফিডব্যাক পান)। আমরা দেখতে চেয়েছি, কোনটি কর্মীদের প্রেরণা, কর্মদক্ষতা ও সুস্থতায় বেশি প্রভাব ফেলে।’

আরও পড়ুন

‘আমরা বিশেষভাবে লক্ষ করেছি, কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণা আসে আগ্রহ বা ব্যক্তিগত মূল্যবোধ থেকে। কারণ, এ ধরনের প্রেরণাই কর্মদক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আমরা আরও বিশ্লেষণ করেছি—কর্মীদের কর্মদক্ষতা, কাজে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা, উদ্যোগী মনোভাব, এবং মানসিক অবস্থা,’ যোগ করেন ম্যারিলেন গ্যানে।

তাঁদের গবেষণার ফলাফল হলো—
১. কাজের ধরন সব সময় বেতনের চেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। দৈনন্দিন কাজের বৈশিষ্ট্যগুলোই কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা, কর্মদক্ষতা ও মানসিক সুস্থতা সৃষ্টি করে।
২. ‘পারফরম্যান্সভিত্তিক বেতন’ তেমন প্রভাব ফেলে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।

যখন কাজের ধরন বিবেচনায় আনা হয়, তখন দেখা যায় বোনাস বা প্রণোদনা তেমনভাবে প্রেরণা বাড়ায় না। কিছু ক্ষেত্রে বরং তা কর্মীদের অভিযোজন ক্ষমতা ও সৃজনশীল ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর কারণ, অতিরিক্ত প্রণোদনা মানুষকে মনে করায় যে তারা বাধ্য হয়ে কাজ করছে।

গবেষণার ভিত্তিতে পরামর্শ
১. অর্থ নয়, গুরুত্ব দিন কাজের ধরনে: জটিল বেতনকাঠামোর চেয়ে এমন কাজের পরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে মানুষ অর্থবহ, আকর্ষণীয় কাজ করবে; কিছু সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারবে, অথবা দলবদ্ধভাবে নিতে পারবে; এবং গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া পাবে। এগুলো কর্মীদের দক্ষতা, স্বাধীনতা ও সম্পর্কের চাহিদা পূরণ করে। যা প্রেরণা ও কর্মদক্ষতা বাড়ায়।

২. আর্থিক প্রণোদনা সীমিত রাখুন: অতিরিক্তভাবে ‘পারফরম্যান্সভিত্তিক বেতন’-এর ওপর নির্ভর করলে উল্টো ফল হতে পারে—বিশেষত যখন প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার সময় হয়।

৩. ন্যায্য মূল বেতনের ওপর গুরুত্ব দিন: একটি সুরক্ষিত ও ন্যায্য বেতন নিশ্চিত করুন, যাতে কর্মীরা জীবনের মৌলিক চাহিদা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে কাজের ওপর মনোযোগ দিতে পারে।

তবে মনে রাখবেন, বেতন কর্মীদের অনুপ্রেরণার মূল চালিকা শক্তি নয়।

সূত্র: সাইকোলজি টুডে