কম কথা বলেও নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব! কৌশল জেনে নিন
আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বসবাস করি, যেখানে প্রায়ই নেতৃত্বকে উচ্চকণ্ঠতা, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস বা প্রাধান্য বিস্তারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়; সেখানে যাঁরা নীরব বা সংযমী স্বভাবের, তাঁরা প্রায়ই নিজেদের নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন। তবে সত্যিটা হলো—নেতৃত্ব কখনোই কেবল যাঁরা সবচেয়ে বেশি কথা বলেন বা যাঁরা সব সময় দৃষ্টি কাড়েন, তাঁদের জন্য নয়। কার্যকর নেতৃত্ব আসে প্রভাব, অন্তর্দৃষ্টি এবং উদ্দেশ্যমূলক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে।
এই লেখায় আলোচনা করব কীভাবে নীরব, মনোযোগী বা সংযমী স্বভাবের হয়েও আপনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন। কীভাবে আপনার উপস্থিতি, চিন্তাশক্তি এবং লক্ষ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আপনি দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে পারবেন।
নেতৃত্বকে নতুনভাবে ভাবা
ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছে যে নেতৃত্ব মানে হলো উচ্চকণ্ঠ, বহির্মুখী, যেকোনো মূল্যে আত্মবিশ্বাসী হওয়া। কিন্তু আসল সত্য হলো—নেতৃত্ব শব্দের উচ্চতায় নয়, অনুরণনে। আপনার উপস্থিতিতে। আপনার স্বচ্ছতায়।
গভীরভাবে শোনার ক্ষমতা, শক্তিশালী প্রশ্ন করার দক্ষতা, অন্যদের জন্য জায়গা করে দেওয়া এবং প্রভাব বিস্তার করে কথা বলার ক্ষমতা—এসবই নেতৃত্বের শক্তি। আর এখন এসব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।
নীরবে প্রভাব বিস্তার করার মাধ্যমে নেতৃত্ব
যেসব নেতা কম কথা বলেন তাঁরা তাড়াহুড়া নয়, উদ্দেশ্য নিয়ে নেতৃত্ব দেন। শব্দ নয়, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। অভিনয় নয়, বরং সামঞ্জস্য দিয়ে প্রভাব রাখেন।
এই ধরনের নেতৃত্ব যেমন হয় :
• কথা বলার আগে সময় নিয়ে চিন্তা করা, এবং এমন কথা বলা, যা পুরো আলোচনাকে বদলে দেয়।
• মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা এবং শান্ত, মনোযোগী দিকনির্দেশনা দেওয়া।
• আধিপত্য বা তাড়াহুড়ার বদলে সহমর্মিতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া।
• কম কথা বলা, কিন্তু যখন বলেন—তা গুরুত্বপূর্ণ হয়।
আপনাকে নেতা হতে নিজেকে বদলাতে হবে না। আপনাকে শুধু নিজের শক্তিকে গ্রহণ করতে হবে।
নেতৃত্বের এই নীরব প্রভাব গ্রহণের ৩টি উপায়
• নিজের উপস্থিতিকে বিশ্বাস রাখুন: বেশি কথা বললেই বেশি প্রভাব ফেলে না। আপনার স্থির উপস্থিতিই নেতৃত্ব। বিশ্বাস রাখুন, মানুষ তা অনুভব করে।
• উদ্দেশ্য নিয়ে প্রস্তুতি নিন: আপনি যদি ভেবে নিতে সময় নেন, সেটাকে সম্মান দিন। আপনার চিন্তা আগে থেকে লিখে রাখুন, প্রস্তুত হলে বলুন। প্রাসঙ্গিক হতে তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই।
• দৃশ্যমানতাকে নিজের মতো সংজ্ঞায়িত করুন: দৃশ্যমান মানেই সব সময় সামনে থাকা নয়। বরং এর মানে হলো নিজের মতো করে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে দৃশ্যমান হওয়া। হতে পারে একান্ত আলাপে নেতৃত্ব দেওয়া, লেখা, মেন্টরিং করা কিংবা নীরবে অথচ গভীর প্রভাব রাখা।
মনে রাখবেন
• আপনাকে সম্মান পেতে বহির্মুখী হতে হবে না।
• প্রভাব বা নেতৃত্বের গুণ দেখাতে অতিরিক্ত চেষ্টা করতে হবে না।
• উচ্চ পদ পেতে স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে না।
• আপনার নীরবতা একটি উপহার। এটি একটি সুবিধা। এটি সেই বৈচিত্র্যময়, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বিস্তৃত নেতৃত্বের ভবিষ্যতের অংশ, যা আমরা সবাই গড়ে তুলতে চাই।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে