ইন্ট্রোভার্টদের জন্য নেটওয়ার্কিংয়ের সহজ কৌশল
আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নেটওয়ার্কিং আর বিলাসিতা নয়; বরং অপরিহার্য দক্ষতা। চাকরি, ইন্টার্নশিপ কিংবা পেশাগত সুযোগ—সব জায়গায় এখন সম্পর্ক ও যোগাযোগ বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু সবার জন্য এই পথ সমান সহজ নয়। বিশেষ করে ইন্ট্রোভার্টদের জন্য নেটওয়ার্কিং অনেক সময় ক্লান্তিকর ও মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। ভিড়, অচেনা মুখ আর অবিরাম ছোটখাটো আলাপচারিতা তাঁদের এনার্জি শুষে নেয়। তবু বাস্তবতা হলো, সুযোগের দরজা খুলতে হলে সম্পর্ক তৈরি করতেই হবে। তাই প্রয়োজন এমন কিছু কৌশল, যা ইন্ট্রোভার্টদের অন্যদের সঙ্গে অর্থবহ সংযোগ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
দৃষ্টিভঙ্গি বদলান
যখন আপনি কোনো অনুষ্ঠান বা ইভেন্টে যান, তখন কি মনে হয়—‘আমাকে আজ নতুন কোনো বন্ধু কিংবা জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতেই হবে?’ নিশ্চয়ই না। তাহলে কেন ভাববেন—‘আজ এমন কারও সঙ্গে পরিচয় হতেই হবে, যে আমাকে চাকরি, ইন্টার্নশিপ বা ক্লায়েন্ট এনে দেবে?’
এই মানসিকতা নেটওয়ার্কিংকে একধরনের লেনদেনের মতো করে ফেলে। অথচ নেটওয়ার্কিং মানে হলো বীজ বপন করা, ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ে তোলা, আর মানুষকে আপনাকে জানতে, পছন্দ করতে ও বিশ্বাস করতে দেওয়া। ব্যাপারটা কেবল এই নয় যে তাঁরা আপনার জন্য কী করতে পারেন; বরং বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনার সঙ্গে তাঁদের কী মিল আছে বা আপনি তাঁদের কীভাবে সাহায্য করতে পারেন।
নেটওয়ার্কিং শুরু হোক ঘর থেকেই
কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে নিমন্ত্রণপত্র বা অতিথি তালিকা একবার দেখে নিন। চেষ্টা করুন এমন কাউকে খুঁজে বের করতে, যাঁকে আপনি আগে থেকেই চেনেন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ফোনকল বা মেসেজের মাধ্যমে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘আপনি কি অনুষ্ঠানে থাকবেন? তাহলে দেখা হবে, আড্ডা দিতে ভালো লাগবে।’
সামাজিক বা করপোরেট ইভেন্টে উদ্বেগ ও ক্লান্তি কমানোর কৌশল
অনেক সময় সামাজিক বা করপোরেট ইভেন্টে অংশ নেওয়া মানেই দুশ্চিন্তা আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ মনে হয়। তবে কিছু ছোট কৌশল মানলে অভিজ্ঞতাটা অনেক সহজ ও ইতিবাচক হতে পারে।
১. আগে পৌঁছান: মনে হতে পারে, দেরি করে গেলে ভালো হয়, কিন্তু আসলে আগে পৌঁছানোই উত্তম। শুরুতে ভিড় কম থাকে, পরিবেশ শান্ত থাকে, আর আয়োজকের সঙ্গে একান্তে কথা বলার সুযোগও পাওয়া যায়।
২. একা যাবেন না: ভিড় থাকা কক্ষে একা প্রবেশ করা বেশির ভাগ মানুষের কাছেই অস্বস্তিকর। তাই সম্ভব হলে কোনো বন্ধু বা সহকর্মীর সঙ্গে যান। পরিচিত একজন মানুষ থাকলে নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়ে, আর তাঁরা আপনাকে অন্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন।
৩. সময়সীমা ঠিক করুন: পুরো অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। ঠিক করে নিন, কতক্ষণ থাকতে চান বা কার সঙ্গে কথা বলবেন। তা পূর্ণ হলে বেরিয়ে আসুন। শেষ পর্যন্ত থাকা নিয়ে বাড়তি কোনো সুবিধা নেই। অনেক সময় শুধু উপস্থিত থাকাটাই যথেষ্ট।
৪. কথোপকথনে কী বলবেন, তা প্রস্তুত রাখুন: যাঁর সঙ্গে পরিচিত হতে চাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলার শুরুটা করতে পারেন এভাবে, ‘আপনার উপস্থাপনাটা দারুণ ছিল’, বা ‘আপনাকে আজ সুন্দর দেখাচ্ছে’ কিংবা ‘এই বিষয়ে আপনার চিন্তাভাবনা দারুণ’।
একইভাবে সুন্দরভাবে আলাপ শেষ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ‘আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে ভালো লাগছে’ বা ‘আমাকে একটা জরুরি কল করতে হবে’ কিংবা ‘একটা জরুরি কাজ আছে, আমাকে একটু যেতে হবে’।
যখন নেটওয়ার্কিং আপনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তখন তা ক্লান্তিকর ছোটখাটো আলাপ থেকে সরে গিয়ে হয়ে ওঠে অর্থবহ সংযোগ। তাই এটিকে লেনদেন হিসেবে না দেখে আগাম প্রস্তুতি নিন, সময়সীমা ঠিক করুন, আর আলাপ শুরু ও শেষ করার সহজ কিছু উপায় প্রস্তুত রাখুন। দেখবেন, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া আপনাকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে